বাজেটে গরিব, কৃষক, শ্রমিক, বেকারের জন্য কিছু নেই: গণফোরাম

kamal-5d05093c01457

প্রস্তাবিত বাজেটকে হতাশাজনক বলেছে গণফোরাম। শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে দলটির নেতারা বলেন, ২০১৯-২০ সালের প্রস্তাবিত বাজেটে গরিব, কৃষক, শ্রমিক, বেকারের জন্য কিছু নেই। ব্যবসায়ী তুষ্টির বাজেট দেওয়া হয়েছে। গুটি কয়েক ব্যবসায়ী ও রাজনীতিকের স্বার্থ রক্ষা করা হয়েছে।

বিশালাকারের বাজেটটি ঋণনির্ভর ও বাস্তবায়ন অযোগ্য। গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, বাজেটে জনগণের স্বার্থ উপেক্ষা করা হয়েছে। দেশের মালিক হিসেবে ভূমিকা পালন করতে হলে জনগণকে দেশের আয়-ব্যয় কীভাবে চলছে, তা জানতে হবে। তা বাজেটে নেই। বাজেট প্রত্যাখানের ঘোষণা দেন ড. কামাল।

প্রস্তাবিত বাজেটের কড়া সমালোচনা করেছে বিএনপিও। বাজেট প্রত্যাখান করে গণফোরাম বা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কোনো কর্মসূচি দেবে দেবে কী না- এ প্রশ্নে ড. কামাল বলেন, পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে তা ঠিক করতে তারা আলোচনা করবেন।

সংবাদ সম্মেলনে গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া প্রস্তাবিত বাজেটে তাদের চিহ্নিত করা নানা ‘ক্রটি’ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এটি জনগণের বাজেট না, জনগণের সরকারও না। অনির্বাচিত, অগণতান্ত্রিক সরকারের কাছ থেকে এর ভালো বাজেট আশা করা উচিত না। যারা প্রণয়ন করেছে, দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাদের কোনো চিন্তা নেই।

রেজা কিবরিয়ার বাবা প্রয়াত শাহ এ এমএস কিবরিয়া আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ছয়টি বাজেট প্রণয়ন করেন তিনি। অর্থনীতিবিদ রেজা কিবরিয়া গত ৩০ ডিসেম্বরের ভোটের আগে গণফোরামে যোগ দেন। আওয়ামী লীগের বিপক্ষে ভোটে লড়েন।

গণফোরামের মতামত তুলে ধরে রেজা কিবরিয়া বলেন, রাজস্ব ও ঋণের সঠিক প্রাক্কলন নেই বাজেটে। বিগত বছরগুলোতে হঠকারী বাজেটের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সঙ্কট নিরসনে দিশা নেই। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখায় যারা আইন মেনে চলেন, তারা ক্ষুব্দ হবেন। বাজেটে দারিদ্র ও বেকারত্ব মোকাবেলার উদ্যোগ নেই। গুটিকয়েক ব্যবসায়ী ও রাজনীতিকের স্বার্থ রক্ষা করা হয়েছে।

গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক বলেন, খেলাপি ঋণ লাখো কোটি ছাড়িয়েছে। জানুয়ারি নাগাদ মন্দ ঋণের পরিমাণ ছিল ৩০ শতাংশ। আমানত ও ঋণের অনুপাত দাঁড়ায় ১:০.৯। এ অবস্থায় খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ বিপজ্জনক। বাজেটে করের টাকায় ব্যাংকের মূলধন জোগানোর কাজে লাগিয়ে ঋণ খেলাপিকে পুরুস্কৃত করা হয়েছে। জনগণের ওপর করের বোঝা চাপানো হয়েছে। সরকারি ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়নে বাজেট বরাদ্দ বাতিলের দাবি জানায় গণফোরাম।

রেজা কিবরিয়া বলেন, সাম্প্রতিক বছরের বাজেট ঘাটতিকে বিবেচনায় নিতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, ভুল মুদ্রা বিনিময় হার নীতি, ধান-চাল ক্রয়ে অব্যবস্থপনা, রাজস্ব আদায় কমে গিয়ে অর্থনীতিতে ভারসাম্যহীনতার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে।

গণফোরামের বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়, কৃষকদের প্রতি সরকারের দয়ামায়া কম। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে আর্থিক বরাদ্দ অপর্যাপ্ত মনে হলেও দক্ষতার সঙ্গে সে অর্থ ব্যয় করলে সেবার মান ও পরিধি বাড়ানো সম্ভব। তারা অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় কমানোর দাবি জানায় গণফোরাম। নির্বাচন কমিশনের জন্য বরাদ্দেরও সমালোচনা করে দলটি। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এ টাকা অপব্যয় হবে। রাজস্ব প্রশাসনে সংস্কারের প্রস্তাব করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য মহসিন রশিদ, মেজর জেনারেল (অব.) আমসা আমিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশতাক আহমেদ প্রমুখ।

Pin It