সমাজের সবার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিতে কাজ করার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের আইনি সহায়তাকে তৃণমূলে ছড়িয়ে দেওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন।
রাজধানীর একটি হোটেলে রোববার জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবসের অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমরা চাই প্রতিটি মানুষ ন্যায়বিচার পাক। সেই ব্যবস্থাটা যাতে নেওয়া হয়, সেটা আপনার নেবেন। আমরা চাই না আমরা যেমন বিচার না পেয়ে কেঁদেছি আর কাউকে যেন এভাবে না কাঁদতে হয়। সকলে যেন ন্যায়বিচার পায়।
“আমরা চাই, মামলার দীর্ঘসূত্রতা কমাতে হবে। কারাগারে এখনও অনেকেই আছে। কি কারণে যে জেলে সে জানে না। তাদের দোষটা কি তাও তারা জানে না। কি করে আইনগত সহায়তা তারা পাবে সেটাও জানে না। এই বিষয়টা দেখার জন্য আমি ইতিমধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছি।”
এসিডদগ্ধ, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা নারী, প্রতিবন্ধী, পাচারকৃত নারী বা শিশু, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীসহ আর্থিকভাবে অসচ্ছল, সহায়-সম্বলহীন এবং নানা আর্থ-সামাজিক কারণে বিচার পেতে অক্ষম নাগরিকদের সম্পূর্ণ সরকারি খরচে আইনগত সহায়তা দেওয়ার কথা বলেন শেখ হাসিনা।
“সরকারি আইন সহায়তা কার্যক্রম বৈষম্য দূর করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। তৃণমূল পর্যায়ে এই কাজের বিস্তার ঘটিয়ে আমরা স্থায়ী প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে চাই, যেন আমাদের দেশের সকলে ন্যায়বিচার পায়। এক্ষেত্রে আশা করি সকলেই আমাদের সহায়তা করবে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা যারা অসহায়, দরিদ্র তাদের সহায়তা করছি এটা ঠিক। কিন্তু অন্যায়ের শিকার অনেক সময় অর্থশালী সম্পদশালী পরিবারও হয়ে থাকে। বিশেষ করে যদি বাবা মা মারা যায় অনেক সময় মেয়েরা সম্পত্তির যে উত্তরাধিকার…অনেক সময় মেয়েরা বঞ্চিত হয়, সম্পত্তি তারা পায় না। ভাইয়েরা দিতে চায় না। অনেক সময় সম্পদশালী পরিবারের ভেতর অমানবিক আচরণ আমরা দেখতে পাই। মানুষের নিষ্ঠুরতার শিকার মানুষই হয়। এই যে সামাজিক অবিচারটা হয় এদিকেও আমাদের বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।”
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনগত সহায়তা কমিটি গঠিত হয়েছে এবং সুপ্রিম কোর্টেও অসহায়, দুস্থ বিচারপ্রার্থীরা সরকারি আইনিসেবা পাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, গত দশ বছরে তিন লাখ ৯৩ হাজার ৭৯০ জনকে সরকারি খরচে আইনগত সহায়তা দেওয়া হয়েছে। একই সময়ে এ কার্যক্রমের আওতায় মোট এক লাখ ৬৬৮টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে।
লিগ্যাল এইড অফিসের সফলতার কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে গত চার বছরে প্রি-কেইস ও পোস্ট-কেইস মিলিয়ে মোট ১৭ হাজার ৯২৯টি এডিআর বা আপস মধ্যস্থতার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং এর মধ্যে ১৬ হাজার ৫১৩ জন বিচারপ্রার্থী শান্তিপূর্ণভাবে আপস-মীমাংসার সুফল ভোগ করেছেন।
মামলা দীর্ঘসূত্রতা ও জট কমাতে অধঃস্তন আদালতে বিচারক নিয়োগ, নতুন নতুন আদালত, ট্রাইবুন্যাল স্থাপনসহ প্রয়োজনীয় পদ সৃষ্টি ও নিয়োগ, উচ্চতর প্রশিক্ষণসহ সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিতে সরকারের উদ্যোগ এবং ই-জুডিসিয়ারি প্রকল্পের কথাও বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।