লেনদেন করলে সাজা হবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানেরও

image-524358-1645834761

জাল টাকা লেনদেন ও সরবরাহের দায়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানেরও সাজা হবে। এ ধরনের অপরাধ প্রমাণে নেওয়া হবে প্রশাসনিক ব্যবস্থা, দেওয়া হবে আর্থিক দণ্ড। ব্যবস্থা গ্রহণ করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কারেন্সি বিভাগ। আর ব্যক্তিপর্যায়ে প্রস্তুত, দেশ ও বিদেশে সরবরাহ, বহন ও পাচারের দায়ে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। পাশাপাশি জাল টাকা প্রস্তুত সংক্রান্ত ফোনালাপ ও টেলিফোন রের্কড ফাঁস হলে আদালতে তা সাক্ষ্যপ্রমাণ হিসাবে গ্রহণযোগ্য হবে।

এসব বিধান রেখে একটি ‘খসড়া বিল’ চূড়ান্ত করা হয়েছে। যা পাশের জন্য শিগগিরই যাচ্ছে জাতীয় সংসদে। সেখানে এটি পাশের পর চূড়ান্ত আইন হিসাবে কার্যকর হবে। এর আগে আইনটি প্রণয়নের ক্ষেত্রে মন্ত্রিসভায় অনুমোদনসহ সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

খসড়াতে বলা হয়-কোনো ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা মুদ্রা লেনদেন ও সরবরাহ কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান জাল মুদ্রা সরবরাহ করলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কারেন্সি বিভাগ অভিযোগ দায়ের করবে। অপরাধ প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ ও জরিমানা আরোপ করা হবে। তবে জরিমানা বা প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার ১৪ কার্য দিবসের মাথায় অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান পুনর্বিবেচনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের কাছে আবেদন করতে পারবে। এক্ষেত্রে পর্ষদের সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত বলে গণ্য হবে।

খসড়া বিলে উল্লেখ করা হয়, জাল টাকা প্রতিরোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গর্ভনরকে প্রধান করে জাল মুদ্রা প্রতিরোধসংক্রান্ত জাতীয় কমিটি গঠন করা হবে। ওই কমিটি একটি সেল গঠন করবে। সেই সেলের প্রধান হবে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। পাশাপাশি ডিপার্টমেন্ট অব কারেন্সি ম্যানেজমেন্টের অধীনে একটি তথ্য ভাণ্ডারও গড়ে তোলা হবে। এটি ব্যবহার হবে জাল টাকা প্রতিরোধসংক্রান্ত কাজে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তথ্য ভাণ্ডার ব্যবহার করতে পারবে। সেখানে জাল মুদ্রা বাহক, প্রস্তুতকারী, ব্যবহারকারী ও উপকরণের তথ্য থাকবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য জানতে পারলে তথ্য ভাণ্ডারে জানাতে পারবে। তবে এ সংক্রান্ত যে কোনো তথ্য প্রয়োজনে জাতীয় কমিটি এবং সেলকে সরবারহ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সূত্র আরও জানায়, আইন প্রণয়নের পর জাল মুদ্রা প্রস্তুতে ব্যবহারিত কাগজ, রাসায়নিক দ্রব্য, কালি, যন্ত্রপাতিসহ যে কোনো উপকরণ, উৎপাদন, ক্রয়-বিক্রয়, সরবরাহ, আমদানি ও রপ্তানি নিষিদ্ধ করে গ্যাজেট জারি করবে সরকার।

অপরাধের ধরনের বলা হয়, কোন ব্যক্তি জেনে মুদ্রা জালকরণের যে কোনো অংশ সম্পাদন, ক্রয়-বিক্রয়, ব্যবহার ও আসল মুদ্রা বলে লেনদেন করলে আইনের আওতায় পড়বে। এছাড়া জাল মুদ্রা প্রস্তুতের কোনো যন্ত্রপাতি ক্রয়-বিক্রয়, উৎপাদন সামগ্রী প্রস্তুত, আমদানি-রপ্তানি, নিজের দখলে রাখা হলে তা অপরাধ হবে।

পাশাপাশি জাল নোট বিদেশে এবং বিদেশ থেকে দেশে পাচার, সরবরাহ ও পরিবহণ, তৈরিসংক্রান্ত ফাইল, অডিও, ভিডিও ক্লিপ সংরক্ষণের দায়ে অপরাধী হবেন। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অপরাধীর যাবজ্জীবন সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত বা এক কোটি টাকার অর্থ দণ্ডে দণ্ডিত হবে। অনাদায়ে অতিরিক্ত ৫ বছর কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।

এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের বাতিলকৃত বিকৃত মুদ্রা বাজারজাতকরণ বা লেনদেন করলে ১২ বছরের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড ভোগ করতে হবে। অর্থ অনাদায়ে আরও ৫ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। জেনেশুনে জাল ও আসল মুদ্রাসংক্রান্ত কোনো গুজব ছড়ানো হলে ১০ বছরের সশ্রম বা বিনাশ্রম এবং ১০ লাখ টাকা অর্থ দণ্ডে দণ্ডিত, অনাদায়ে আরও ৫ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।

এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া পুরোনো কোনো প্রকার মুদ্রার মুনাফা অর্জন, প্রতারণা বা অন্য যে কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে দেশি বা বিদেশি মুদ্রা কেনাবেচা করা যাবে না। করলে অনধিক ৫ বছরের সশ্রম বা বিনাশ্রম এবং ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থ দণ্ড, অনাদায়ে আরও ৩ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৮ থেকে হালনাগাদ জালনোট সংক্রান্ত প্রায় সাড়ে ৫ হাজার মামলা হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ মামলাই ২০১৫ সালের আগে দায়েরকৃত। ২০১৫ সালের পর গত ৬ বছরে মামলা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩০০। জালনোটের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে একটি ব্যাংকের চার কর্মকর্তাসহ দশজনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে এর আগে জাল নোটবিরোধী অভিযানে পাঁচ বছরে গ্রেফতার হয়েছে চক্রের ছয় হাজারের বেশি সদস্য। যাদের অধিকাংশই জামিনে মুক্ত।

Pin It