শোবিজ পাড়ায় ক্রিকেট

Untitled-21-5d0a58428956c-5d0b58403ca50

লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়ে বীরদর্পে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। বিশ্বকাপের মঞ্চে একের পর এক বিজয়গাথা রচনা করছেন তারা। শিরোপার লড়াইয়ে দেশের খেলোয়াড়রা নতুন ইতিহাসের জন্ম দেবেন- এ প্রত্যাশা নিয়ে তাদের সমর্থনে পাশে আছেন কোটি বাঙালি। বিভিন্ন অঙ্গনের তারকারাও উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন ক্রিকেটারদের। প্রিয় দল নিয়ে তারকাদের প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেছেন

প্রতিপক্ষের ছুড়ে দেওয়া একেকটি বল যেন অগ্নিগোলা। তবু বীরযোদ্ধার মতোই তা প্রতিহত করে যাচ্ছেন বাংলার দামাল ছেলেরা। এ যেন ক্রিকেট ব্যাট নয়, একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধার হাতে ধরা রাইফেল। স্বাধীন দেশের মানচিত্র ছিনিয়ে আনতে যে রাইফেল গর্জে উঠেছিল বারবার। তেমনি করেই বিপক্ষ দলের বিরুদ্ধে জয় ছিনিয়ে আনতে ক্রিকেট ব্যাটকেই তারা যেন রাইফেলে রূপান্তরিত করেছেন। এ তো গেল ব্যাটিংয়ের কথা। এবার বোলিংয়ের কথা যদি বলি, তাহলে বলতে হবে, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার মতো সব ধরনের অস্ত্র আছে বাংলাদেশ দলের। স্পিন কিংবা পেস- যে ধরনের বোলিংই হোক, তা যেন প্রতিপক্ষের কাছে হয়ে উঠছে গ্রেনেড কিংবা কামানের গোলা। তাই এ যেন খেলা নয়, হয়ে উঠেছে যুদ্ধের ময়দান। পার্থক্য কেবল একটাই, বিজয়ী হওয়ার পর চিৎকার, হৈচৈ, ঢাকঢোল বাজিয়ে যতটা উল্লাসে মেতে উঠছেন সমর্থকরা, ঠিক ততটাই আবেগী কান্নায় ভিজিয়ে চলছেন দু’গাল। বিদেশ বিভুঁইয়ে পা রেখেও বাঙালিরা তাই খুঁজে নিচ্ছেন স্বদেশের সোঁদা মাটির ঘ্রাণ। যে জন্য প্রতি ইনিংসের প্রতিটি ওভারের ঘটনাগুলো ফ্রেমবন্দি হয়ে আটকা পড়ছে হৃদয়ের ক্যানভাসে।

বিশ্বকাপের গত পাঁচ আসরের চেয়ে এবারের আসর নিয়ে যেন প্রত্যাশাও বেড়ে গেছে। কারণ একটাই, টানা কয়েক বছর জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা। ক্রিকেটাররা এরই মধ্যে প্রমাণ করেছেন, বিশ্বের যে কোনো দলকে হারানোর ক্ষমতা আছে তাদের। অবশ্য এসব কথা নতুন করে না বললেও চলে। সবাই জানেন, বাংলাদেশ বিজয়ের সাফল্যগাথা রচনা করে চলছে অনেকদিন ধরে। তাই ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে অনুষ্ঠিত এবারের ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশ সাফল্যের নতুন রেকর্ড গড়বে- এ আশা আমরা করতেই পারি। কণ্ঠশিল্পী আগুনের মুখেও এমন প্রত্যাশার কথাই শোনা যায়। তিনি বলেন, ‘কোন দল কয়টা বিশ্বকাপ খেলেছে বা শিরোপা জিতেছে- এই হিসাব-নিকাশ মাথায় রাখার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। সামর্থ্যের সবটুকু যদি উজাড় করে দেওয়া যায়- তাহলে আমরা ভালো ফল পাব- এতে কোনো সন্দেহ নেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে খেলা ম্যাচটাই হতে পারে এ কথার বড় প্রমাণ। প্রথম দশ ওভার থেকে জয়ের আভাস দিয়েছেন দেশের খেলোয়াড়রা। ক্রিকেটে প্রতিনিয়ত নাটকীয় ঘটনা ঘটে। খেলার মোড় ঘুরে যেতেও সময় লাগে না। কিন্তু এ দিন আমরা প্রমাণ করেছি, সব নাটকের অবসান ঘটবে জয় ছিনিয়ে আনার মধ্য দিয়ে এবং আমরা তা পারব। এই দৃঢ় মানসিকতা ধরে রাখতেই আমরা কখনও পিছিয়ে পড়ব না।’ আগুনের এ কথার রেশ ধরে অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী বলেন, ‘অভিজ্ঞতা যেমন আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়, তেমনি লড়াই করে যাওয়ার সাহস জোগায়। আমরা এর আগে পাঁচটা বিশ্বকাপে খেলেছি।

প্রতি আসরেই প্রমাণ করেছি, আগের চেয়ে আমরা পরিণত। যে জন্য এবার আরও ভালো কিছু করে দেখাব- এ বিশ্বাস শুরু থেকেই ছিল। প্রথম খেলায় যখন দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে দিল- তখনই অনুমান করেছি, কোনো দল বাংলাদেশের কাছে সহজে পার পাবে না। বড় আসরের বড় ঘোড়া শুধু অন্য দলগুলোই নয়, আমরাও। যদিও দ্বিতীয় ম্যাচে আমরা নিউজিল্যান্ডের কাছে পরাজিত হয়েছি, তবু সেটাকে আমি পরাজয় বলতে চাই না। কারণ খেলার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আমাদের লড়াই থেমে থাকেনি। যা কিছু ভুলত্রুটি ছিল তা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলার পর প্রতিটি খেলোয়াড় শুধরে নিয়েছেন। সেটাই দেখিয়ে দিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। এমন জয় সত্যিই আগে কখনও দেখিনি। এ আসরে এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের কোনো দলই তিন শতাধিক রানের পাহাড় টপকে জয় ছিনিয়ে আনতে পারেনি। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এবার তা করে দেখাল। সেই সঙ্গে এক ধরনের হুঁশিয়ারিও দিয়ে দিল, আমরা আছি, থাকব টুর্নামেন্টের শেষ পর্যন্ত।’

আসলেই কি আমরা টুর্নামেন্টের শেষ পর্যন্ত এমন লড়াকু খেলা চালিয়ে যেতে পারব? চঞ্চল চৌধুরীর কথার রেশ ধরে যখন এ প্রশ্ন করা হলো, তখন এক মুহূর্ত বিলম্ব না করে কোনাল বলে উঠলেন- ‘কেন নয়, আমরা টুর্নামেন্টের শেষ পর্যন্ত আশায় বুক বাঁধব। একটা সময় ছিল, যখন একটি-দুটি জয়ের জন্য আমরা রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ দেখতাম। এখন তো সেই নবীন অবস্থা আমাদের নেই। আমরা অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকার মতো বিশ্বকাপজয়ী দলগুলোর পাশাপাশি দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ডসহ প্রতিটি দলকেই হারিয়েছি। সিরিজ জিতেছি বেশ কয়েকটি। একাধিক দলকে হোয়াইটওয়াশ করার রেকর্ডও আছে আমাদের। তাহলে আমরা পিছিয়ে আছি কোন দিক থেকে বলুন? ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস বিশ্বকাপে আমাদের শুরুটা যেমন দুর্দান্ত হয়েছে, তেমনই শেষটাও হবে স্মরণীয় করে রাখার মতো। আমার এ কথা আর কেউ মানুক না মানুক, আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি।’ উপস্থাপক মারিয়া নূরও একই রকম আত্মবিশ্বাসের কথা বলেছেন। তার কথায়, “নিয়মিত বাংলাদেশের খেলা দেখতে দেখতে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়েছে, আমরা এখন বড় প্রতিটি দলের সমতুল্য। বিশ্বকাপ জিততে না পারলেও ধারাবাহিক সাফল্যের মধ্য দিয়ে জয় করেছি কোটি মানুষের হৃদয়। খেলার আগে প্রতিদিন যখন বিভিন্ন দলকে নিয়ে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করি, তখন তাদের কথার সঙ্গে নিজের মতের মিল খুঁজে পাই। আর বাংলাদেশ যখন বড় কোনো জয় পায়, তখন কথার সত্যতা নিয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ থাকে না।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের ম্যাচের কথাই বলি। বিশাল এই জয় নিয়ে কতটা উচ্ছ্বসিত ছিলাম- তা কথায় বলে বোঝাতে পারব না। পরদিন মাছারাঙা টিভির ‘এক্সপার্ট প্রেডিকশন’ অনুষ্ঠানেও বাংলাদেশের এ সাফল্য নিয়ে একনাগাড়ে কথা বলে গেছি। অথচ সে দিন ছিল ইংল্যান্ড বনাম আফগানিস্তানের ম্যাচ। তারা কেমন খেলবে না খেলবে নিয়ে যতটা না আলোচনা হয়েছে, তারচেয়ে বেশি কথা হয়েছে সাকিব আর লিটন দাসের খেলা দুর্ধর্ষ ইনিংস নিয়ে। দেশের প্রতি এই যে ভালোবাসা তা লুকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। যদিও অনুষ্ঠান করার সময় নিরপেক্ষ থাকতে হয়, কিন্তু নিজ দেশের খেলার সময় সেটা কোনোভাবেই সম্ভব হয় না। এটা দোষের বলেও মনে করি না। কেননা অন্যান্য দেশের অনুষ্ঠানগুলোতেও দেখি, নিজের দেশ নিয়েই তারা বেশি আলোচনা করেন। আসলে আবেগের জায়গাটা এমনই। তা কোনোভাবেই লুকিয়ে রাখা যায় না।” অভিনেত্রী স্বাগতাও বাংলাদেশের বড় জয় নিয়ে ভীষণ উচ্ছ্বসিত। তিনি বলেন, ‘গত আসরে আমরা কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিলাম। এবার টুর্নামেন্টের ধরন বদলে গেছে। তাই সরাসরি সেমিফাইনালে যেতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ দলের এখনও সে সুযোগ ফুরিয়ে যায়নি। কোন দল কত শক্তিশালী, সেসব হিসাবের মধ্যে না রেখে নিজেদের সেরা খেলা দেখাতে হবে। আর সেটা করতে পারলেই আমার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব। আমার মতো এই চাওয়া কোটি বাঙালির। যদিও আমরা ইংল্যান্ড গিয়ে আমাদের এই প্রত্যাশার কথা খোলোয়াড়দের জানাতে পারছি না। কিন্তু আমার ধারণা- মাশরাফি, সাকিব বাহিনী বাঙালির এমন প্রত্যাশার কথা ঠিকই অনুভব করতে পারছে। তা না হলে ইংল্যান্ডের সঙ্গে পরাজয়ের পর এভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারত না।’ স্বাগতার মতো একই রকম ধারণা অভিনেত্রী শানারৈ দেবী শানুর।

তিনি বলেন, ‘কখনও হাল ছেড়ে দেওয়ার মতো দল নয় বাংলাদেশ। আমরা বীরের জাতি। জানি ঠিক কখন কীভাবে লড়াই করতে হবে। যদিও ক্রিকেট একধরনের প্রতিযোগিতা, তারপরও এটা আমাদের কাছে ধ্যান-জ্ঞানে পরিণত হয়েছে। অনেকে বলেন, ক্রিকেট আমাদের কাছে শুধু খেলা নয়, খাওয়া, ঘুম, স্বপ্ন দেখার মতো নিত্যদিনের বিষয়। এই খেলা নেশার মতোই আমাদের মোহিত করে রাখে। তাই বিশ্বকাপের এবারের আসরে বাংলাদেশ শুধু ভালো খেলাই দেখাবে না, এমন কিছু করে দেখাবে- যার কথা আমরা যুগ যুগ ধরে স্মরণ করে যাব।’ শানুর মতো একরকম প্রত্যাশা অভিনেত্রী পপির। তিনি বলেন, ‘বাঙালি জাতি একটু বেশি আবেগী। খেলার বিষয়ে তো কোনো কথাই নেই। মনে আছে, বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের সঙ্গে প্রথম জয় পাওয়ার পর আমরা কীভাবে উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেছিলাম। এরপর যখন পাকিস্তানকে হারাল তখন খুশিতে পাগল হয়ে যাওয়ার অবস্থা। দেশের আনাচে-কানাচে রঙ উৎসবে মেতে ওঠা থেকে শুরু ঢাকঢোল পিটিয়ে মিছিল করা, মিষ্টি বিতরণ- কত কিছুই না করেছি আমরা। সেই মুহূর্তগুলো কোনোভাবেই ভুলে যাওয়ার নয়। আবারও প্রতীক্ষায় এমনই বিস্ময়কর জয় দিয়ে উৎসবে মেতে ওঠার।’ পপির এ কথার রেশ ধরে আমরাও বলতে চাই, উৎসবে মেতে ওঠার জন্য শুধু তিনি বা অন্যান্য তারকাই নয়, পুরো দেশবাসী প্রতীক্ষার প্রহর গুনছেন। সবাই কান পেতে আছেন চার-ছক্কার হৈচৈ শোনার জন্য। স্বপ্ন দেখছেন, আগের সব রেকর্ড ভেঙে ইংরেজ ভূখণ্ডে বাংলাদেশের বিজয়নিশান উড়িয়ে দেওয়ার। এখন শুধু স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার অপেক্ষা।

Pin It