১২ সংগঠনের সমন্বয়ে ঢাবিতে ‘সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্র ঐক্য’ গঠিত

NAY_8424-5e0616e8d16ee

দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে শিক্ষার্থীদের ওপর সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনের ‘শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন-নিপীড়ন’ রুখতে ১২টি সংগঠনের সমন্বয়ে ‘সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্র ঐক্য’ গঠিত হয়েছে। সন্ত্রাস-দখলদারিত্ব ও সহিংসতামুক্ত গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস গড়ে তোলাই এই জোটের মূল লক্ষ্য বলে জানানো হয়েছে।

শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন।

নবগঠিত এই জোটে রয়েছে- বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ, ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র ফেডারেশন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (মাক্সবাদী), বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলন, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, নাগরিক ছাত্র ঐক্য, স্বতন্ত্র জোট ও ছাত্র গণমঞ্চ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আখতার বলেন, ‘সন্ত্রাস ও দখদারিত্ব জারি রেখে ক্যাম্পাসগুলোকে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে (নির্যাতন শিবিরে) পরিণত করা হয়েছে। প্রশাসন এই সন্ত্রাসীদের মদদ দিয়ে এর বৈধতা দিয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন। শিক্ষাঙ্গনের এমন দমবদ্ধ ও অগণতান্ত্রিক পরিস্থিতি উচ্চশিক্ষার লক্ষ্য অর্জনে বাধা। এটা মত প্রকাশের স্বাধীনতা ভূলণ্ঠিত করছে। এমন পরিস্থিতিতে আমরা সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্র ঐক্য গঠন করেছি।’

তবে ছাত্রলীগ নবগঠিত এই জোটকে আমলে নিতে চাচ্ছে না। ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য সমকালকে বলেন, ‘কিছু ছাত্র সংগঠন ছাত্রদের ইস্যু বাদ দিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যু নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। তাদের এই জোট নিয়ে আমাদের কোনো মন্তব্য নেই। ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার জন্য কাজ করে যাবে।’

লিখিত বক্তব্যে আখতার আরও বলেন, ডাকসু ভিপির ওপর মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ও ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর যথাযথ দায়িত্ব পালন করেননি। ভিপিকে রক্ষা না করে তিনি সন্ত্রাসীদের মদদ দিচ্ছেন। তিনি ছাত্রদের নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার জন্য সিসিটিভি লাগানো হয়েছে অথচ সেই সিসিটিভির ফুটেজ তিনি রক্ষা করতে পারেন না। তার পদত্যাগ দাবি করছি।

এ প্ল্যাটফর্মে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল অংশ নিতে চাইলে তাদের নেওয়া হবে কি-না জানতে চাইলে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল কাদেরী জয় বলেন, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন ছাত্রদলও ছাত্রলীগের মতো সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত ছিল। দুটি সংগঠন একে অপরে পরিপূরক। এ প্ল্যাটফর্মে কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনের ঠাঁই হবে না।

সংবাদ সম্মেলনে চার দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। এগুলো হলো- ভিপি নুরুসহ সব শিক্ষার্থীর ওপর হামলাকারীদের স্থায়ী বহিস্কার ও আইনানুগ বিচার, ব্যর্থতার দায়ে প্রক্টরের অপসারণ, ভিপি নুরুসহ অন্যদের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও হামলায় আহতদের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন এবং ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, হলে হলে দখলদারিত্ব ও গেস্টরুম-গণরুমে নির্যাতন বন্ধ করা।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি মেহেদি হাসান নোবেল, ছাত্র ফেডারেশন ঢাবির সভাপতি আবু রায়হান খান, ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক বিন ইয়ামিন মোল্লা, শামসুন্নাহার হল সংসদের ভিপি তাসনিম আফরোজ ইমি প্রমুখ।

( ডাকসুর ভিপিসহ বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেন পরিষদের নেতাকর্মীরা )

মামলা প্রত্যাহার দাবিতে বিক্ষোভ : এদিকে ডাকসুর ভিপিসহ বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন পরিষদের নেতাকর্মীরা। বিকেলে মিছিলটি ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। সমাবেশ থেকে পরিষদের নেতাকর্মীরা অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।

সমাবেশে সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, ‘সেদিনের (২২ ডিসেম্বর) হামলায় আমাদের কারও হাত ভেঙে গেছে, কারও পা ভেঙে গেছে। আমাদের মামলা এখনও নেওয়া হয়নি। পুলিশ বলছে, তাদের করা মামলার সঙ্গে আমাদের অভিযোগ সংযুক্ত করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘নির্যাতন করে আমাদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে, আইসিইউতে পাঠানো হয়েছে। আবার আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এটা দুঃশাসনের নমুনা।’

এ সময় বিক্ষোভকারীরা ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেব রক্ত’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘শিক্ষা সনজিত, এক সাথে চলে না’, ‘মামলা করে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না’, ‘নির্লজ্জ প্রশাসন, ধিক্কার ধিক্কার’, ‘হামলা করে মামলা, মানি না মানবো না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

Pin It