সাত দিনে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বাড়ল ২০ টাকা

image-82210-1566589046

মাত্র ৭ দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি আমদানিকৃত পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২০ টাকা। আর দেশি পেঁয়াজে বেড়েছে ১৫ টাকা। যা রীতিমতো অবিশ্বাস্য! সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) তাদের গতকাল শুক্রবারের বাজারদরের প্রতিবেদনেও পেঁয়াজের দাম বাড়ার এ তথ্য তুলে ধরে।

এদিকে কোরবানির ঈদের পর হঠাৎ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দাম লাগামহীনভাবে বাড়তে থাকায় বিপাকে পড়েছে ভোক্তারা। আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ভারতের মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক ও মধ্য প্রদেশসহ পেঁয়াজের বড়ো সরবরাহকারী রাজ্যগুলোতে বন্যা হওয়ায় পেঁয়াজের আমদানি কমে গেছে। তারা চাহিদামতো পেঁয়াজ দিচ্ছে না। অথচ আমদানিকৃত পেঁয়াজের প্রায় পুরোটাই ভারত থেকে আমদানি করা হয়। তবে ভোক্তাদের অভিযোগ, সরবরাহ সংকটের কথা বলে ব্যবসায়ীরা হু হু করে পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছে।

এদিকে ভারতীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম তাদের দেশে সৃষ্ট বন্যাসহ বিভিন্ন কারণে পেঁয়াজ সরবরাহ সংকটের কথা উল্লেখ করে নতুন করে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির রপ্তানি মূল্য আরোপের ইঙ্গিত দিয়েছে। আর তা হলে পেঁয়াজের দাম আরো বাড়তে পারে।

রাজধানীর পেঁয়াজের পাইকারিবাজার শ্যামবাজার, কাওরানবাজার, দিনাজপুরের হিলি বন্দরের আড়তগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত কয়েকদিন ধরে লাগামহীনভাবে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা জানান, হিলির আড়তগুলোতে ঈদের আগে পাইকারিতে যে পেঁয়াজ ২০ থেকে ২২ টাকা দরে বিক্রি হয়, তা এখন ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজ আমদানি কমে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান।

রাজধানীর কাওরানবাজারে গতকাল এক পাল্লা (৫ কেজি) পেঁয়াজ বিক্রি হয় ২৪৫ থেকে ২৫০ টাকা। খুচরাবাজারে ভালোমানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। টিসিবি জানায়, গতকাল খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আমদানিকৃত ও দেশি পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৫৫ টাকা দরে বিক্রি হয়। অথচ এক সপ্তাহ আগে আমদানিকৃত পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৩৫ টাকা ও দেশি পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হয়। সরকারের এই সংস্থাটির হিসেবে এক মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি আমদানিকৃত পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশ ও দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ।

কাওরান বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী আমজাদ বলেন, আমদানিকৃত পেঁয়াজের দাম বাড়ায় দেশি পেঁয়াজের দামও বাড়ছে। এছাড়া এখন পেঁয়াজের মৌসুম না হওয়ায় কৃষকের কাছেও পেঁয়াজ নেই। ভারতের টাইমস অব ইন্ডিয়া, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানায়, দেশটির মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটকে বন্যা হওয়ায় পেঁয়াজ উৎপাদন মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে। এছাড়া সময়মতো মৌসুমি বৃষ্টিপাত না হওয়ায় পেঁয়াজের আবাদ শুরু করতে দেরি হয়েছে। এর প্রভাবও পড়েছে সেদেশের খুচরাবাজারে। এশিয়ায় পেঁয়াজের সবচেয়ে বড়ো পাইকারি বাজার ভারতের লাসালগাঁও। লাসালগাঁও অ্যাগ্রিকালচার প্রডিউস মার্কেট কমিটি (এপিএমসি) জানায়, গত তিন সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশ। তবে ব্যবসায়ীরা যদি তাদের মজুতকৃত পেঁয়াজ ছেড়ে দেয় তাহলে এ সংকট থাকবে না। ইতিমধ্যে ভারত সরকার হাতে থাকা ৫০ হাজার টন পেঁয়াজের মজুদ বাজারে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

উল্লেখ্য, এর আগে জুলাইয়ের শুরুতে দেশে হু হু করে পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করে। সেসময় এক মাসের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। দেশি পেঁয়াজ সর্বোচ্চ ৫০ টাকা ও আমদানিকৃত পেঁয়াজ ৪৫ টাকা পর্যন্ত ওঠে। তখন ব্যবসায়ীরা জানান, ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানিতে প্রণোদনা তুলে নেওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পরে বাণিজ্যমন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কঠোর নজরদারিতে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা কমে আসে। এখন আবার হু হু করে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম।

হিলি বন্দরের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মোর্শেদুর রহমান জানান, ভারতের মহারাষ্ট্র, কর্নাটকসহ বিভিন্ন প্রদেশে বন্যার কারণে পেঁয়াজের আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এজন্য সেখানে পেঁয়াজের সংকট চলছে। এছাড়া ঈদের কারণে হিলি বন্দর ৮ দিন বন্ধ থাকায় দেশে কোনো পেঁয়াজ আমদানি হয়নি। সব মিলিয়ে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, পেঁয়াজ আমদানি করার জন্য নতুন অনেক এলসি খোলা হয়েছে। সরবরাহ স্বাভাবিক হলেই পেঁয়াজের দাম কমে যাবে।

Pin It