২১ আগস্টের হামলা ১৫ আগস্টের ধারাবাহিকতা মাত্র

image-709038-1692606707

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সংঘটিত নির্মম হত্যাযজ্ঞ মানবসভ্যতার ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অশুভ শক্তির মিলিত চক্রান্তে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছাসহ পরিবারের সবাইকে হত্যা করা হয়। বিদেশে অবস্থান করায় সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। বঙ্গবন্ধু হত্যার দুই বছর আগে চিলির সালভাদর আলেন্দ, পরবর্তীকালে প্রহসনের বিচারের নামে সাদ্দাম হোসেন এবং মোয়াম্মের গাদ্দাফী হত্যাকাণ্ডেও আন্তর্জাতিক চক্রান্তকারীদের ভূমিকা দৃশ্যমান। তবে এসব হত্যাকাণ্ডে তাদের পরিবার টার্গেটে পরিণত হয়নি। ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডে বঙ্গবন্ধুর দশ বছরের শিশুপুত্র শেখ রাসেল, শেখ কামালের নবপরিণীতা স্ত্রী সুলতানা কামাল খুকী, শেখ জামালের স্ত্রী পারভীন জামাল রোজীসহ বেশ কয়েকজন নারী-শিশুও ঘাতকদের নিষ্ঠুরতা থেকে রক্ষা পায়নি। হত্যার পরিকল্পনাকারীদের লক্ষ্য ছিল সুনির্দিষ্ট। জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পেছনে মোটা দাগে দুটি উদ্দেশ্য ছিল। প্রথমত, বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক রক্তধারা থামিয়ে দেওয়া, দ্বিতীয়ত, একটি বৃহৎ শক্তির বিরোধিতাকে উপেক্ষা করে বিশ্বের মানচিত্রে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক আদর্শের ভিত্তিতে জন্ম নেওয়া নতুন রাষ্ট্রটিকে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের বিপরীত ধারায় ফিরিয়ে নেওয়া এবং একে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসাবে প্রমাণ করা। শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের পরিকল্পনার বিপরীতে ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ স্লোগানের মাধ্যমে পাকিস্তানি ভাবধারায় দেশকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা এখনো অব্যাহত রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও চায়নি এ অঞ্চলে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদভিত্তিক অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম একটি রাষ্ট্রের জন্ম হোক। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ভারতের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা যুক্তরাষ্ট্রের মাথাব্যথার একটি বড় কারণ ছিল।

এখানে বলা প্রয়োজন, তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রের বিষয়টি জানতেন, যা ২০০৫ সালে মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফশুলৎজ-এর একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। বঙ্গবন্ধু সরকারের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন ২০০৯ সালে এটিএন বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন-একাত্তরের পরাজিত শক্তি আন্তর্জাতিক চক্রান্তে বিজয়ের পর থেকেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। এহেন ষড়যন্ত্রের মূল কারণ ছিল-বাঙালি জাতীয়তাবাদের আদর্শকে ধারণ করে মুক্তি ও স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধু তার রাজনৈতিক জীবনের অর্ধেকের বেশি সময় কারারুদ্ধ থেকেও কখনো আপস করেননি। ছয় দফা আন্দোলনের সময় ইয়াহিয়া খান শেখ মুজিবকে আন্দোলন থেকে বিরত রাখার জন্য তৎকালীন মন্ত্রী ফজলুল কাদের চৌধুরীর মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীর পদ ও অর্থের প্রলোভন দেখালে বঙ্গবন্ধু এবং ফজিলাতুন নেছা মুজিব তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব বলেছিলেন-ভাই, আপনারা তাকে কারাগারে পাঠান, আপত্তি নেই, কিন্তু শেখ মুজিবকে মোনায়েম খাঁ বানাবেন না।

অন্যদিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে নানাভাবে গড়ে তুলেছিলেন। তিনি বাস্কেটবল ও ক্রিকেট খেলতেন। আধুনিক ও জনপ্রিয় আবাহনী ক্লাব তিনি গড়ে তোলেন। সেতার বাজাতেন। ছায়ানটে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। বন্ধু ও সহকর্মীদের নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন ‘স্পন্দন শিল্পীগোষ্ঠী’। বহুমাত্রিক প্রতিভা এবং অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতার অধিকারী ছিলেন তিনি। যুদ্ধোত্তর দেশ গড়ার কাজে নিজেকে আত্মনিয়োগ করেন। তরুণ সম্প্রদায়ের মধ্যে সাংস্কৃতিক জাগরণ তিনি সৃষ্টি করেছিলেন। পারিবারিক শিক্ষা, সততা, নিষ্ঠা এবং দেশপ্রেম মুজিব পরিবারের প্রতিটি সদস্যের চরিত্রের সহজাত বৈশিষ্ট্য হিসাবে প্রতিভাত হয়। তাই হত্যা পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত ঘাতকরা ভেবেছিল-শুধু শেখ মুজিবকে হত্যার মধ্যদিয়ে মুজিব আদর্শকে হত্যা এবং বাংলাদেশকে পাকিস্তানি ভাবধারায় ফিরিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। মুজিব পরিবারের একজনও যদি জীবিত থাকে, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ সেখান থেকে অঙ্কুরিত ও বিকশিত হবে। সেজন্য ঘাতক দল সপরিবারে মুজিবকে হত্যার মধ্য দিয়ে একটি আদর্শের মূলোৎপাটন ও ক্রমঅগ্রসরমান একটি রাষ্ট্রের আধুনিক চরিত্রকে উলটো দিকে ধাবিত করতেই নির্মমভাবে এ হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত করেছিল।

বঙ্গবন্ধু হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চরিত্র পালটে দেওয়ার প্রাথমিক পরিকল্পনা তাদের ছিল। এর প্রমাণ মেলে, কিলিং মিশন শেষে মেজর ডালিমের নেতৃত্বে শাহবাগের বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার যে খবর পরিবেশন করা হয় তার মাধ্যমে। ‘বাংলাদেশ বেতার’-এর নাম পরিবর্তন করে পাকিস্তানের আদলে ‘রেডিও বাংলাদেশ’ নামকরণ করা হয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রে পাকিস্তানি সংস্কৃতির অপচর্চা শুরু হয়, যা জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়ার শাসনামল পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।

পরিকল্পিত এ হত্যাযজ্ঞের সবচেয়ে জঘন্যতম দিক হলো-প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে যুক্ত খুনিদের রক্ষার জন্য কুখ্যাত ‘ইনডেমনিটি’ বা ‘দায়মুক্তি’ অধ্যাদেশ জারি। খুনি-কুলাঙ্গার স্বঘোষিত ও অবৈধ রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদ ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধে কালো অধ্যাদেশটি জারি করে-যার মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা, হত্যাকাণ্ড সংঘটন, মার্শাল ল’ জারি এবং সংশ্লিষ্ট যে কোনো পদক্ষেপের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতা থেকে দায়মুক্তি প্রদান করা হয়। রুদ্ধ হয় বিচার চাওয়ার মৌলিক অধিকার। এখানেই শেষ নয়, খন্দকার মোশতাক খুনিদের দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে। কুখ্যাত ‘দায়মুক্তি অধ্যাদেশ’ ১৯৭৯ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে আইনে পরিণত করে সংবিধান সংযোজন করার মধ্য দিয়ে রাজনীতির মাঠে আবির্ভূত হওয়া জিয়াউর রহমান এ হত্যায় তার জড়িত থাকার প্রমাণ রেখেছেন বলা যায়।

১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর কারাভ্যন্তরে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেওয়া জাতীয় চার নেতাকে হত্যা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ধারাবাহিকতা। বঙ্গবন্ধু হত্যার এক সপ্তাহ পর ২৩ আগস্ট এ চার নেতাসহ আওয়ামী লীগের ২৩ শীর্ষ নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালি কারাগারে বন্দি শেখ মুজিবের অনুপস্থিতিতে জাতীয় চার নেতা পূর্ব নির্দেশনা মোতাবেক মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেন। ঘাতকরা বঙ্গবন্ধু হত্যার ধারাবাহিকতায় তাদেরও টার্গেট করে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত দেশি-বিদেশি চক্র ভেবেছিল-যদি পালটা অভ্যুত্থান হয়, তা আওয়ামী লীগের পক্ষে যাবে এবং এ চার নেতার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ রুখে দাঁড়াবে। তাই আওয়ামী লীগকে সম্পূর্ণ নেতৃত্বশূন্য করে রাজনৈতিকভাবে পঙ্গু করার জন্য ৩ নভেম্বরের জেল হত্যাকাণ্ড ঘটায়। সাংবাদিক অ্যান্থনি মাসকারেনহাস-এর মতে-মোশতাক এ ধরনের পালটা অভ্যুত্থানের আশঙ্কা থেকে তড়িঘড়ি করে জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। একটি কিলিং টিমও তৈরি করে রাখা হয়। দায়িত্ব দেওয়া হয় বঙ্গবন্ধুর প্রত্যক্ষ খুনি রিসালদার মোসলেম উদ্দিনকে। খন্দকার মোশতাক মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকিস্তানের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে একটি কনফেডারেশন গঠনের ষড়যন্ত্র করেছিল। মুজিবনগর সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মীরজাফর মোশতাক ও ষড়যন্ত্রকারীরা বাঙালির সবচেয়ে আবেগের জায়গাটিকে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। তা হলো বাঙালির প্রিয় নেতা শেখ মুজিব। তারা বলতে চেয়েছিল-বাংলাদেশ স্বাধীন হলে শেখ মুজিবকে পাওয়া যাবে না, তাকে পাকিস্তানি কারাগারে হত্যা করা হবে। সুতরাং, মুজিবকে জীবিত পেতে হলে কনফেডারেশন দরকার। আত্মবিশ্বাসী মুজিবনগর সরকারের নেতা ও দেশপ্রেমিক শক্তির দৃঢ়বিশ্বাস ছিল যে, ইয়াহিয়া খান বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সাহস করবে না। মোশতাকের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেয় মুজিবনগর সরকার।

খুনি মোশতাক দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারীদের নিয়ে অতি সংগোপনে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রাখে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সাড়ে তিন বছরের মাথায় মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে হত্যার জন্য বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে এবং জাতীয় চার নেতাসহ অন্যদের হত্যা করা হয়। মূলত ১৫ আগস্ট এবং তৎসংশ্লিষ্ট হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য ছিল সদ্য স্বাধীন এ জাতিকে আদর্শিকভাবে হত্যা করা। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার নয় দিনের মাথায় তৎকালীন সেনাপ্রধানকে হটিয়ে নিজেই সেনাপ্রধান বনে যান জেনারেল জিয়া। মুক্তিযোদ্ধা অফিসার ও সেনাসদস্যকে হত্যা করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা সেনাসদস্যদের জিয়ার টার্গেটে পরিণত হওয়ার কারণ ছিল ভিন্ন। এসব অফিসার ও সেনাসদস্য ছিলেন তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে বাধাস্বরূপ। হত্যাকাণ্ডের শিকার অফিসার ও সেনাসদস্যদের স্বজনরা লাশও ফিরে পাননি। জিয়াউর রহমান ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত খুন, গুম ও অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের বৈধতা দিয়ে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে আইনে রূপান্তর করেন। এ মানবতাবিরোধী আইনটি পরিণত হয় সংবিধানের অংশে। এভাবেই মোশতাক-জিয়ার মিলিত প্রচেষ্টায় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে শহিদের রক্তের আখরে লেখা সংবিধান মৌলিক অধিকার হরণকারী মানবতাবিরোধী ঢালে পরিণত হয়। মানুষের মৌলিক অধিকার হরণের এমন নজির পৃথিবীতে আর নেই। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার মধ্য দিয়ে কালো আইনটি ২১ বছর পর জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে বাতিল করার মাধ্যমে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে জাতি মুক্তি পায়। কিন্তু বিএনপি তার পূর্ব অবস্থান বজায় রেখে ১২ নভেম্বর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল বিল উত্থাপনের দিন সংসদ বয়কটসহ দেশব্যাপী হরতাল আহ্বান করে। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়।

জেনারেল জিয়ার উত্তরসূরিরা হত্যার ষড়যন্ত্রের রাজনীতি অব্যাহত রাখে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসভায় শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে যুদ্ধে ব্যবহৃত আর্জেস গ্রেনেড হামলা করা হয়। মুফতি হান্নান নামক এক হামলাকারীর জবাববন্দি থেকে জানা যায়-১৪ আগস্ট তারেক জিয়ার নেতৃত্বে হাওয়া ভবনে জামায়াতের তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদ, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর এবং পাকিস্তানপন্থি বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের উপস্থিতিতে গোপন এক বৈঠকে গ্রেনেড হামলার নীলনকশা প্রণয়ন করা হয়। দেওয়া হয় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার সর্বোচ্চ নিশ্চয়তা। ১৬ আগস্ট লুৎফুজ্জামান বাবরের বাসায় দ্বিতীয় বৈঠকে হামলার চূড়ান্ত রূপরেখা প্রণীত হয়। ১৮ আগস্ট তৎকালীন শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর বাসায় তৃতীয় বৈঠকে ‘হরকাতুল জিহাদ’ নামক জঙ্গি সংগঠনের হাতে তুলে দেওয়া হয় আর্জেস গ্রেনেড। জানা যায়, ২১ আগস্ট হামলার দিন বঙ্গবন্ধুর খুনি ফারুক ও রশীদ ঢাকায় অবস্থান করেছিল। কিলিং মিশন শেষে হামলাকারীদের নির্বিঘ্নে বিদেশে পালিয়ে যেতে সরকার সহযোগিতা করে। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট কিলিং মিশনের সদস্যরাও একই প্রক্রিয়ায় সুরক্ষা পেয়েছিল। এ থেকে প্রতীয়মান হয়-খুনি চক্র এক এবং অভিন্ন। তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাংলাদেশকে শেখ মুজিব ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ থেকে বিমুক্ত করে পাকিস্তানি ভাবধারায় ফিরিয়ে নেওয়া। চক্রান্ত এখনো অব্যাহত রয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা-২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট আবারও ক্ষমতায় এলে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাকারীদের দায়মুক্তি দেওয়া হতো।

১৫ আগস্টের হত্যাযজ্ঞের নৃশংসতা ও হত্যাকারীদের দায়মুক্তি দেওয়ার মধ্য দিয়ে বিচার পাওয়ার অধিকার যেভাবে হরণ করা হয়েছিল, এরকম নজির পৃথিবীর ইতিহাসে নেই। অথচ এ জঘন্যতম অপরাধ যারা সংঘটিত করেছিল, তাদের আদর্শের উত্তরাধিকার এবং চেতনার পতাকাবাহী দল এখনো বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরসূরি শেখ হাসিনাকে অব্যাহতভাবে ১৫ আগস্টের পুনরাবৃত্তির হুমকি দিয়ে চলেছে। জাতি মনে করে-১৫ এবং ২১ আগস্ট হত্যার পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্রের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িতদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে না পারার ব্যর্থতার কারণে খুনিরা এত বড় স্পর্ধা দেখাতে সাহস পায়। এরূপ ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে এবং আইনের শাসন সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে শক্তিশালী কমিশনের মাধ্যমে আগস্ট ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সবাইকে চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা সময়ের দাবি।

অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল : প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

Pin It