এনামুলের বন্ধু ওকর্মচারীর বাসায় আরো চার কোটি টাকা

f-5d8a3a77cd537

ঢাকার গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের নেতা দুই ভাই এনামুল হক এনু ও রুপন ভূঁইয়ার বাসায় অভিযান চালিয়ে কোটি কোটি টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধারের পর তাদের এক বন্ধু ও কর্মচারীর বাসায় অভিযান চালিয়েও মিলেছে টাকা ও অস্ত্র।

মঙ্গলবার র‌্যাবের ওই অভিযানে মোট তিন জায়গা থেকে নগদ পাঁচ কোটি টাকা, ৭২০ ভরি বা ৮ কেজি স্বর্ণালঙ্কার ও ৬টি আগ্নেয়াস্ত্র  উদ্ধার হয়।

এনামুল হক এনু গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এবং রুপন একই ইউনিটের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। দুই ভাই পুরান ঢাকার সূত্রাপুরের বানিয়ানগর এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা।

১৫ বছর আগে নবাবপুর রোডের মাথায় তাদের একটি লেদ মেশিনের ওয়ার্কশপ ছিল। এখন তারা অন্তত ১৫টি বাড়ির মালিক। নিজেদের, বন্ধু এবং কর্মচারীর বাসায় রীতিমতো ব্যাংকের মতো ভল্ট বানিয়ে তাতে রাখেন কোটি কোটি টাকা এবং স্বর্ণালঙ্কার। এসব সম্পদ রক্ষায় তাদের রয়েছে অবৈধ অস্ত্রধারী ক্যাডারও।

র‌্যাব বলছে, মতিঝিলে ক্যাসিনো চালিয়ে এই দুই ভাই রাতারাতি বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছেন। এরমধ্যে এনামুল মতিঝিলে ওয়ান্ডারার্স ক্লাব ও রুপন আরামবাগ ক্লাবে ক্যাসিনো চালাতেন। তবে অভিযানের সময় দুইজনের কাউকেই গ্রেফতার করা যায়নি।

অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া র‌্যাব-৩-এর অধিনায়ক শাফীউল্লাহ বুলবুল বলেন, কয়েকদিন আগে তারা মতিঝিলে কয়েকটি ক্লাবে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের সময় তথ্য পান সেখান থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এরপরই তদন্ত করতে গিয়ে এনামুল ও রুপনকে চিহ্নিত করা হয়। নিশ্চিত হয়ে মঙ্গলবার ভোর থেকে তাদের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়।

র‌্যাব কর্মকর্তা আরও জানান, বানিয়ানগরে এনামুলের ছয়তলা বাড়ির দোতলা ও পাঁচতলায় তিনটি বড় ভল্ট পাওয়া যায়। ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ভল্টগুলো খুলে এরমধ্যে এক কোটি পাঁচ লাখ টাকা ও ৭২০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া যায়। ৮ কেজি ওজনের এই স্বর্ণালঙ্কারের মূল্য চার কোটি টাকার বেশি।

তিনি জানান, এরপরই ওই বাড়ি থেকে তথ্য নিয়ে লালমোহন সাহা স্ট্রিট ও নারিন্দার শরৎগুপ্ত রোডে এনামুলের কর্মচারী ও বন্ধুর বাসায় অভিযান চালিয়ে আরও দুই কোটি টাকা এবং তার এক কর্মচারীর বাসায় রাখা ভল্ট থেকে দুই কোটি টাকা জব্দ করা হয়।

র‌্যাব অধিনায়ক বলেন, অভিযানে তিনটি রিভলবার, রাইফেলসহ বিভিন্ন ধরনের ৬টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। পলাতক দুই ভাই এসব অস্ত্র ব্যবহার করে অনেককে জিম্মি করতেন বলে র‌্যাব জানতে পেরেছে। কয়েকদিন আগে এনামুল থাইল্যান্ডে পালিয়ে গেছেন। রুপন ভূঁইয়াকেও গ্রেফতার করা যায়নি।

ভল্ট তৈরি হয় ইংলিশ রোডে

এনামুল ও রুপনের পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাব জানতে পেরেছে, মতিঝিলে ক্যাসিনোর আসর থেকে ওই দুই ভাই টাকা নিয়ে বাসায় রাখতেন। এজন্য পুরান ঢাকার ইংলিশ রোড থেকে তারা সুরক্ষিত ভল্ট তৈরি করেন। ইংলিশ রোডে একটি দোকানে আরও পাঁচটি ভল্ট তৈরির বায়না দিয়েছিলেন দুই ভাই।

র‌্যাব-৩ এর এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এনামুল ও রুপনের কাছে আরও নগদ টাকা থাকতে পারে। তাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

ভল্টে টাকা রাখার জায়গা নেই, তাই কেনা হতো স্বর্ণালঙ্কার

র‌্যাবের অভিযানে গিয়ে দেখা যায়, বানিয়ানগরে এনামুলদের ছয়তলা বাড়ি ঘিরে রেখেছে র‌্যাব। ওই বাসায় ঢুকে লোহার তিনটি সিন্দুক (ভল্ট) দেখা যায়। ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে সেগুলো খোলা হলে ভেতরে সারি সারি এক হাজার টাকা ও পাঁচশ টাকার নোট সাজানো দেখা যায়। এর একটি ভল্টে ছিল শুধু স্বর্ণালঙ্কার।

এনামুলের পরিবারের একজন সদস্য জানিয়েছেন, প্রতিদিনই নগদ টাকা নিয়ে আসতেন তারা। এত টাকা রাখার জায়গা ছিল না। এজন্য টাকা দিয়ে স্বর্ণালঙ্কার কিনে ভল্ট ভর্তি করা হচ্ছিল।

ওই অভিযানের পরই র‌্যাব লালমোহন সাহা স্ট্রিটে ঘিরে রাখা এনামুলের কর্মচারী আবুল কালামের বাসায় অভিযান শুরু করে। সেখানেও পাওয়া যায় একটি ভল্ট। সেটি ভাঙার পর দেখা যায় থরে থরে সাজানো দুই কোটি টাকা ও একটি পিস্তল।

বাসার লোকজন জানিয়েছেন, কালাম ভোরে ফজরের নামাজ পড়তে গিয়ে আর ফিরে আসেননি।

এরপরই অভিযান শুরু হয় শরৎগুপ্ত রোডে এনামুলের বন্ধু হারুন অর রশিদের বাড়িতে। ওই বাড়িটিও আগেই ঘিরে রেখেছিল র‌্যাব। সেখানেও পাওয়া যায় একটি ভল্ট। এটি খুলে পাওয়া যায় দুই কোটি টাকা।

অভিযানের সময়ে হারুনকেও বাসায় পাওয়া যায়নি। তবে তার স্ত্রী দাবি করেন, হারুন ট্রাকস্ট্যান্ডের কর্মচারী। তারা এ টাকার বিষয়ে কিছুই জানেন না। কয়েক দিন আগে এনামুল এসে সিন্দুকসহ টাকাগুলো বাসায় রেখে গেছেন।

র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক শাফীউল্লাহ বুলবুল বলেন, তারা জানতে পেরেছেন, এনামুল ও রুপন প্রতি রাতেই বাসায় নগদ টাকা নিয়ে আসতেন। এসব টাকা রাখার জায়গা হচ্ছিল না। অভিযানের মুখে নগদ টাকা রক্ষা করতে তা স্বর্ণালঙ্কারে রূপান্তরের চেষ্টায় ছিলেন তারা। এজন্য স্বর্ণালঙ্কারও কেনা শুরু করেছিলেন।

ওই দুই ভাই যে থানা আওয়ামী লীগের পদধারী নেতা তা স্বীকার করেছেন গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত জাহান।

তিনি বলেছেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে ক্যাসিনো চালানো ও অবৈধ টাকার রাখার যে অভিযোগ উঠেছে তা প্রমাণ হলে আমরা এ দুজনের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।’

 —————————————————————————————————————————————————————–

রাজধানীতে ২ আ’লীগ নেতার বাসায় অভিযান, টাকা ও স্বর্ণ উদ্ধার

rab-ovijan-5d89b5aae6d63

রাজধানীর গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এনামুল হক ওরফে এনু ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রূপন ভূঁইয়ার বাসায় অভিযান চালাচ্ছে র‌্যাব। তারা দু’জন রাজধানীর ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের ক্যাসিনো ব্যবসার অংশীদার বলে অভিযোগ আছে।

মঙ্গলবার সকাল ১০টার পর রাজধানীর পুরান ঢাকার মুরগিটোলা এলাকার তাদের বাসায় অভিযানে যায় র‌্যাবের একটি দল। অভিযানে তাদের বাসায় “নগদ টাকার পরিমাণ ১ কোটি টাকার বেশি এবং স্বর্ণের পরিমাণ এখনও আমরা নিরূপণ করতে পারিনি। সব হিসাব শেষ করে আমরা বিস্তারিত জানাবো।। তবে তাদের দু’জনকে পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সিনিয়র সহকারী পরিচালক এএসপি মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, অভিযান চলছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হবে।

র‌্যাবের পক্ষ থেকে পাঠানো এক ক্ষুদেবার্তায় বলা হয়, দুপুর সাড়ে ১২টায় বানিয়ানগর, মুরগিটোলায় (দয়ারগঞ্জ নতুনরাস্তা) এক ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।

Pin It