জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার সকাল সোয়া ১০টায় প্রথমে রাষ্ট্রপতি ও পরে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
জাতির পিতার স্মরণে সেখানে কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন তারা। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয় এবং সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল সশস্ত্র সালাম জানায়। এরপর বঙ্গবন্ধুর আত্মার শান্তি কামনায় দোয়া ও মোনাজাত হয়। রাষ্ট্রপতি সেখানে রাখা পরিদর্শন বইতে মন্তব্য লিখে স্বাক্ষর করেন।
পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে ছোট বোন শেখ রেহানা ও দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শেখ হাসিনা। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ হোসেন, শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক উপস্থিত ছিলেন।
সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে শেখ রেহানা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে জাতির পিতার সমাধি সৌধ কমপ্লেক্সে প্রবেশ করেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে ৯টা ৫০ মিনিটে তিনি ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে এসে টুঙ্গিপাড়ায় হেলিপ্যাডে নামেন। এ সময় তাকে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা স্বাগত জানান। সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে প্রবেশ করলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে স্বাগত জানান। এ সময় দলীয় নেতা কর্মীরা শ্লোগান দিয়ে তাদের অভিনন্দন জানান।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, ববির স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য আমির হোসেন আমু, মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, এস এম কামাল হোসেন, শেখ হেলাল উদ্দিন, শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল, শেখ সারহান নাসের তন্ময়, যুবলীগের সভাপতি শেখ ফজলে শামস পরশসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
পরে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে টুঙ্গিপাড়ার আকাশে বিমান বাহিনীর বিমান দিয়ে ডিসপ্লে প্রদর্শনী হয়। এ সময় বিমান দিয়ে আকাশে সংখ্যায় ১০০ প্রকাশ করা হয়। রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ডিসপ্লে প্রত্যক্ষ করেন। বেলা ১১টার দিকে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ ঢাকার উদ্দেশ্যে টুঙ্গিপাড়া ত্যাগ করেন।
সকাল সোয়া ১১টায় বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স মসজিদে বঙ্গবন্ধুর জম্মশত বার্ষিকীর মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। মিলাদে বঙ্গবন্ধুসহ ৭৫ এর ১৫ আগস্টের শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া-মোনাজাত করা হয়। এতে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীসহ সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন। প্রধানমন্ত্রীর আড়াইটার দিকে টুঙ্গিপাড়া থেকে ঢাকা রওনা দেয়ার কথা রয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী থেকে এক বছর মুজিববর্ষ ঘোষণা করেছে সরকার। বছরটি সাড়ম্বরে উদযাপনের সব প্রস্তুতি নিলেও নভেল করোনাভাইরাস ঝুঁকির কারণে জনগণের স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে আয়োজন সীমিত করেন প্রধানমন্ত্রী।
দিনটি জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়। এ দিবসে স্কুল-কলেজে শিশুদের অংশগ্রহণে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের কথা থাকলেও সেটাও এবার আর হচ্ছে না। পরিবর্তিত কর্মসূচি অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধুর জন্মক্ষণের সঙ্গে মিল রেখে রাত ৮টায় মুজিববর্ষের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হবে; যা টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আতশবাজির প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে ‘মুক্তির মহানায়ক’ শিরোনামে এ অনুষ্ঠান শুরু হবে।
দিনটি উপলক্ষে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বনানী করাইল বস্তি এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে এতিম ও দুস্থদের মাঝে খাবার ও মিষ্টি বিতরণ করা হবে। সারা দেশে স্থানীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একই কর্মসূচি থাকছে।