মন্ত্রণালয়ের সব প্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতিমুক্ত করতে চাই

Untitled-3-5c953c2830f5b

ঘুষ-দুর্নীতি আর ভোগান্তির অভিযোগে জর্জরিত রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) ও জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষকে দুর্নামমুক্ত করতে চান গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শ. ম. রেজাউল করিম এমপি। তিনি মনে করেন, এসব প্রতিষ্ঠানকে স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও জনবান্ধব করতে পদ্ধতিগত পরিবর্তন আনা দরকার।

সমকালের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, এ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা সব প্রতিষ্ঠানকে এমন পদ্ধতিতে পরিচালিত করতে চাই, যেন দুর্নীতির সব পথ বন্ধ হয়ে যায়। যেন জনগণের ভোগান্তি কমে। এ কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসেবে রাজউক ও চউকের সব নকশার অনুমোদনে এতদিন বাধ্যতামূলক থাকা ১২টি ছাড়পত্রের আটটিই বাদ দেওয়া হয়েছে। অন্য চারটির ক্ষেত্রেও শিথিলতা আনা হয়েছে। মানুষজন সহজেই এখন ভবনের নকশা অনুমোদন করতে পারবেন। অতীতের মতো নকশা অনুমোদন পেতে দীর্ঘ সময় লাগবে না। এভাবে সব প্রতিষ্ঠানকেই জনবান্ধব করে তোলা হবে।

সম্প্রতি সচিবালয়ে মন্ত্রীর কক্ষে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শ. ম. রেজাউল করিম সমকালের কাছে তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, যখনই সেবাগ্রহীতার সঙ্গে সেবাদাতার দেখা-সাক্ষাতের সুযোগ বন্ধ হয়ে যাবে, তখন আর্থিক লেনদেনও বন্ধ হয়ে যাবে। গ্রাহকও উৎকোচ দেওয়ার সুযোগ পাবেন না। সেবাদাতাও উৎকোচ নেওয়ার সুযোগ পাবেন না। এ জন্যই রাজউকের সব ধরনের কার্যক্রম আগামী ১ মে থেকে অনলাইনের মাধ্যমে শুরু হবে। সব বার্তা যাবে ই-মেইল বা মোবাইল ফোনে। কাজটি বাস্তবায়ন করা চ্যালেঞ্জ হলেও সেটা করা হবে।

ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত শ. ম. রেজাউল করিম গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে পিরোজপুর-১ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। পরে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি। মাত্র ৯ বছর বয়সে বাবা আব্দুল খালেক শেখের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া পিরোজপুরের নাজিরপুরের এই সন্তান বলেন, ঢাকা এখন এক জঞ্জালের শহরে পরিণত হয়েছে। এই জঞ্জাল পরিকল্পিতভাবে পরিস্কার করতে হবে। নকশাবহির্ভূত যেসব অবকাঠামো আছে, সেগুলোকে অপসারণ করা হবে। এ কাজটি চলমান কার্যক্রমের অংশ হলেও আগামীতে উচ্ছেদ কার্যক্রম জোরদার করা হবে। একটা অননুমোদিত ভবনও রাজধানীতে থাকতে পারবে না। অনেক অসাধু ব্যক্তি অনেক সময় মামলা-মোকদ্দমা ফেঁদে এসব ভবন টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করে। সে ব্যাপারেও দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে। নকশা ছাড়া একটি স্থাপনাও থাকতে পারবে না। অনেক সময় নকশার অনুমোদন থাকলেও সেটা লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত তলা বা নকশার তুলনায় বড় আকৃতির অবকাঠামো তৈরি করা হয়। রাজউকের পরিদর্শক বা অথরাইজড অফিসাররা সেটা দেখেন না। একবার ভবন তৈরি হয়ে গেলে সেটা অপসারণ করাও কঠিন হয়ে পড়ে। এখন থেকে আর সেই সুযোগ থাকবে না।

মন্ত্রী রেজাউল করিম বলেন, রাজউক বলছে, এ কাজে তাদের জনবলের অভাব আছে। এ জন্য ইতিমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে জনবল বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। জনবল বাড়লে এ কাজ সঠিকভাবে তদারকি করা যাবে। তখন কেউ আর নিয়মবহির্ভূত উপায়ে অবকাঠামো তৈরি করতে পারবে না। কেউ করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারণ, সরকারের চেয়ে শক্তিশালী আর কেউ নয়। সরকারের যে কোনো দপ্তরের জায়গা কেউ দখলে রাখলে সে আওয়ামী লীগের হোক, বিএনপির হোক আর জাতীয় পার্টিরই হোক, তার পরিচয়- অবৈধ দখলদার। এখন থেকে কেউই অবৈধভাবে সরকারি জায়গা দখল করে রাখতে পারবে না।

এক সময় সাংবাদিকতায় যুক্ত শ. ম. রেজাউল করিম বর্তমানে আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক। তার তিনটি প্রকাশিত গ্রন্থ রয়েছে। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা ও জেলহত্যা মামলার অন্যতম আইনজীবী ছিলেন। এ ছাড়া ওয়ান-ইলেভেনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে করা বিভিন্ন মামলার অন্যতম আইনজীবী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। নানা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন ১৪টি পদক।

প্রায় আড়াই যুগ ধরে আইন ব্যবসায় সম্পৃক্ত শ. ম. রেজাউল করিম বলেন, অনিয়ম করে গড়ে ওঠা ভবনগুলো অপসারণের পরিকল্পনা করেছি। এখন তা বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রতিদিন তিনটি দল উচ্ছেদ অভিযান চালাবে। এ ক্ষেত্রে সমস্যা হলো পুলিশের সংকট। কারণ, সেখানেও জনবল সংকট রয়েছে। অথচ পুলিশ ছাড়া উচ্ছেদ অভিযান চালানো সম্ভব নয়।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক এই সম্পাদক বলেন, বর্তমান সরকারের উদ্দেশ্য গ্রামকে শহর বানানো নয়। সরকারের উদ্দেশ্য শহরে যেসব নাগরিক সুবিধা পাওয়া যায়, গ্রামের মানুষকেও সেসব আধুনিক সেবার অংশীদার করে তোলা। এটা হলো সেবার বিকেন্দ্রীকরণ। উন্নত রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় অর্থাৎ উন্নত শিক্ষা, চিকিৎসা, পানি-বিদ্যুৎ সুবিধা ইত্যাদি। এসব সুবিধা দিলে গ্রামের মানুষের আর শহরে আসার প্রয়োজন পড়বে না। তাদেরও এসব সুবিধা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। কারণ গ্রামের মানুষও ট্যাক্স দেয়। এতদিন গ্রামের মানুষের ট্যাক্সের টাকায় শহরের উন্নয়ন ঘটেছে। এবার গ্রামেও আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।

খুলনার দৌলতপুর কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি শ. ম. রেজাউল করিম বলেন, এর আগে বস্তিবাসী ও নিম্ন-আয়ের মানুষের জন্য কিছু ফ্ল্যাট তৈরি হলেও সেগুলোতে তারা বসবাসের সুযোগ পাননি। এ অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। এ সরকার এমন পরিকল্পনা নিয়েছে, যাতে বস্তিবাসী নামমাত্র ভাড়ায় থাকতে পারেন। কেউ যেন তাদের জন্য ফ্ল্যাট বরাদ্দ নিয়ে নিজে দখলে রাখতে না পারে।

নতুন আবাসন প্রকল্প গ্রহণ সম্পর্কে শ. ম. রেজাউল করিম বলেন, কয়েকটি এলাকায় আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নের ব্যাপারে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। সেখানে আবাসিক প্লট থাকবে। তবে পাঁচ কাঠা জমি একজনকে বরাদ্দ দিলে একটি পরিবারের আবাসন হয়। সেখানে বহুতল ফ্ল্যাট প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে ২০টি পরিবার থাকতে পারে। এটাও ভাবা হচ্ছে।

রাজউকের ফ্ল্যাটের অতিরিক্ত দাম প্রসঙ্গে গৃহায়নমন্ত্রী বলেন, রাজউক যখন কোনো আবাসন প্রকল্প নেয়, তখন জমি অধিগ্রহণ করতে বাজারমূল্যের তিন গুণ অর্থ পরিশোধ করতে হয়। এর সঙ্গে নির্মাণ ব্যয়ও আছে। সব মিলিয়ে যে খরচ পড়ে, সেই অনুপাতেই ফ্ল্যাটের দাম নির্ধারণ করা হয়। রাজউক এখানে কোনো ব্যবসা করে না। রাজউকের লক্ষ্য নগরবাসীকে সেবা দেওয়া।

Pin It