‘বর ছাড়াই বরযাত্রা’

Untitled-113-5ccdf47a017fe

ময়মনসিংহ শহরের পাটগুদাম এলাকায় অল্প সংখ্যক বিহারি বাস করে। ভোট দেখতে গিয়ে সেখানেই শোনা গেল কথাটি- ‘বিনে দুলাহ কি বরাত’। যার সরল বাংলা- বর ছাড়াই বরযাত্রা। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনের সঙ্গে অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেল কথাটি। সিটি করপোরেশনের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা যিনি, সেই মেয়র নির্বাচিত হয়ে গেছেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। তার কর্মযাত্রায় কারা সঙ্গী হবেন, তা নির্ধারণে শুধু ভোট হবে কাউন্সিলর পদে। মেয়র পদে ভোট হবে না, বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেছে; তারপরও ময়মনসিংহের নির্বাচনে উৎসব-উচ্ছ্বাসের কমতি নেই। মেয়র পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ইকরামুল হক টিটুর বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী পাওয়া না গেলেও কাউন্সিলর পদে প্রার্থীর ছড়াছড়ি। ৪৪ জন কাউন্সিলর বেছে নিতে আজ রোববার ভোট দেবে ২ লাখ ৯৬ হাজার ৯৩৮ জন ভোটার।

৩৩টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন ২৪২ জন। ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী সংখ্যা ১৩। ১১ সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে প্রার্থী ৭০ জন। বিএনপির কেউ মেয়র পদে প্রার্থী না হলেও, প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন দলটির স্থানীয় নেতারা। তাই নির্দলীয় কাউন্সিলর ভোটে আওয়ামী লীগ-বিএনপির ছায়া। স্থানীয় ইস্যু ‘মহল্লার  ইজ্জত’ এবং বংশমর্যাদা জড়িয়ে কাউন্সিলর ভোট আরও জমজমাট। ১৭ এপ্রিল শুরু হয়ে গত শুক্রবার পর্যন্ত চলেছে একটানা প্রচার। মাইকের শব্দে টেকা ছিল দায়। রোজ সন্ধ্যায় মিছিল মিছিলে পাড়া-মহল্লা ছিল সরগরম।

সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত উপজেলা ও অন্যান্য স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপিসহ অধিকাংশ দলের বর্জনের প্রভাব পড়ে ভোটের বাক্সে। উপজেলায় ভোট পড়ে ৪০ শতাংশের কাছাকাছি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোশেনের উপনির্বাচনে পড়ে আর কম। খোদ রাজধানীতে ভোট; তারপরও ছিল না ভোট নিয়ে আগ্রহ।

এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ময়মনসিংহ। শহরের আকাশ ঢেকে গেছে প্রার্থীদের পোস্টারে। অলি -গলিতে নির্বাচনী ক্যাম্প। কাউন্সিলর প্রার্থীরা দিনরাত এক করে ছুটছেন ভোটারদের দুয়ারে। সরেজমিন দেখা যায়, শহরের মোড়ে, চায়ের দোকানের আড্ডায় আলোচনার জল্পনা- কে হবেন তার এলাকার কাউন্সিলর, কার ‘ফিল্ড’ কতটা ভালো। গত শুক্রবার আকুয়ায় এমনই আড্ডায় নয়াপাড়া এলাকা বাসিন্দা ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার কামাল ইবনে ইউসুফ, তানভীর মাহমুদ, শামসুল আলম নয়ন জানালেন, জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে স্থানীয় নির্বাচনের বিস্তর ফারাক। স্থানীয় নির্বাচনে ভোট হয়, কে কার আত্মীয়, কে কতটা কাজ করেছেন মহল্লার জন্য, তার ওপর। তারা ভোট দেবেন তাকে, যাকে ডাকলে পাশে পাবেন, তার ভিত্তিতে।

তবে ভোটের আগের দিন গতকাল শনিবার ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র প্রভাবে দিনভর অঝোর বৃষ্টিতে কিছুটা হলেও ভোট উৎসব ফিকে হয়েছে। শঙ্কা জাগিয়েছে, আজ আবহাওয়া বৈরী থাকলে ভোটার আসবে তো! ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী, যিনি লিটন মেম্বার নামে পরিচিত বললেন, ‘ভোটারদের যে করেই হোক কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে। এ দায়িত্ব কাউন্সিলর প্রার্থীদেরই পালন করতে হবে।’

উৎসবের মধ্যে ভোট নিয়ে শঙ্কাও রয়েছে। আওয়ামী লীগ ও মেয়র টিটুর সমর্থন যেসব কাউন্সিলর প্রার্থীর পক্ষে, তারা ‘বাড়তি সুবিধা’ পাবেন বলে আশঙ্কা প্রতিদ্বন্দ্বীদের। ১২৭টি কেন্দ্রের সবক’টিতেই ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট হবে। ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে ব্যাপক প্রচার ও অনুশীলন ভোটিং করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ মনে করছেন, মেয়র পদে ভোট না হওয়ায় ভোটার উপস্থিতি কমতে পারে। গতকাল তিনি বলেছেন, ইভিএমে ভোট, তাই নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে। তারপরও শঙ্কা যাচ্ছে না। কয়েক প্রার্থীর দাবি, ইভিএম কারচুপিমুক্ত নয়। ভোটারদের নির্দিষ্ট প্রতীকে ভোট দিতে বাধ্য করার সুযোগ রয়েছে এতে। বিএনপির জেলা কমিটির সদস্য দুলাল উদ্দিন দুলাল প্রার্থী হয়েছেন ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে। সাবেক এই কাউন্সিলর বলেছেন, ভোটের পরিবেশে তিনি সন্তুষ্ট। ‘নির্বাচন সুষ্ঠু হলে’ তার জয় নিশ্চিত। ছাত্রদলের সাবেক নেতা ফরহাদ আলম প্রার্থী হয়েছেন ১১ নম্বর ওয়ার্ডে। তার বক্তব্যও একই রকম।

ময়মনসিংহ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহাব আকন্দ বলেছেন, ৩০ ডিসেম্বর ভোট ডাকাতিতে এ দেশে নির্বাচন ব্যবস্থার মৃত্যু হয়েছে। তাই সিটি নির্বাচনে কারা প্রার্থী হয়েছেন, কেমন ভোট হবে- তা নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই।

১০ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন সাবেক প্যানেল মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি তাজুল আলম। তিনি বলেন, ভোট সুষ্ঠু হবে- এ নিয়ে কোনো সংশয় নেই। মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এহতেশামুল আলম বলেছেন, ভোট নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই।

রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলীমুজ্জামান বলেছেন, সব ধরনের নিরাপত্তা প্রস্তুতি রয়েছে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে তিনজন পুলিশ ও ১০ জন আনসার সদস্য থাকবে। থাকবে বিজিবি ও র‌্যাব। প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও তিনজন অতিরিক্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন।

আজ চার উপজেলায় ভোট :আজ ছয় উপজেলায় নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কায় কক্সবাজারের কুতুবদিয়া এবং আদালতের আদেশে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার ভোট স্থগিত করা হয়েছে। নীলফামারীর জলঢাকা, কুমিল্লার বরুড়া, ময়মনসিংহের ত্রিশাল ও লালমনিরহাটের আদিতমারীতে আজ নির্বাচন হবে। ইসির তথ্যানুযায়ী, ফণীর কারণে নীলফামারীর জলঢাকায় গতকাল বিকেল পর্যন্ত ভোটের সরঞ্জাম পাঠানো যায়নি। অন্যান্য উপজেলায় বৃষ্টি অব্যাহত থাকলেও ভোটের সরঞ্জাম পৌঁছেছে। আজ সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার সিংচাইড় ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচন হবে।

Pin It