রাজনীতিতে গুরুত্ব বাড়ছে শেখ মনি পরিবারের

image-118314-1577736571

রাজনীতিতে গুরুত্ব বাড়ছে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, মুজিব বাহিনীর অধিনায়ক ও যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শহিদ শেখ ফজলুল হক মনি পরিবারের। যার হাত দিয়ে গড়ে উঠেছিল যুবলীগ, সেই শেখ মনির বড়ো ছেলে এবার যুবলীগের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। শেখ মনির ছোটো ছেলে ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস আওয়ামী লীগের টিকিট পেলেন আগামী ৩০ জানুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এর মাধ্যমে রাজনীতিতে শেখ মনির পরিবারের গুরুত্ব বাড়লো।

বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতি ও স্বাধিকার আন্দোলনের নক্ষত্র, বাঙালি জাতীয়তাবাদ আন্দোলনের সৃজনশীল যুবনেতা ও মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স তথা মুজিব বাহিনীর অন্যতম প্রধান কমান্ডার শেখ ফজলুল হক মনি ১৯৩৯ সালের ৪ ডিসেম্বর টুঙ্গিপাড়ায় ঐতিহাসিক শেখ পরিবারে জন্ম নেন। তার বাবা মরহুম শেখ নূরুল হক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভগ্নিপতি। মা শেখ আছিয়া বেগম বঙ্গবন্ধুর বড়ো বোন। ছাত্রজীবন থেকেই মনি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ষাটের দশকে সামরিক শাসনবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তিনি সাহসী নেতৃত্ব দেন। ১৯৬০-১৯৬৩ সালে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। ১৯৬২ সালে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন রিপোর্টের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় তিনি গ্রেফতার হন এবং ছয় মাস কারাভোগ করেন। ১৯৬৪ সালের এপ্রিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ও পূর্ব পাকিস্তানের তত্কালীন গভর্নর আবদুল মোনেম খানের কাছ থেকে সনদ নিতে তিনি অস্বীকৃতি জানান এবং সরকারের গণবিরোধী শিক্ষানীতির প্রতিবাদে সমাবর্তন বর্জন আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার ডিগ্রি প্রত্যাহার করে নেয়। পরবর্তী সময়ে তিনি মামলায় জিতে ডিগ্রি ফিরে পান। ১৯৬৫ সালে তিনি পাকিস্তান নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার হন এবং দেড় বছর কারাভোগ করেন। তার রাজনৈতিক জীবনের অন্যতম বড়ো চ্যালেঞ্জ ও কৃতিত্ব ১৯৬৬ সালের ৭ জুনে ৬ দফার পক্ষে হরতাল সফল করে তোলা। শেখ মনি ছিলেন ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের কর্মসূচি প্রণয়নের অন্যতম প্রণেতা। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর যুবকদের সংগঠিত করার লক্ষ্য নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গড়ে তুলেছিলেন ‘বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ’। তিনি সংগঠনটির দায়িত্ব দেন নিজের ভাগ্নে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শেখ মনিকে। দুই বছরের মাথায় কংগ্রেসে শেখ মনিই যুবলীগের প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারসহ আরো যাদের হত্যা করা হয়েছিল তাদের মধ্যে শেখ ফজলুল হক মনি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনিও ছিলেন। তখন শেখ ফজলে শামস পরশের বয়স ছিলো ছয় বছর ও তার ছোটো ভাই শেখ ফজলে নূর তাপসের বয়স ছিলো চার বছর। শেখ মনির বড়ো ছেলে ৫১ বছর বয়সি যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর পাশ করেন।

এরপর যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজিতে আবার স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। শেখ ফজলে নূর তাপস পেশায় একজন আইনজীবী। ঢাকা-১০ আসনে একাধিকবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস গত তিন মেয়াদে তার দায়িত্ব পালনে অত্যন্ত দক্ষতা ও যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন। অত্যন্ত সজ্জন, বিনয়ী ও স্বল্পভাষী তাপস প্রতিনিয়তই জনগণের সুখ-দুঃখে পাশে থেকেছেন। স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন ইমেজের এই নেতার সঙ্গে শুধু তার আসনেই নয়, ঢাকা মহানগরীর প্রায় প্রতিটি আসনেই নিজেকে অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য হিসেবে গড়ে তুলেছেন। এছাড়া আইনজীবীসহ সুশীল সমাজ ও এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যেও বেশ গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের।

Pin It