শুভ জন্মদিন প্রিয় লেখক

zafor-iqbal-231219-05
কোনো বইয়ের ফ্ল্যাপে লেখক পরিচিতিতে তার চশমার ফাঁক দিয়ে তাকানো দুই চোখ আর ঠোঁটের ওপর বিশাল জায়গা জুড়ে থাকা গোঁফ দেখে হয়তো মনে হতে পারে মুহম্মদ জাফর ইকবাল একজন রাশভারী মানুষ। কিন্তু বইমেলায় প্রায়ই দেখা যায় হাসিমুখে তিনি অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর আবদার মিটিয়ে বইয়ের ওপর অটোগ্রাফ দিয়ে যাচ্ছেন, ছবি তুলছেন।

দেশের অনেক কিশোর-কিশোরীকে বইমুখী করেছেন মুহম্মদ জাফর ইকবাল। সাপ্তাহিক বিচিত্রায় তার প্রথম বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ‘কপোট্রনিক ভালোবাসা’ প্রকাশিত হয়। এরপর ১৯৭৬ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম গ্রন্থ ‘কপোট্রনিক সুখদুঃখ’। এ লেখা জনপ্রিয়তা পেলে তার হাত ধরে রচিত হয় অনেক বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী। তার বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী হয়ে উঠে তুমুল জনপ্রিয়।

ছোটদের জন্য লিখতে থাকেন দুই হাত ভরে। বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর পাশাপাশি লিখেছেন বহু কিশোর উপন্যাস। এক দল কিশোরের নানান অ্যাডভেঞ্চার কিংবা মুক্তিযুদ্ধের রোমাঞ্চকর গল্প তার উপন্যাসের উপজীব্য। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘হাতকাটা রবিন’, ‘দীপু নাম্বার টু’, ‘দুষ্টু ছেলের দল’, ‘আমার বন্ধু রাশেদ’, ‘আমি তপু’, ‘গাব্বু’, ‘ইস্টিশন’, ‘গ্রামের নাম কাঁকনডুবি’, ‘সাইক্লোন’ সহ নানা বই। তার ‘টুনটুনি ও ছোটচাচ্চু’ সিরিজটিও দারুণ জনপ্রিয়। ‘আমি তপু’, ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ পড়ে অনেকে চোখের জল ফেলেছে, ‘দীপু নাম্বার টু’ পড়ে আবার রোমাঞ্চে বুঁদ হয়েছে অনেকে।

মুক্তিযুদ্ধকে মনে লালন করেন তিনি। ১৬ ডিসেম্বর ‘জয় বাংলা’ স্লোগান শুনতে পাওয়া তার জীবনের সবচেয়ে আনন্দময় মুহূর্ত। ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ মুক্তিযুদ্ধ নিয়েই লেখা। ‘দীপু নাম্বার টু’ আর ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ এ দুটি উপন্যাসকে চলচ্চিত্রেও রূপদান করা হয়েছে।

এছাড়া ‘ট্রাইটন একটি গ্রহের নাম’, ‘প্রজেক্ট নেবুলা’, ‘পৃ’, ‘প্রডিজি’, ‘রুহান রুহান’, ‘ক্রেনিয়াল’, ‘রিটিন’, ‘ত্রাতিনা’ সহ বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী তার লেখা। পদার্থবিজ্ঞান ও গণিতকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে লিখেছেন নানা বই। পড়াশোনাটাকে সবসময় আনন্দময় করে তুলতে চান তিনি। ‘গণিতের মজা, মজার গণিত’, ‘একটুখানি বিজ্ঞান’, ‘আরও একটুখানি বিজ্ঞান’, ‘সহজ ক্যালকুলাস’ ‘দেখা আলো না দেখা রূপ’, ‘পদার্থবিজ্ঞান প্রথম পাঠ’। গণিতের নানা সমস্যা ও সমাধান সংবলিত বইও লিখেছেন তিনি। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘নিউরনে অনুরণন’ ও ‘নিউরনে আবারো অনুরণন’। পত্রিকায় নিয়মিত কলামও লিখেন তিনি। সেখানে তুলে ধরেন বাংলাদেশকে নিয়ে ও আগামী প্রজন্ম নিয়ে তার স্বপ্নের কথা।

এ তো গেল লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবালের কথা। তিনি একজন শিক্ষক ও গবেষকও। সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন তিনি। তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক্স প্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্বেও ছিলেন। ২০১৮ সালে এ দায়িত্ব থেকে অবসর নেন তিনি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিলেন। এরপর তিনি ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি অর্জন করে বেল কমিউনিকেশনস রিসার্চে ১৯৮৮ সাল থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত গবেষক হিসেবে কাজ করেছেন।

এ কীর্তিমান ১৯৫২ সালের ২৩ ডিসেম্বর সিলেটে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার বড় ভাই হুমায়ুন আহমেদ বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক এবং ছোট ভাই আহসান হাবীব কার্টুনিস্ট। তার বাবা মুক্তিযুদ্ধের সময় মারা যান।

Pin It