প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে কে টু চূড়ায় ওয়াসফিয়া

wasfia-nazreen-BD-eyenews-2207222244

৮ হাজার ৬১১ মিটার উঁচু কে টু বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ, অনেক দুর্গম।

প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ পাকিস্তানের কে টু জয় করেছেন ওয়াসফিয়া নাজরীন।

যে দলের সঙ্গে এভারেস্ট বিজয়ী পবর্তারোহী ওয়াসফিয়া ৮ হাজার ৬১১ মিটার উঁচু কে টু জয় করেছেন, সেটির প্রতিষ্ঠান এলিট এক্সপেড শুক্রবার ইনস্টাগ্রাম পোস্টে এ সুখবর দেয়।

পোস্টে বলা হয়, “শতভাগ সাফল্যের হার! অসাধারণ এই মওসুম। কে টু অভিযানে আমাদের অবিশ্বাস্য দলটি তাদের লক্ষ্য অর্জন করেছে।”

ওয়াসফিয়া তার ফেইসবুক পেইজে গত ১৭ জুলাই রাতে বেইজ ক্যাম্প থেকে কে টু চূড়ার উদ্দেশ্যে যাত্রার করার কথা জানিয়ে একটি ছবি পোস্ট করেন।

এক সপ্তাহের মধ্যে ‘সুখবর আসার’ কথা জানিয়ে ওই পোস্টে ৩৯ বছর বয়সী এ পবর্তারোহী সেদিন তার সঙ্গে থাকা অন্য পবর্তারোহীদের নামও জানান। নিমসদাই, মিংমা তেনজি শেরপা ও মিংমা ডেভিড শেরপার নেতৃত্বে কে টু জয়ের জন্য যাত্রা করার কথা জানান তিনি।

কারাকোরাম পবর্তমালার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কে টু স্থানীয়ভাবে চোগোরি নামে পরিচিত। এর উচ্চতা ৮ হাজার ৬১১ মিটার।

’হিংস্র পর্বত’ নামে পরিচিত এ পর্বতশৃঙ্গ অনেক পর্বতারোহীর বিবেচনায় এভারেস্টের চেয়েও দুর্গম। কে টু এর পাশাপাশি ব্রড পিকেও উঠেছেন ওয়াসফিয়াররা; যেটি স্থানীয়ভাবে পরিচিত ফাইচান কাংরি, যেটির উচ্চতা ৮ হাজার ৬৮ মিটার।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গের পথে ওয়াসফিয়া

বাংলাদেশের দ্বিতীয় নারী হিসেবে এভারেস্ট জয়ী ওয়াসফিয়া গত ১৪ জুন এক ফেইসবুক লাইভে নিজের কারাকোরাম পর্বত জয়ের পরিকল্পনার বিস্তারিত তুলে ধরেন।

সেদিন তিনি বলেন, কারাকোরাম দুই শৃঙ্গ পাড়ির এই অভিযান দুই থেকে আড়াই মাসের। কে টু বেইজ ক্যাম্প থেকেই দুতো ৮ হাজার মিটারের উচ্চতার পর্বতারোহণ করবেন তারা। প্রথমে ব্রড পিকে যাবেন, তারপরে কে টু তে।

দেশবাসীর দোয়া প্রত্যাশা করে ওয়াসফিয়া বলেন, “দুইটা ৮ হাজার মিটারের চূড়ায় পরপর উঠা সহজ কথা নয়। আমাকে দোয়ায় রাখবেন।”

এভারেস্টজয়ী ওয়াসফিয়া ফিরছেন শনিবার

পর্বতারোহীদের জন্য দুর্গম হওয়ার কারণে কে টু তে যাওয়া মানুষের সংখ্যা খুব বেশি না হওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “স্পেসে যত মানুষ গেছে, তার চেয়ে কম মানুষ গেছে কে২ তে। মানে খুব কম মানুষই কে টু তে যাওয়ার অ্যাটেম্প করেছে।

“শুধু প্রথম বাংলাদেশি নারী যাচ্ছে সেখানে। এই পর্বতে নারীরা সেভাবে সাহস করে না বলা হয়। আমাদের দলে আছে ৬ জন নারী।”

সেখানকার পরিবেশ দুর্গম হওয়ার কথা তুলে ধরে ওয়াসফিয়া বলেন, “কারাকোরামের ভিন্ন ব্যাপার হচ্ছে ক্রেজি ওয়েদার। এভারেস্ট থেকেও এটা ভিন্নতর। শুষ্ক আর রুক্ষ আবহাওয়া।”

২০১২ সালের ২৬ মে ওয়াসফিয়া দ্বিতীয় বাংলাদেশি নারী হিসেবে এভারেস্ট চূড়ায় উঠেন। তিনি সেভেন-সামিটিয়ার বা পৃথিবীর সাত মহাদেশের সব বড় পর্বতজয়ী একজন।

তার আগে ২০১২ সালে ১৯ মে নিশাত মজুমদার বাংলাদেশের প্রথম নারী হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্টে জয় করেন।

ইউরোপের সর্বোচ্চ চূড়ায় ওয়াসফিয়া

ইনস্টাগ্রাম পোস্টে ওয়াসফিয়াসহ কে টু জয়ীদের নামের তালিকা যুক্ত করে সবাইকে অভিনন্দন জানিয়েছে এলিট এক্সপেড লিখেছে, “প্রতিভাবান এই দলটি নতুন সম্ভাবনাকে হাতের মুঠোয় নিয়েছে। এলিট এক্সপেড তোমাদের জন্য এর চেয়ে গৌরবান্বিত হতে পারে না!

”আমাদের দল আপনাদের প্রচেষ্ঠা, কঠোর পরিশ্রম ও পরিবারের কাছ থেকে দীর্ঘ সময় দূরে থাকার এই ধৈর্য্যকে সম্মান জানাচ্ছে।”

দুর্গম এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন নেপালি পর্বতারোহী মিংমা তেনজি শেরপা।

ভারতীয় পত্রিকা দি ওয়াল এক খবরে জানিয়েছে, প্রথম বাংলাদেশি নয়, দুই বাংলা মিলিয়ে কে টু জয়ী প্রথম বাঙালিও ওয়াসফিয়া নাজরীন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, “এর আগে এই শৃঙ্গে কোনও বাঙালি পা রাখেননি। বাংলাদেশের নাগরিক হওয়ার কারণেই এই সুযোগ পেলেন ওয়াসফিয়া। কেটু শৃঙ্গ আরোহণে ভারতীয়দের উপর রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। তবু জয়ের পালক এল বাঙালির ঘরেই।”

Pin It