বাড়ূক ঈদের খুশি

Untitled-9-5cf560729492e-5cf56680f2f1b

ছোট্ট সাহিল বাবার কোলেই ঘুমিয়ে পড়ছিল, আগের রাতে ঢাকা থেকে লন্ডন আসার পর জেটল্যাগটা ঠিক কাটেনি তখনও। অগত্যা ছেলেকে কাঁধে তুলে নিয়েই ঘুরতে বেরোলেন মাশরাফি। পাশে থাকা স্ত্রী সুমিকে মনে করিয়ে দিলেন, রাতেই ছেলের জন্য একটা ঈদের পাঞ্জাবি কিনতে হবে। লন্ডনে হয়তো আজই ঈদ; কিন্তু ঢাকায় ঈদের দিনই নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ম্যাচ রয়েছে টাইগারদের। ‘এবারের বিশ্বকাপই তো আমাদের ঈদ। খেলায় জিততে পারলেই ঈদের আনন্দটা বেড়ে যাবে। আমাদের কাজ এখনও অনেক বাকি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এভাবে শুরু করার পর আমাদের নিয়ে প্রতিপক্ষ আরও সতর্ক হয়ে যাবে। তাই আমাদেরও কৌশলী হতে হবে।’ গতকাল টিম হোটেল থেকে টেমসের ধারে ঘুরতে বেরোনোর মুখে চেনা সাংবাদিকদের দেখে অগ্রিম ঈদ শুভেচ্ছাও বিনিময় করলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। আসলে আগের দিন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে রেকর্ড জয়ের পর গতকাল টাইগারদের কেউ আর মাঠমুখো হননি। রেস্ট ডেতে সপরিবারে কেউ বেরিয়েছিলেন বাইরে, কেউ-বা হোটেল রুমেই কাটিয়েছেন সারাটা দিন। কাল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে এখনও টিম মিটিং হয়নি। তবে বসে নেই টিম ম্যানেজমেন্ট। কিউইদের নিয়ে একগাদা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন দলের ভারতীয় কম্পিউটার অ্যানালিস্ট শ্রী। প্রতি ম্যাচের আগে তিনিই প্রথম কাজটা শুরু করেন। আজ রাতেই তার সঙ্গে মাশরাফির বসার কথা, সেখান থেকেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে রণনীতি ঠিক করবে টাইগাররা। এবারের আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে কার্ডিফে শ্রীলংকাকে ১৩৭ রানে অলআউট করে দিয়েছিল কিউইরা। তিন পেসার বোল্ট, ফার্গুসন আর ম্যাট হেনরি মিলে লংকানদের রীতিমতো নাস্তানাবুদ করেছিলেন। তবে কিউই এই পেসার ত্রয়ী সম্পর্কে একেবারে অন্ধকারে নেই বাংলাদেশ। কয়েক মাস আগে নিউজিল্যান্ড সফর করে তাদেরই খেলে এসেছেন তামিম-সৌম্যরা। যদিও ওই সফরটিতে কিউই পেসারদের বুকসমান শর্ট বলগুলো ভুগিয়েছিল সবাইকে। কিন্তু মিঠুনের মতো কেউ কেউ সেটা ভালো সামলেও ছিলেন। তাই কিউই বোলারদের মোকাবেলা করাটা একেবারে কঠিন হবে না।

আপাতত টাইগারদের চোখ ওভালের বাইশ গজের দিকে। প্রথম ম্যাচ যে পিচে খেলা হয়েছিল, কালকের ম্যাচ তার থেকে একটি পিচ দূরে একেবারে নতুন। গতকাল নিউজিল্যান্ড দল মাঠে এসেছিল অনুশীলনে। কাছে গিয়ে তারা সেই পিচ দেখেও নিয়েছে। ওভালের প্রেসবক্স থেকে দূরে দেখা ওই পিচকে কোনোভাবেই সবুজ মনে হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, এই পিচেও তিন শতাধিক রানের জন্যই প্রস্তুত থাকতে হবে। আর এ মুহূর্তে দলের তিন অভিজ্ঞ মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান সাকিব, মুশফিক আর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ যেভাবে খেলছেন, তাতে বেশ আস্থা পাচ্ছেন অধিনায়ক। ‘সৌম্য আমাদের দারুণ একটি স্টার্ট দিয়ে যাচ্ছে। এরপর সাকিব-মুশফিক যেভাবে ইনিংসটা এগিয়ে নিচ্ছে, তাতেই বড় স্কোরের সম্ভাবনা বাড়ছে। সাকিব ও মুশফিক তাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে গোটা দলকেই দারুণ একটা ছন্দে এনে দিয়েছে। আশা করছি, পরের ম্যাচেও এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারবে ওরা।’

ম্যাচের পর জানার আগ্রহ ছিল ড্রেসিংরুমে কী ধরনের সেলিব্রেশন করেছে টাইগাররা। আগের মতো জয়ের পর কেউ কি গেয়েছিল- আমরা করব জয় গানটি? জানা গেল, ওরকম কিছুই হয়নি। টুকটাক হাসিঠাট্টা আর বাসে উঠে ক্লান্ত শরীর ছেড়ে দেওয়া! সেদিন রোজা রেখে ম্যাচ খেলেছিলেন মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ আর মিরাজ। কোচ স্টিভ রোডস নাকি চিন্তায় ছিলেন, পিপাসায় তাদের কষ্ট হয় এই ভেবে। পরে ট্রেনার মারিও ভিল্লাভারানেই নাকি স্টিভকে আশ্বস্ত করেন, মুশফিকের কিছু হবে না। এর আগেও তিনি এভাবে রোজা রেখে তার স্বাভাবিক খেলাটাই খেলেছিলেন। ম্যাচ জয়ের পর মাশরাফি এই তিন ক্রিকেটারকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান। সেইসঙ্গে মনে করিয়ে দেন, এই জয় কোনো আপসেট ছিল না। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত টাইগাররা দাপট দেখিয়েই ম্যাচটি জিতেছিল। তবে এমন যে প্রতিদিন হবে, সেটি নাও হতে পারে। সমর্থকদের তাই একটি জয় নিয়েই খুব বেশি উল্লাস করতে নিষেধ করেছেন। ‘দেখুন, এবারের বিশ্বকাপ লম্বা টুর্নামেন্ট। অনেক ম্যাচ। হয়তো সব ম্যাচই জেতা সম্ভব নয়। কোনো কোনো দিন আমাদের বাজে সময়ও যেতে পারে। তবে আমরা যেটা করার চেষ্টা করছি, তা হলো নিজেদের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে দলগতভাবে খেলা।’

এই দলগতভাবে খেলার কারণেই প্রথম ম্যাচে কোনো সেঞ্চুরি আসেনি বলে মনে করেন টিম ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন। ‘এই বিশ্বকাপে আমাদের প্রতিটি খেলোয়াড়ের মধ্যে একটি ব্যাপার আমার খুব ভালো লাগছে। প্রত্যেকেই ম্যাচের মোমেন্টাম ধরে ব্যাটিং করছে। সবাই বুঝতে পারছে, ওভারে ছয়ের বেশি করে রান নিতেই হবে। স্বার্থপরের মতো কেউ ব্যাট করছে না।’ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও একই একাদশ খেলানো হতে পারে। কেননা মাশরাফি মনে করেন, ডেথ ওভারে পেসার সাইফউদ্দিনই এ মুহূর্তে সবচেয়ে ভালো করছে। এ ছাড়া সাব্বিরের বদলে মোসাদ্দেককে খেলানোয় একজন বাড়তি স্পিনারও পাওয়া যাচ্ছে। তবে ওভালে কালকের ম্যাচটি হবে দিবারাত্রির। তাই শেষ মুহূর্তে কৌশলগত কারণে একাদশে পরিবর্তন আসতেও পারে।

আজ সকালে ঈদের জামাত, পরে বিকেলে ওভালে অনুশীলনে আসার কথা টাইগারদের। এরই মধ্যে মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের স্ত্রী-সন্তানরা চলে এসেছেন। আগে থেকেই সাকিব আর মিঠুনের পরিবারও রয়েছে। তাই ঈদের দিন সকালে সেমাই রান্না করে খাওয়ানোর কোনো সমস্যা নেই… তবে ঈদের উপহারটা কালকের জন্যই তোলা থাক। লন্ডন থেকেই এবারের ঈদে সেরা উপহার পাক ষোলো কোটির বাংলাদেশ।

Pin It