হেফাজতের কমিটি নিয়ে ‘ছেলেখেলা’ হচ্ছে, বললেন শফীপুত্র মাদানি

anas-madani-180920-02

হেফাজতে ইসলামের নতুন কমিটি নিয়েও আপত্তি জানিয়েছেন সংগঠনটির প্রয়াত আমির শাহ আহমদ শফীর অনুসারীরা।

শফীর ছেলে সংগঠনটির সাবেক প্রচার সম্পাদক আনাস মাদানী বলেছেন, আগের মতোই গঠনতন্ত্র ‘লঙ্ঘন’ করে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কমিটিতে আনাস মাদানি না থাকলেও শফীর বড় ছেলে মো. ইউসুফের নাম রয়েছে। তবে তিনি বলেছেন, তার সম্মতি ছাড়াই কমিটিতে তার নাম দেওয়া হয়েছে।

এক যুগ আগে প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই কওমিমাদ্রাসা ভিত্তিক সংগঠন হেফাজতের আমির ছিলেন চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক শাহ আহমদ শফী, সদস্য সচিব ছিলেন জুনাইদ বাবুনগরী।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে আহমদ শফী মারা যাওয়ার পর নানা আলোচনার মধ্যে গত ১৫ নভেম্বর সম্মেলনে জুনাইদ বাবুনগরীকে আমির করে হেফাজতের ১৫১ সদস্যের নতুন কমিটি গঠিত হয়েছিল।

হাটহাজারী মাদ্রাসার কর্তৃত্ব নিয়ে বিরোধে বাবুনগরীকে গত বছরের শুরুর দিকে মাদ্রাসা ছাড়তে হয়েছিল। বছরের মাঝামাঝিতে আবার শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে মাদ্রাসায় শফীর কর্তৃত্ব খর্ব হয়। মৃত্যুর আগের দিন শফী পদত্যাগে বাধ্য হওয়ার পাশাপাশি তার ছেলে আনাস মাদানিকে মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কার হতে হয়।

এদিকে মাদ্রাসার কর্তৃত্বে ফেরা বাবুনগরীর আমিরের দায়িত্ব নেওয়া তখনও মেনে নিতে পারেননি শফী সমর্থকরা।

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনে বিরোধিতা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে হেফাজতের কর্মসূচি সহিংসতায় গড়ালে চাপের মুখে গত ২৫ এপ্রিল কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন বাবুনগরী।

তারপর একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন হলেও দেড় মাস পর সোমবার ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে ৩৩ সদস্যের নতুন কমিটির ঘোষণা দেন হেফাজতের মহাসচিব নুরুল ইসলাম জিহাদী।

হেফাজতের নতুন কমিটি ঘোষণা

বাবুনগরীকে আমির পদে রেখে গঠিত এই কমিটিতে খুব একটা পরিবর্তন আসেনি। শুধু সহিংসতার মামলায় গ্রেপ্তার মামুনুল হকসহ বিভিন্ন নেতাদের বাদ দেওয়া হয়েছে।

আনাস মাদানি। ফাইল ছবিআনাস মাদানি। ফাইল ছবিনতুন কমিটিতেও স্থান না পাওয়া আনাস মাদানি বলেন, “কমিটি ঘোষণার আগে আমাদের সাথে কোনো আলোচনা করেনি। দাওয়াতও দেয়নি। আলোচনার প্রয়োজন আছে বলে তারা মনে করছে না।”
‘অরাজনৈতিক’ বলার পরও এই কমিটিতে রাজনৈতিক দলের নেতারা রয়েছেন বলে দাবি করেন শফীপুত্র।

তিনি আরও বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে দেশজুড়ে যে সহিংসতা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে সেসব মামলার আসামিদেরও কমিটিতে রাখা হয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে হেফাজতে ইসলামের মত দেশব্যাপী একটি সংগঠন কাজ করতে পারবে না।”

হেফাজতের কমিটি কীভাবে গঠিত হবে, তার দিক-নির্দেশনা সংগঠনের গঠনতন্ত্রে রয়েছে জানিয়ে সাবেক প্রচার সম্পাদক আনাস মাদানী বলেন, “আগেও (নভেম্বরে) যে কমিটি করা হয়েছিল, সেখানেও নিয়ম মানা হয়নি। তারাই বিলুপ্ত করেছেন। তারাই আবার নতুন কমিটি করেছেন। এবারও কাউন্সিল না ডেকে তা করা হয়েছে। সবাইকে না জানিয়ে এভাবে কমিটি করা হেফাজতে ইসলামের গঠনতন্ত্রে নেই।”

এই প্রক্রিয়ায় কমিটি ঘোষণাকে ‘ছেলে খেলা’ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, “এটা নতুন কিছু না। দেশবাসী আগেও তাদের চালাকি দেখেছে। এখনও জানছে।”

কমিটিতে বড় ভাই মো. ইউসুফের থাকার বিষয়ে আনাস মাদানি বলেন, “আমার বড় ভাইকে তারা টেলিফোন করেছিল। উনি সম্মতি দেওয়া ব্যতীত উনাকে কমিটিতে রেখেছেন। উনি তা প্রত্যাখ্যা্ন করেছেন।”

মো. ইউসুফ বলেন, “আমার সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ করলে আমি বলেছি আমি কোনো কমিটিতে থাকব না। আমার সম্মতি ছাড়াই নাম দিয়েছে। এখন এটা নিয়ে আমি প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছি।

“আমি কোনোদিন কোনো রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক সংগঠনে ছিলাম না। আমি ওই মেজাজের মানুষই না। আমি আছি মাদ্রাসা (রাঙ্গুনিয়ায় একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন) নিয়ে এবং আমার আম্মাকে নিয়ে। কেন আমাকে নিয়ে এসব টানাহেঁচড়া জানি না।”

“আপনারা সবাইকে জানান, আমি কোনো কমিটিতে নেই। হেফাজতের শুরু থেকে আমি কোনো কমিটিতে ছিলাম না,” বলেন তিনি।

হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক কার্যক্রম বিষয়ে সামগ্রিকভাবে চিন্তা করছেন জানিয়ে আনাস মাদানি বলেন, “সময় মতো আপনাদের জানাব।”

আহমদ শফীকে মৃত্যুর পথে ঠেলে দেওয়ার অভিযোগে যে মামলা হয়েছে, তাতে হেফাজতের বর্তমান আমির বাবুনগরীসহ সংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতা আসামি।

শফীর মৃত্যু: তদন্তে বাবুনগরীসহ ৪৩ জনের দায় পেল পিবিআই

জুনাইদ বাবুনগরী। ফাইল ছবিজুনাইদ বাবুনগরী। ফাইল ছবি
শফীর অনুসারী আরেক নেতা মঈনুদ্দিন রুহীও একই কথা বলেন, যিনি শফী আমির থাকার সময় যুগ্ম মহাসচিবের পদে থাকলেও পরে আর কমিটিতে স্থান পাননি।

রুহী বলেন, “এটা অবৈধ ও অসাংবিধানিক কমিটি। জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য পকেট কমিটি করা হয়েছে। জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন এতে নেই।

“আহ্বায়ক কমিটির নামে তারা ফটিকছড়ি সমিতি করেছিল। এখন পুরনো বউকে নতুন শাড়ি পড়াইছে। বাংলাদেশের মানুষ তাদের চিনে।”

মঈনুদ্দিন রুহী বলেন, “আমরা চেয়েছিলাম হেফাজতে ইসলামে সমান্তরালভাবে সবাই থাকবে। তারা দেশের ওলামায়ে কেরামদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে চায়। এই কমিটি করে কোনো একটা রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে তারা।

“অথচ তারা আগে বলেছিল রাজনৈতিক কাউকে রাখবে না। ৩৩ জনের মধ্যে ১৩ জনই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা।”

১০ জুন বৃহস্পতিবার ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে হেফাজতের প্রয়াত আমির শাহ আহমদ শফীর জীবনী ও বর্তমান সঙ্কট উত্তরণ বিষয়ক আলোচনা সভা আয়োজন করা হয়েছে জানিয়ে রুহী বলেন, “সেখানে আমরা ভবিষ্যতের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা করব। তারপর সবাইকে জানাব।”

Pin It