ফণীতে বিপদসংকেত

Untitled-9-5ccb52da16366

ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় ফণী ক্রমাগত শক্তি সঞ্চয় করছে, গর্জন করে ধেয়ে আসছে উপকূলের দিকে। ভারতের ওডিশা উপকূল হয়ে এখন পশ্চিমবঙ্গের দিকে তার গতি। আজ শুক্রবার সকালেই হয়তো ভারতের স্থলভাগে ফণীর তাণ্ডব শুরু হবে। পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশে আঘাত হানবে এ ঝড়।

১৭০ থেকে ২০০ কিলোমিটার গতির শক্তিসম্পন্ন ফণী ওডিশায় আঘাত হানার পর দুর্বল হয়ে পড়বে। তবে ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের মধ্যে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় দেড়শ’ কিলোমিটার থাকলেও এর তাণ্ডবে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি হবে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, আজ সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ পুরো বাংলাদেশ ঘূর্ণিঝড়ের আওতায় থাকবে। ঘূর্ণিঝড়টি শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে সারারাত বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাবে। সে সময় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১০০-১২০ কিলোমিটার থাকতে পারে।

ফণীর কারণে বাংলাদেশের মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের জন্য জারি করা হয়েছে ৬ নম্বর বিপদসংকেত। কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

ফণী উপকূল অতিক্রম করার সময় বাংলাদেশের উপকূলীয় নিচু এলাকাগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। গতকাল বৃহস্পতিবার আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরাঞ্চলে এই জলোচ্ছ্বাস দেখা যেতে পারে।

সকাল ১০টা থেকে বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলাগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হবে। গতকাল সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় আজ সকালে শুরু করে সন্ধ্যার আগেই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্রে আনার কার্যক্রম শেষ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, ঘূর্ণিঝড়টি গতকাল বিকেল ৩টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৯২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৮১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।

ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় এবার আগেভাগেই জানমাল রক্ষায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এর আগে ২০১৭ সালে ‘মোরা’ এবং ২০১৬ সালে ‘রোয়ানু’র প্রবল আঘাতের আগেও সরকারি তরফে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ায় জানমালের ক্ষয়ক্ষতি অনেক কম হয়। বিশেষ করে ২০০৭ সালে সিডর ও ২০০৯ সালে আইলার তাণ্ডবে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির পর সরকারি তরফে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় অনেক বেশি সতর্ক অবস্থান দেখা যাচ্ছে। বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের অস্তিত্ব দৃশ্যমান হওয়ার পর থেকেই সরকারি কর্মযজ্ঞও শুরু হয়ে যায়।

যুক্তরাজ্য সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সেক্রেটারি ইহসানুল করিম জানান, ঘূর্ণিঝড়ে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে তিনি সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ লক্ষ্যে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি মনিটরিং সেল খোলা হয়েছে।

ফণীর প্রভাবে হাওর ও অন্যান্য এলাকায় পাকা বোরো ধানের ক্ষতি হতে পারে আশঙ্কায় কৃষকদের দ্রুত ধান কাটার নির্দেশ দিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

আবহাওয়াবিদরা জানান, অন্যান্য ঘূর্ণিঝড়ের চেয়ে ফণী বিশেষ প্রকৃতির। অন্যান্য ঘূর্ণিঝড়ের সময় উপকূলীয় এলাকাসহ আশপাশের অঞ্চলে প্রবল বৃষ্টি দেখা যায়। তবে এবার সমুদ্রপৃষ্ঠে ব্যাপক বৃষ্টি হলেও উপকূলীয় এবং আশপাশের বেশিরভাগ অঞ্চলে তীব্র তাপদাহে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ফণী দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরের অনেক গভীরে সৃষ্টি হয়েছে গতিপথের আশপাশের এলাকার বাতাস থেকে মেঘ শুষে নিয়ে ক্রমাগত শক্তি সঞ্চয় করে। ফলে আশপাশের এলাকার বাতাস আর্দ্রতা হারায় এবং তাপমাত্রা দ্রুত বেড়ে যায়।

গত এক দশকের মধ্যে ফণীর মতো বিশেষ ধরনের ঘূর্ণিঝড় আর দেখা যায়নি। এই বিশেষত্বের কারণেই এটি গভীর সমুদ্র থেকে যত বেশি এগিয়েছে, ততই শক্তি অর্জন করেছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ২০০৯ সালের পর এত শক্তি নিয়ে আর কোনো ঘূর্ণিঝড় উপকূলের দিকে এগোয়নি।

ফণীর গতিপথও এবার বেশ বিভ্রান্তিতে ফেলে দেয় আবহাওয়াবিদদের। দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরের গভীরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের স্বাভাবিক নিয়মে অল্প্রব্দ-ওডিশা উপকূল হয়েই বাংলাদেশের দিকে আসার কথা ছিল। তবে এটি কয়েকবার গতিপথ পরিবর্তন করে এবং ওডিশা উপকূলের বেশ দূর দিয়ে বাংলাদেশের উপকূলের দিকে ধেয়ে আসার লক্ষণ দেখা যায়। তবে বারবার গতিপথ পরিবর্তন করে এটি শেষ পর্যন্ত ওডিশার পুরী এবং অল্প্রব্দপ্রদেশের বিশাখাপত্তমের দিকেই এগিয়ে যায়। গতিপথ সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়ালেও ফণী নিজের শক্তি সম্পর্কে শুরু থেকেই স্পষ্ট জানান দিয়েছে। ফলে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়ার সময় পেয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত সরকার।

গতকাল রাতে এ রিপোর্ট লেখার সময়ে ফণীর ঘতিবেগ আরও বাড়ছিল এবং উপকূলের দিকে প্রবল গর্জনে ধেয়ে আসছিল। ফণীর কারণে ভারতের ওডিশা সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে। এ রাজ্যের ১০ হাজার গ্রাম ও ৫২টি শহরে আঘাত হানতে পারে ফণী। ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কায় এ রাজ্যের উপকূলের ১৫ জেলা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ মানুষ। ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গতকাল থেকে ওডিশার ভুবেনশ্বর বিমানবন্দরের সব ফ্লাইট স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া আজ শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টা থেকে আগামীকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কলকাতা বিমানবন্দরের সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফণীর গতিবিধি সম্পর্কে পূর্বাভাস দিচ্ছে আমেরিকার জাতীয় গ্লোবাল ফোরকাস্ট সিস্টেম (জিএফএস) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর মিডিয়াম-রেঞ্জ ওয়েদার ফোরকাস্ট (ইসিএমডব্লিউএফ)। জিএফএসের পূর্বাভাস হচ্ছে, ভারতের উপকূল ঘেঁষে ফণী পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করে প্রবল শক্তি নিয়ে বাংলাদেশের খুলনা অঞ্চলের ওপর দিয়ে ছুটবে। আর ইসিএমডব্লিউএফ বলছে, ফণী ভয়াবহ তান্ডব চালাবে পশ্চিমবঙ্গ, অল্প্রব্দপ্রদেশ ও ওডিশায়। বাংলাদেশের খুলনা, বরিশাল এবং কক্সবাজারের ওপর এর শক্তিশালী প্রভাব থাকবে। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ফণীর নিশানায় সুন্দরবনসহ বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল।

ব্যুরো ও জেলা প্রতিনিধিরা জানান, ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় ফণী আঘাত হানার আশঙ্কায় সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশের উপকূলীয় ১৯ জেলায় দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করার পাশাপাশি সাগরতীরের লোকজনকে সরিয়ে নিতে মাইকিং করা হয়। মজুদ করা হচ্ছে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি। রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিও সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) ৫৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত রাখার পাশাপাশি উপকূলীয় সেনা ক্যাম্পগুলোকে সতর্ক রাখা হয়েছে। জেলায় জেলায় জরুরি ত্রাণকাজের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে চাল ও নগদ অর্থ বরাদ্দ। ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকিতে থাকা এলাকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাপ্তাহিক ছুটি এবং অন্যান্য ছুটি বাতিল করে তাদের কর্মস্থলে উপস্থিত থাকতে নির্দেশ দিয়েছে সরকার।

ঘূর্ণিঝড়ের কারণে আগামীকাল শনিবারের এইচএসসি পরীক্ষা পেছানো হয়েছে। আগামী ১৪ মে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য ওঠানো-নামানো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। নৌ চলাচল বন্ধ :প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাত হানার আশঙ্কায় সারাদেশে সব ধরনের নৌ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। সেইসঙ্গে দুর্যোগ মোকাবেলায় বিআইডব্লিউটিএর সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করা হয়।

উপকূলীয় ১৯ জেলায় ছুটি বাতিল :উপকূলীয় ১৯ জেলার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব ধরনের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর অফিস আদেশে জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে উপকূলীয় জেলাগুলোতে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সব শাখা ১ মে থেকে প্রতিদিন খোলা থাকবে। একই সঙ্গে উপকূলীয় জেলাগুলোতে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম সমন্বয় এবং জরুরি কাজের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ১ মে থেকে সব ছুটি বাতিলের কথাও জানানো হয় ওই অফিস আদেশে। ৩ ও ৪ মে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং এর অধীন সংশ্নিষ্ট দপ্তর খোলা থাকবে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার এ-সংক্রান্ত দুটি অফিস আদেশ জারি করেছে বলেও সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

আরও বলা হয় ফণীর আশঙ্কা শেষ না হওয়া পর্যন্ত সব নৌযান বন্দরে অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। বন্দরে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করে নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলায় জরুরি তথ্য ও নির্দেশনা আদান-প্রদানের জন্য সংশ্নিষ্ট দপ্তর এবং সংস্থায় কন্ট্রোল রুম খোলা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া উপকূলীয় ১৯ জেলায় খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ (কন্ট্রোল রুম), ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে ৫৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রেড ক্রিসেন্টেও কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। উপকূলীয় সেনাবাহিনীর স্টেশনগুলোতেও ঢাকা থেকে বার্তা পাঠানো হয়েছে। তারা প্রস্তুত রয়েছে। উপকূলীয় জেলাগুলোর ডিসিদের কাছ থেকে ২০০ টন চাল পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক জেলা প্রশাসককে ৫ লাখ করে টাকাও দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ৪১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। স্যালাইন ও সুপেয় পানির জন্য পানির ট্রাক পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে পারে এমন আশঙ্কায় থাকা জেলাগুলোর সব উপজেলার চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সব ধরনের ছুটি এবং প্রশিক্ষণ বাতিল করা হয়েছে। জেলা পর্যায়ে তিনটি এবং উপজেলা পর্যায়ে পাঁচটি এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে একটি করে জরুরি ‘মেডিকেল টিম’ গঠন করা হয়েছে।

জেলায় জেলায় প্রস্তুতি :ঘূর্ণিঝড় ফণী মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিয়েছে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে সংশ্নিষ্ট সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ছুটি। খোলা হয়েছে বিশেষ কন্ট্রোল রুম। উপকূলীয় উপজেলাগুলোতে মাইকিং করা হচ্ছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে শতাধিক আশ্রয়কেন্দ্র। ঘূর্ণিঝড় ফণী নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে উপকূলীয় জেলা খুলনার প্রায় ২৪ লাখ মানুষ। ফণী মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে খুলনা জেলা প্রশাসন ও সরকারি অন্যান্য দপ্তর। খুলে দেওয়া হয়েছে সরকারি-বেসরকারি ৩২৫টি আশ্রয়কেন্দ্র। তা সত্ত্বেও আতঙ্ক বিরাজ করছে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে। বরগুনা, পটুয়াখালী ও পিরোজপুর উপকূলে থমথমে আবহাওয়া এবং প্রশাসনের মাইকিংয়ের কারণে আতঙ্কিত উপকূলের বাসিন্দারাও সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন।

ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং উপজেলাগুলোতে নিয়ন্ত্রণ কক্ষের পাশাপাশি উপজেলা ও উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। রাজশাহীর সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করে তা প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দিয়েছে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি।

‘বাংলাদেশে আসবেই’ :ঘূর্ণিঝড় ফণী খুলনা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক শামছুদ্দিন আহমদ। গতকাল সন্ধ্যায় তিনি জানান, ভারতীয় উপকূল অতিক্রম করার পরও বাংলাদেশে আসার আশঙ্কা আছে ফণীর। এছাড়া উপকূল অতিক্রম না করলেও বাংলাদেশে আসবে। যে কোনোভাবেই হোক ফণী বাংলাদেশে আসবেই। মূলত খুলনা অঞ্চল দিয়েই এ ঝড় শুরু হবে।

ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ :দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট এবারের ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেওয়া হয়েছে ফণী। যার অর্থ সাপ বা ফণা তুলতে পারে এমন ভয়ঙ্কর সরীসৃপ জাতীয় প্রাণী। বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগর উপকূলের আটটি দেশের প্রস্তাব অনুসারে একটি তালিকা থেকে একটির পর একটি ঘূর্ণিঝড়ের নাম করা হয়। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাগরতীরের আট দেশের আবহাওয়া দপ্তর ও বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্যানেলে এ নাম প্রস্তাব করে বাংলাদেশ। এর আগে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা নামগুলো ছিল হেলেন, চাপালা ও অক্ষি।

ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণে মেয়েদের নামের প্রাধান্য দেখা যায়। এরপরের ঘূর্ণিঝড়ের নাম হবে ভারতের প্রস্তাব অনুযায়ী ‘বায়ু’। এর পরবর্তী নামের তালিকায় রয়েছে হিক্কা, কায়ার, মাহা, বুলবুল, পাউয়ান এবং আম্ম্ফান। এই ছয়টি নাম শেষ হয়ে গেলে আবারও প্যানেলভুক্ত দেশগুলো নতুন নাম ঠিক করবে।

কত নম্বর বিপদসংকেতে কী ঝুঁকি :ব্রিটিশ শাসনামলে তৈরি বিপদসংকেত ব্যবস্থা ঝড়ের গতি ও বিপদের সম্ভাব্য মাত্রা বিবেচনায় ১ থেকে ১১ নম্বর সংকেত দিয়ে সতর্কতার মাত্রা বোঝানো হয়। ব্রিটিশ আমলে এ সংকেত সমুদ্রে চলাচলকারী জাহাজে ব্যবহূত হতো।

সমুদ্রবন্দরে ঝড়ের সতর্কবার্তা হিসেবে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্কসংকেত, ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত, ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত, ৪ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেতের পর ৫, ৬ ও ৭ নম্বর বিপদসংকেত; ৮, ৯ ও ১০ নম্বর মহাবিপদসংকেত হিসেবে বলা হয়। শেষ ১১ নম্বর দিয়ে বোঝানো হয়- যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট অচল :গতকাল ঘূর্ণিঝড়ের সর্বশেষ অবস্থান জানতে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে অতিরিক্ত ক্লিকের কারণে সাময়িকভাবে অচল হয়ে পড়ে ওয়েবসাইট। দুপুর ২টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, বিপদসংকেতের তথ্য জানতে একসঙ্গে অনেক বেশি হিট হওয়ায় ওয়েবসাইট সাময়িকভাবে অচল হয়ে যায়। ।

Pin It