‘লম্বা’ ছুটি, তাই ধরলেন বাড়ির পথ

ঈদের আগে তিন দিন ছুটির পর একদিন অফিস, তাই বৃহস্পতিবার অফিস শেষ করেই বাড়ির পথ ধরলেন অনেকে।

rail-eid-journey-kamlapur-station-mzo--300519-01

বিকালে ঢাকার গাবতলী থেকে গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরের বাস ধরার অপেক্ষায় থাকা আশরাফুল আলমের কথায়ও সেই চিত্র উঠে এলো।

হানিফ পরিবহনের কাউন্টারে বসে তিনি  বলেন, “লম্বা ছুটি আছে। এজন্য এই কদিন ঢাকায় বসে না থেকে বাড়ি চলে যাই। পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে বেশি সময় কাটাতে পারব। রাস্তায় মনে হয় যানজট নেই। গাড়িও ঠিক সময়েই ছাড়ছে।”

২০১৯ সালের বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী, রমজান মাস ২৯ দিন ধরে নিয়ে ৪ থেকে ৬ জুন ঈদুল ফিতরের ছুটি নির্ধারণ করেছে সরকার। এরপর দুই দিন শুক্র ও শনিবার হওয়ায় অফিস বন্ধ থাকবে ৮ জুন পর্যন্ত।

৪ জুন ঈদের ছুটি শুরুর আগে ২ জুন থাকবে শব-ই কদরের ছুটি। তার আগে দুই দিন শুক্র ও শনিবারের সাপ্তাহিক ছুটি। এরমধ্যে অফিস খোলা থাকছে শুধু ৩ জুন।

আশরাফুলের মতো অনেককেই গাবতলী ও কল্যাণপুরের বিভিন্ন পরিবহনের কাউন্টারে বাসের অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায়।

দুপুরের পর থেকেই গাবতলীর মতো রাজধানীর সায়েদাবাদ ও মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে ঘরমুখো মানুষের উপস্থিতি দেখা যায়। ঈদযাত্রীদের ভিড় হয়েছে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনেও, সদরঘাট থেকেও লঞ্চ ধরেছেন দক্ষিণবঙ্গের মানুষ।

বিকালে গাবতলী টার্মিনালে বাসের টিকেট কেনার চেষ্টা করছিলেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী শরীফুল ইসলাম। তার গন্তব্য গ্রামের বাড়ি যশোরের পাইকগাছা।

শরীফুল  বলেন, “আমাদের অফিস আগেই ছুটি হয়ে গেছে। এজন্য বাড়ি চলে যাচ্ছি। আগে টিকেট কিনি নাই। আজ যেই বাসের টিকেট পাই চলে যাব।”

ঈদযাত্রা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তি ভাড়া নেওয়াও শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ করলেন সেনা সদস্য বাহার উদ্দিন। পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে সাতক্ষীরায় গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন তিনি।

“দেশটাই মগের মুল্লুক হয়ে গেছে। যার যা খুশি করছে। আগে ভাড়া নিত ৫০০ টাকা, কিন্তু আজকের টিকেটের দাম‌ই নিচ্ছে ৭০০ টাকা করে। অথচ ঈদের আরও এক সপ্তাহ বাকি,” ক্ষোভের সঙ্গে বলেন বাহার।

ঈদযাত্রার শুরুতেই ভোগান্তির অভিযোগও করলেন তাহিরা সুলতানা নামে একজন শিক্ষক।

ঢাকার উত্তরার তানজিমুল উম্মাহ মাদ্রাসার এই শিক্ষক জানান, সাতক্ষীরার কলারোয়ায় যেতে কে লাইন পরিবহনের শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বাসের অগ্রিম টিকেট কিনেছিলেন তিনি। বেলা ১২টায় সেই বাস ছাড়ার কথা থাকলেও ৫টা পর্যন্ত বাস আসেনি।

“সকালে আমাকে ফোন করে জানিয়েছে যে, এসি বাস নষ্ট, নন এসিতে যেতে হবে। সেই বাস নাকি ৩টায় ছাড়বে। এজন্য ৩টা থেকে এখানে বসে আছি। বাসের দেখা নেই।”

তবে হানিফ পরিবহনের যাত্রীরা বললেন, এখন পর্যন্ত ঠিক সময়েই ছাড়ছে এই কোম্পানির বাস।

তাদের কাউন্টার মাস্টার মামুনুর রশিদ  বলেন, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সব বাস ঠিক সময়ে ছেড়ে যাচ্ছে।

“এখন মোটামুটি ভিড় আছে। ছুটি অনেক দিনের বলে যাত্রীদের চাপ খুব বেশি নেই। যাত্রীদের চাপ কালকে বাড়বে মনে হয়। আর রাস্তায় এখন পর্যন্ত কোনো ঝামেলা নেই।”

শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার শামীম আহমেদ জানান, “আমরা আশা করেছিলাম, আরও বেশি যাত্রী হবে। কিন্তু সেই হিসেবে যাত্রী নেই। আজ কিছু যাত্রী যাচ্ছে। কাল থেকে ভিড় হবে মনে হয়।”

মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে যাত্রীদের খুব একটা ভিড় হয়নি বলে জানিয়েছেন বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম।

তিনি  বলেন, “আমরা তো আশা করেছিলাম, আজ থেকেই যাত্রীদের ভিড় হবে। কিন্তু সে রকম যাত্রী তো আজ আসছে না।”

দুপুরের পর কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে যাওয়া ট্রেনে যাত্রীদের মোটামুটি ভিড় ছিল বলে জানিয়েছেন ওই স্টেশনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম।

“আজ অনেকেই পরিবারের লোকজনকে ট্রেনে তুলে দিয়েছেন। দুপুরের পর থেকেই স্টেশনে যাত্রীদের ভিড় বেড়েছে। কাল আরও বেশি যাত্রী হবে মনে হয়।”

Pin It