প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৭ দশমিক ২ শতাংশ: বিশ্বব্যাংক

world_bank-5ca08d4fd0661-5d9f5a4384fc3

চলতি অর্থবছরে (২০১৯-২০) বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২ শতাংশ অনুমান করছে বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর হালনাগাদ মূল্যায়নে এই প্রক্ষেপন করা হয়। বিনিয়োগ,আমদানি-রফতানি,কৃষি ও সেবাসহ অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকের বিশ্নেষণ এবং বৈশ্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়নের ভিত্তিতে এই অনুমান করা হয়েছে। এবারের প্রতিবেদনে অর্থনীতির মূল্যায়নের পাশাপাশি উচ্চ শিক্ষা এবং চাকরি দক্ষতার ওপর বিশেষ আলোকপাত করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয় বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট নামে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের এই অনুমান সরকারের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১ শতাংশ কম। সরকার ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আশা করছেন। সম্প্রতি এডিবির এক পূর্বভাসে বলা হয়, বাংলাদেশের এ বছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ হতে পারে।

ঢাকায় বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি মিয়ং টেম্বন বলেন, জিডিপি অনুমান নিয়ে সংখ্যায় কিছুটা এদিক-সেদিক হতেই পারে। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশ উন্নয়নের সঠিক পথেই আছে। খুব ভালো করছে বাংলাদেশ। তবে আর্থিক খাতের দুর্বলতাসহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে ঝুঁকিও রয়েছে বাংলাদেশের।

এদিকে চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ম্ফীতি বাড়বে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। সংস্থার মতে, বিভিন্ন কারণে মূল্যস্ম্ফীতি বেড়ে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ হতে পারে। সরকারের লক্ষ্য, মূল্যস্ম্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে রাখা। কেন মূল্যস্ম্ফীতি বাড়তে পারেসেই ব্যাখ্যাও দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, সম্প্রতি বন্যায় ফসল হানি হয়েছে। এতে উৎপাদন ও চাহিদার মধ্যে বড় ব্যবধান তৈরি হবে। এছাড়া গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির কারণেও মূল্যস্ম্ফীতি বাড়বে।

প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ বার্নাড হ্যাভেন। ব্যাংক খাত সম্পর্কে তিনি বলেন, এ খাত এখনও নাজুক। খেলাপি ঋণ বাড়ছেই। বিশেষ করে রাষ্ট্রয়াত্ত্ব বাণিজ্যিক ব্যাংকে দুর্বলতা বেশি।

বাংলাদেশের অর্থনীতির ঝুঁকি প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাণিজ্য যুদ্ধ এবং নীতির অনিশ্চয়তা বিনিয়োগে প্রভাব ফেলছে। বাণিজ্য যুদ্ধ থেকে বাংলাদেশ সাময়িক লাভবান হলেও সার্বিক বৈশ্বিক পরিস্থিতি খারাপ হলে বাংলাদেশেও ওই প্রভাব থেকে মুক্ত থাকবেনা। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ঝুঁকির চেয়ে অভ্যন্তরীণ ঝুঁকিই বড়। এক্ষেত্রে সব চেয়ে বড় ঝুঁকিটি হচ্ছে, মুদ্রার বিনিময় হার। শেয়ার বাজারে অস্থিরতা চলছে। সুদের হার নির্ধারণ, ঋণ শ্রেনীকরণ ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার সঠিক পথে নেই। এসব প্রতিকূলতা মোকাবেলায় নীতিসংস্কারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার জোরদার করার সুপারিশ করা হয়েছে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে।

বিশ্বব্যাংকের পরামর্শক এবং সংস্থার সাবেক লিড ইকোনোমিস্ট ড.জাহিদ হোসেন বলেন, বহি:বাণিজ্যে এ মুহুর্তে বাংলাদেশের সামনে বড় সমস্যা হচ্ছে, বিশ্ববাজারে রফতানি পণ্যের দর কমছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে। চীনা পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত শুল্ক্কারোপের পর পণ্যের দর আরও কমেছে। ক্রেতারাও সস্তায় পণ্য খুঁজছেন। অথচ ডলার এবং স্থানীয় মুদ্রার বিনিময় হারের বিবেচনায় প্রতিযোগিদের তুলনায় বাংলাদেশের সক্ষমতা কমেছে। আফ্রিকার কয়েকটি দেশ সস্তায় পোশাক রফতানির জন্য প্রস্তুত। অর্থাৎ মূল্যের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ। এই প্রতিকুলতা চলতে থাকলে বাংলাদেশের রফতানি খাতে ঝুঁকি আরও বাড়বে।

প্রতিবেদনে উচ্চ শিক্ষা এবং চাকরি বাজারে দক্ষতা প্রসঙ্গে বলা হয়, বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য উৎপাদশীলতা বাড়াতে হবে। কম মজুরি এবং কম উৎপাদনের মডেল থেকে উচ্চ হারে উৎপাদন এবং বেশি মজুরির মডেলে যেতে হবে। এজন্য বর্তমান এবং আগামীর কর্মোপযোগী শ্রমশক্তি তৈরি করতে হবে। তবে স্কুল পর্যায়ে শিক্ষা ব্যবস্থায় গলদ রয়ে যাচ্ছে। প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং শেষপর্যন্ত উচ্চ শিক্ষা পর্যায়ে এ সমস্যা রয়েছে। এতে কর্মোপযোগি উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে অপ্রস্তুত শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ তৈরি হয়। একারণে উপযোগী মানব সম্পদ কম তৈরি হচ্ছে। উদাহরণ দিয়ে ড. জাহিদ বলেন, শিক্ষা আছে, সনদও আছে তবে কাজের উপযোগী শিক্ষিত জনশক্তি পাওয়া যাচ্ছেনা। শিক্ষায় গুনগত ঘাটতি আছে। তিনি বলেন, প্রাথমিক এবং মাধ্যমিকে মৌলিক ঘাটতি থাকলে পরবর্তীতে কর্ম উপযোগি শিক্ষা গ্রহণ করার সক্ষমতা থাকেনা। প্রাথমিক পর্যায়ে মানসম্পন্ন শিক্ষায় মনোযোগ দেওয়ার সুপারিশ করেন তিনি।

Pin It