ভবন নির্মাণে অনিয়ম, তদন্তে নামছে দুদক

Untitled-119-5cbb83e7093e7

রাজধানীতে ভবন নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতি অনুসন্ধানে মাঠে নামছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ জন্য নকশা অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ রাজউকেরই তৈরি ত্রুটিপূর্ণ প্রায় সাড়ে ৬ হাজার ভবনের তালিকা সংগ্রহ করেছে কমিশন। এসব ভবনের নির্মাণ সংক্রান্ত নথি ও ভবনগুলোর বর্তমান অবস্থা খতিয়ে দেখা হবে। ইতিমধ্যে দুদক এ তালিকা পর্যালোচনা করে দেখেছে।

সূত্র জানায়, সবচেয়ে ত্রুটিপূর্ণ বা ঝুঁকিপুর্ণ ভবনগুলোর তথ্যাদি আগে অনুসন্ধান করা হবে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য ভবনের তথ্য অনুসন্ধান করা হবে। অনুসন্ধানে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেলে সংশ্নিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছেন দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন। তিনি সমকালকে বলেন, তাদের কাছে রাজধানীর ত্রুটিপূর্ণ ৬ হাজার ৪০২টি ভবনের তালিকা আছে। তারা  এ তালিকা ধরে অনুসন্ধানের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি জানান, ২০১৩ সালেই এসব ভবন নির্মাণে অনিয়ম নিয়ে কাজ শুরু করেছিল দুদক। তখন হাইকোর্টেও এই তালিকা জমা দিয়েছিল দুদক। তবে হাইকোর্ট তখন দুদকের তদন্তে নিষেধাজ্ঞা দেননি বলে জানা গেছে।

গত ২৮ মার্চ রাজধানীর বনানীর এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডে ২৬ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় আবার নড়েচড়ে বসেছে দুদক। প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৮ তলার অনুমোদন নিয়ে ওই টাওয়ারটি বেআইনিভাবে পাঁচ তলা বাড়িয়ে ২৩ তলা পর্যন্ত করা হয়। ভবন নির্মাণে এ ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি বের করতে চায় দুদক।

পর্যালোচনায় দুদক দেখতে পায়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৬ তলার অনুমোদন নিয়ে ১০-১২ তলা, ৯ তলার অনুমোদন নিয়ে ১২-১৫ তলা, ৬ তলার অনুমোদন নিয়ে ২০-২২ তলা পর্যন্ত করা হয়েছে। এই অনিয়ম চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। অন্যান্য অনিয়মের মধ্যে রয়েছে নকশায় অনুমোদিত আয়তনের চেয়ে বড় আকারের বাড়ি নির্মাণ এবং রাস্তার জন্য জায়গা ছেড়ে দেওয়ার শর্ত ভঙ্গ। পাকা দেয়াল তুলে অথবা অন্যান্য কৌশলে বাড়ি সংলগ্ন সরকারি জায়গা নিজেদের দখলে রাখা ও দুর্বল অবকাঠামোতেও অনেক বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে।

জানা গেছে, রাজউকের নিয়ম অনুযায়ী, সড়ক ৮ ফুট ৩ ইঞ্চির বেশি চওড়া না হলে তার পাশে ভবন নির্মাণে অনুমতি দেওয়া হয় না। অথচ ওই মাপের চেয়ে ছোট রাস্তার পাশে নির্মাণ করা হয়েছে সারি সারি ভবন। রাজউক আওতাধীন এলাকার স্থাপনা নির্মাণে এ ধরনের ত্রুটি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা অব্যাহত আছে। এক শ্রেণির বাড়ি মালিক রাজউকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে এসব অনিয়ম করে পার পেয়ে যায়। রাজউকের মাঠ পর্যায়ের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও অর্থের বিনিময়ে তাদের সহায়তা করে।

সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে সাভারে রানা প্লাজা ধসের পর দুদকের নেতৃত্বে রাজউক, পরিবেশ অধিদপ্তর, মোবাইল কোর্ট ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে ত্রুটিপূর্ণ ভবনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়। ভবন নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির জন্য দায়ী ভবন মালিক ও সংশ্নিষ্ট রাজউক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণেরও সিদ্ধান্ত হয়। এ জন্য দুদক উপপরিচালক এসএম সাহিদুর রহমানের নেতৃত্বে গঠন করা হয়েছিল ৪ সদস্যের টিম।

তখন এও বলা হয়েছিল, অভিযান পরিচালনার সময় ত্রুটিপূর্ণ ভবনগুলোর বিষয়ে ইমারত বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীর মতামত নেওয়া হবে। পরে আইন অনুযায়ী রায় দেবেন মোবাইল কোর্ট। মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিত করতে তখন একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করারও চিন্তা-ভাবনা করা হয়। সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, ওই সময় অভিযান পরিচালনা করা হলে হয়তো এফ আর টাওয়ার ট্র্যাজেডি ঘটত না।

৬ তলার অনুমতি নিয়ে ২২ তলা :জানা গেছে, রাজউক থেকে সংগ্রহ করা তালিকা পর্যালোচনা করে বেশ কিছু ভবনে অস্বাভাবিক নির্মাণ ত্রুটি পেয়েছে দুদক। এবার ওইসব ভবনের নথিপত্র ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া অনুসন্ধানে গুরুত্ব দেওয়া হবে। রাজউকের তালিকায় উল্লেখ করা হয়, গুলশান এভিনিউয়ে সাবেক এমপি আবদুল জব্বারের মালিকানাধীন জব্বার টাওয়ার ৬ তলার অনুমতি নিয়ে ২২ তলা এবং ডা. এইচবিএম ইকবালের মালিকানাধীন ইকবাল টাওয়ার ৬ তলার অনুমতি নিয়ে ২০ তলা করা হয়েছে। কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই নির্মাণ করা হয়েছে ১২ তলাবিশিষ্ট তাহের টাওয়ার। রাজউকের তালিকায় ভবনটিকে অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। একইভাবে ৬ তলার অনুমোদন নিয়ে ১২ তলা ভবন নির্মাণ করেছে ইউনিয়ন প্রোপার্টিজ লিমিটেড। এএইচএম মোস্তফা কামাল ১৩ তলার অনুমোদন নিয়ে নির্মাণ করেছেন ২০ তলা ভবন। এমএনএইচ বুলু ৬ তলার অনুমোদন নিয়ে নির্মাণ করেছেন ২০ তলা ভবন। এ এলাকায় নোমান চৌধুরী ও মনিরুজ্জামান মিলুর মালিকানাধীন ২টি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে।

এ ছাড়া গুলশান এভিনিউয়ে শফিউর রহমানের ৬ তলা ভবন, গাজী নুরুল ইসলামের ৮ তলা ভবন, এসিউর প্রোপার্টিজের ৯ তলা ভবন, সালাহ উদ্দিন আহমেদের ৬ তলা ভবন, মো. মনিরুজ্জামানের ৯ তলা ভবন, আজিজুল হক ও নাজনীন হকের ২টি ভবন কোনোরূপ অনুমোদন ছাড়াই অবৈধভাবে নির্মাণ করা হয়েছে।

ফার্মগেটের তেজকুনিপাড়ায় বাবুল টাওয়ার ৬ তলার অনুমোদন নিয়ে ১২ তলা করা হয়েছে।

Pin It