মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন সীমা বাড়াল বাংলাদেশ ব্যাংক। ক্যাশ ইন, ক্যাশ আউট ও ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি পর্যায়ে লেনদেনের পরিমাণ ও সংখ্যা বাড়িয়ে দ্বিগুণ বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে তার বেশি করা হয়েছে।
এখন থেকে বিকাশ, রকেটসহ বিভিন্ন বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব থেকে দৈনিক ৩০ হাজার টাকা ক্যাশ-ইন বা জমা এবং ২৫ হাজার টাকা ক্যাশ-আউট বা উত্তোলন করা যাবে। আগে এ সীমা ১৫ ও ১০ হাজার টাকা ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সিদ্ধান্তের ফলে ডাক বিভাগের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ‘নগদ’ এর সঙ্গে লেনদেন সীমার পার্থক্য কিছুটা কমল।
সম্প্রতি তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করেছে ডাক বিভাগ। ‘নগদ’ নামে এ সেবা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম-নীতি অনুসরণ করে কার্যক্রম পরিচালনা করে না। বর্তমানে নগদে দিনে পাঁচ বারে আড়াই লাখ টাকা ক্যাশ ইন ও ক্যাশ-আউট করা যায়। আর এক মাসে ৫০ বারে ক্যাশ ইন ও ক্যাশ আউট করা যায় ৫ লাখ টাকা। একবারে ৫০ হাজার টাকা ক্যাশ ইন এবং ক্যাশ আউট করতে পারেন এর গ্রাহক। নগদের মাধ্যমে তুলনামূলক বেশি লেনদেনের সুবিধা থাকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা মেনে পরিচালিত মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দাতা প্রতিষ্ঠানগুলো এক ধরনের অসম প্রতিযোগিতায় পড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম-নীতি মেনে বর্তমানে ১৬টি মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান লেনদেন করছে। অন্যদিকে কার্যক্রম গুটিয়ে নিয়েছে চারটি প্রতিষ্ঠান। গত মার্চ পর্যন্ত এসব প্রতিষ্ঠানের এজেন্ট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ১৯ হাজার। নিবন্ধিত গ্রাহক রয়েছে ৬ কোটি ৭৫ লাখ। এর মধ্যে সচল রয়েছে ৩ কোটি ২৩ লাখ অ্যাকাউন্ট। এসব হিসাব থেকে মার্চ মাসে দৈনিক গড়ে এক হাজার ১১৯ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, এখন থেকে একটি মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবে দিনে পাঁচ বারে ৩০ হাজার টাকা জমা করা যাবে। এতো দিন যা দুই বারে ১৫ হাজার টাকা ছিল। আর এক মাসে জমা এক লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ টাকা করা হয়েছে। মাসে লেনদেনের সর্বোচ্চ সংখ্যা ২০ এর পরিবর্তে ২৫ বার করা হয়েছে। ক্যাশ-আউটের ক্ষেত্রে দৈনিক দুই বারে ১০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ বারে ২৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। এক মাসে ক্যাশ আউটের পরিমাণ সর্বোচ্চ ১০ বার লেনদেনে ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ বারে দেড় লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। এছাড়া ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি দৈনিক ২৫ হাজার টাকা এবং মাসে ৭৫ হাজার টাকা স্থানান্তরের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এতদিন যা ১০ ও ২৫ হাজার টাকা ছিল।
মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে প্রবাসীদের টাকা হুন্ডির মাধ্যমে আনা ঠেকাতে এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধের লক্ষ্যে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সুপারিশে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে এভাবে লেনদেন সীমা কমিয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
ওই নির্দেশনার আগে দিনে পাঁচ বারে ২৫ হাজার টাকা এবং মাসে ২০ বারে দেড় লাখ টাকা ক্যাশ-ইন করা যেতো। আর দৈনিক তিন বারে ২৫ হাজার টাকা এবং মাসে ২০ বারে দেড় লাখ টাকা ক্যাশ-আউট করা যেতো। নতুন নির্দেশনায়, আগের মতোই একটি মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবে তিন লাখ টাকা স্থিতি রাখার সুযোগ রাখা হয়েছে। আর ৫ হাজার টাকা বা তার বেশি নগদ জমা বা উত্তোলন করার ক্ষেত্রে গ্রাহকের পরিচয়পত্র বা স্মার্ট কার্ডের ফটোকপি এজেন্টকে দেখাতে হবে। এজেন্ট গ্রাহকের জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর রেজিস্টারে লিখে রাখবেন।
এছাড়া সব গ্রাহকের প্রতিটি লেনদেন আলাদাভাবে রেজিস্টারে লিখতে হবে। এক্ষেত্রে এজেন্টের গাফিলতি প্রমাণিত হলে তার এজেন্টশিপ বাতিল করতে হবে। এক এজেন্টর হিসাব থেকে অন্য এজেন্টের হিসাবে অর্থ জমা বা উত্তোলন করা যাবে না। একজন এজেন্ট দিনে পাঁচ বারের বেশি নিজের এজেন্ট হিসাবে নগদ অর্থ জমা করতে পারবেন না। একই পরিচয়পত্রের বিপরীতে একটি মোবাইল সেবা দাতা প্রতিষ্ঠানে একটির বেশি অ্যাকাউন্ট থাকলে তা বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস একটি ক্রম বিকাশমান সেবা যা বিগত কয়েক বছর যাবৎ আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে ভূমিকা পালন করছে। ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে আগত রেমিট্যান্স বিতরণ, ই-কমার্স, ক্ষুদ্র ব্যবসা, বেতন বিতরণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে এ সেবা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।