ব্লু-ইকোনমির সুযোগ কাজে লাগাতে বিনিয়োগ করার জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান

image-20606-1638117498

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন আজ মেরিনকালচারের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে ব্লু-ইকোনমির বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিযোগ করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, দেশের মাছ ধরার অঞ্চলের ৮৮ শতাংশ এখনও ব্যবহার করা হয়নি।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা মোট ফিশিং জোনের প্রায় ১২ শতাংশ এলাকায় প্রবেশ করেছি। ৮৮ শতাংশ এলাকা এখনও কাজে লাগানো যায়নি। এটি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি সীমাহীন সুযোগ।
আজ বিকেলে রাজধানীতে ‘ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২১ বাংলাদেশ’ উপলক্ষ্যে আয়োজিত ‘ব্লু-ইকোনমি: ডিসকভার দ্য ফিউচার’ শীর্ষক ব্যবসায়িক অধিবেশনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. মোমেন বলেন, বঙ্গোপসাগরে সহজলভ্য ৪৭৫ প্রজাতির সাদা মাছের মধ্যে কেবল ১২০টিই ধরা যাচ্ছে এবং ৩৬ প্রজাতির চিংড়ির মধ্যে মাত্র ৬ থেকে ৭টি পাওয়া যাচ্ছে। কারণ মাত্র ৫০-৬০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত দেশের গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার সক্ষমতা রয়েছে।
সম্ভাব্য স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে তিনি আরো বলেন, এসব উপাত্তে দেখা যাচ্ছে যে, অর্থ উপার্জনের প্রচুর সুযোগ রয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বর্তমান সরকার ব্লু ইকোনমি ইস্যুটিকে অত্যন্ত— গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে।
ড. মোমেন বলেন, শেখ হাসিনা সরকার ব্যবসাবান্ধব। আমি আপনাদেরকে আশ্বস্ত করতে পারি যে, বাংলাদেশ সরকার অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার জন্য একটি অনুকূল, বন্ধুত্বপূর্ণ এবং নিরাপদ পরিবেশ দিতে আগ্রহী।
তিনি বলেন, মৎস্য, সামুদ্রিক বাণিজ্য ও নৌপরিবহন, জ্বালানি ও সামুদ্রিক পর্যটন সহ নয়টি সামুদ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকা- চিহ্নিত করা হয়েছে এবং সরকার একটি ‘ব্লু-ইকোনমি ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্ক প্ল্যান’ গ্রহণ করেছে।
তিনি আরো বলেন, “এই চিহ্নিত খাতগুলো থেকে সর্বাধিক লাভের জন্য আমাদের প্রয়োজনীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি ও বিনিয়োগ প্রয়োজন।
ড. মোমেন বলেন, প্রতি বছর বড় আকারের জাহাজের জন্য বৈশ্বিক শিপ বিল্ডিং অর্ডার বৃদ্ধির সাথে সাথে ছোট ও মাঝারি সমুদ্রগামী জাহাজের চাহিদা বৃদ্ধির পাশাপাশি বাংলাদেশের জন্য একটি উচ্চ সম্ভাবনাময় বাজার গড়ে উঠছে।
তিনি বলেন, “বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার তথ অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী জাহাজ নির্মাণের বাজারের আকার ১,৬০০ বিলিয়ন ডলার। যদি মাত্র ১% মার্কেট শেয়ার বাংলাদেশ দখল করতে পারে, তাহলে এর মূল্য হবে ১৬ বিলিয়ন ডলার।
তিনি বলেন, দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ যদি শুধু ছোট জাহাজের বাজারের বৈশ্বিক অর্ডারের এক শতাংশ দখল করতে পারে তবে এর পরিমাণ হবে ৪ বিলিয়ন ডলার।
তিনি বলেন, সম্প্রতি সরকার জাহাজ নির্মাণ শিল্প উন্নয়ন নীতি-২০২০ প্রণয়ন করেছে যাতে ২০২৫ সালের মধ্যে জাহাজ রপ্তানি থেকে বার্ষিক ৪ বিলিয়ন ডলার আয় করার লক্ষ্যে ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ শিল্পের জন্য একটি সুবিধাজনক পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব হয়।
তিনি বলেন, সরকার এ বিষয়ে উদ্যোক্তাদের জন্য তহবিল সরবরাহ করতে অঙ্গীকারবদ্ধ।
ড. মোমেন বলেন, আমাদের গ্যাস ও তেল আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানিগুলোর জন্য উন্মুক্ত। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে সিসমিক জরিপ পরিচালনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
তিনি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যটকদের আকর্ষণ করতে সামুদ্রিক পর্যটনে বিনিয়োগ করার জন্য উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান।
ড. মোমেন বলেন, ব্লু-ইকোনমি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমন, অভিযোজন ও দুর্যোগ সহনশীলতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ সামুদ্রিক সম্পদ আহরণ ও অন্বেষণের জন্য ‘ব্যবহার’ ও ‘সংরক্ষণের’ মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে অঙ্গীকারবদ্ধ।
তিনি বলেন, “আমাদের নীল অর্থনীতি অনুসরণের প্রেরণা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সূচিত হয়েছে।
তিনি বলেন, ১৯৭৪ সালেই সমুদ্র ও এর সম্ভাব্য সামুদ্রিক সম্পদের গুরুত্ব উপলব্ধি করে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের ‘মেরিটাইম জোনের’ সীমা নির্ধারণের জন্য প্রথম ‘দ্য টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট, ১৯৭৪’ প্রণয়ন করেছিলেন। গ্রহণ করেন। সীমার মধ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম এবং সমুদ্র সম্পদ অনুসন্ধান.
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছেও তখন এ বিষয়ে পর্যাপ্ত ধারণা ছিল না।

Pin It