সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে পুরান ঢাকার কেমিক্যালের মজুদ

chakbazar-5c717c1e124b4

পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ আগুন ৬৭ জনের প্রাণ কেড়ে নেওয়ার পর এলাকাটির বাসাবাড়িতে রাখা কেমিক্যালের মজুদ সরিয়ে নেওয়া শুরু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।

শনিবার দুপুরে চুড়িহাট্টার ওয়াহেদ মঞ্জিলের আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকা গুদামের কেমিক্যাল অপসারণের মধ্য দিয়ে এই কার্যক্রম শুরু করেন ডিএসসিসি মেয়র সাঈদ খোকন। ওই সময় এ ধরনের গুদাম বন্ধে বাড়ি মালিকদের সতর্ক করে দেন তিনি।

২০১০ সালে পুরান ঢাকার নিমতলীতে ভয়াবহ আগুনে ১২৪ জনের প্রাণহানির পর সিটি করপোরেশন বাসাবাড়ি থেকে কেমিক্যালের গুদাম উচ্ছেদ শুরু করে; কিন্তু এক পর্যায়ে তা থেমে যায়। গত বুধবার চুড়িহাট্টায় আবারও ভয়াবহ আগুনে প্রাণহানির পর কেমিক্যালের গুদাম অপসারণ শুরু করল সিটি করপোরেশন।

মেয়র সাঈদ খোকন ওয়াহেদ মঞ্জিলের আন্ডারগ্রাউন্ডের গুদামটি পরিদর্শন করে বলেন, এর ভেতর বিস্ফোরক রয়েছে, এটি অবৈধ। এখানে যেসব কেমিক্যাল রয়েছে তা অপসারণ করা হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে পুরান ঢাকার সব কেমিক্যালের গুদাম ও কারখানা উচ্ছেদের কাজ শুরু হলো। যতক্ষণ পর্যন্ত এমন গুদাম-কারখানা পাওয়া যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত অভিযান চলবে।

তিনি বলেন, গত সোমবার তিনি কেমিক্যাল গুদাম উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছিলেন। ব্যবসায়ীরা সময় চেয়ে অনুরোধ করায় তা সাময়িক বন্ধ রাখেন। এর মধ্যে বুধবারই ঘটে গেল ভয়াবহ ঘটনা।

আর কোনো ছাড় না দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, প্রতিটি বাড়িতে অভিযান চালানো হবে। সিটি করপোরেশনের অভিযানের সময় কারও বাড়িতে অবৈধ কেমিক্যালের মজুদ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গুদামের মালিকের সঙ্গে বাড়ির মালিককেও আইনের আওতায় নেওয়া হবে।

সাঈদ খোকন বলেন, ঘিঞ্জি গলির ভেতর বাসা-বাড়িতে লুকিয়ে গুদাম তৈরি করা হয়। পুলিশ প্রশাসন বা সিটি করপোরেশনের পক্ষে এটা সার্বক্ষণিক নজরদারি করা সম্ভব হয় না। এ জন্য বাড়ির মালিকদের সতর্ক থাকতে হবে। প্রত্যেক পাড়া-মহল্লার পঞ্চায়েত কমিটি, নানা সংগঠন ও তরুণদের সচেতন হতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সচেতন হতে হবে যাতে কেউ বাসাবাড়িতে গুদাম গড়ে তুলতে না পারেন। এরপরও কেউ কেমিক্যাল গুদাম তৈরি করলে সিটি করপোরেশনের কন্ট্রোল রুমে জানানোর অনুরোধ করেন মেয়র। এ ছাড়া নিকটস্থ থানাতেও অভিযোগ করার পরামর্শ দেন তিনি।

মেয়রের এমন ঘোষণার সময় ঘটনাস্থলে চকবাজার এলাকার অনেক বাড়ির মালিক ও ব্যবসায়ী উপস্থিত ছিলেন। ওই সময় তারা বলতে থাকেন, আগুন লেগেছে গ্যাস সিলিন্ডার থেকে। আগে গ্যাস সিলিন্ডারের মান ঠিক করতে বলেন। এক পর্যায়ে স্থানীয় শতাধিক লোক ‘পাইপ লাইনে গ্যাস চাই’ ও ‘গ্যাস সিলিন্ডার বন্ধ কর’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। মেয়র তাদের থামিয়ে দিয়ে বলেন, একসঙ্গে সব হয় না। ধীরে ধীরে সব সমস্যার সমাধান করা হবে।

শনিবার বিকেলে চকবাজার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মুরাদ জানান, সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে ওয়াহেদ মঞ্জিলের নিচে থাকা গুদাম থেকে কেমিক্যালগুলো কেরানীগঞ্জের ঝিলমিল প্রকল্প এলাকায় নিয়ে রাখা হচ্ছে।

গত বুধবারের আগুনের পর শুক্রবার সকালে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ওয়াহেদ মঞ্জিলের আন্ডারগ্রাউন্ডে ঢুকে সারি সারি রাসায়নিকের ড্রাম ও বস্তার স্তূপ দেখতে পান। আগুন সেখানে পৌঁছলে পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর হতো জানিয়ে আঁতকে ওঠেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরাও। তবে গুদামে থাকা রাসায়নিকের মালিক কে বা কারা– শনিবার পর্যন্ত পুলিশ বা সিটি করপোরেশন তা জানায়নি।

Pin It