৩০ ডিসেম্বরঃ শোডাউন করবে বিএনপি সতর্ক থাকবে আ’লীগ

Untitled-14-5e026bc468e9c

আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছর পূর্তি। দিনটিকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে আখ্যায়িত করে ব্যাপক শোডাউন করতে চায় বিএনপি। তাদের জোটের শরিক জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, ২০ দলীয় জোটও একই ধরনের কর্মসূচি পালন করবে। দিনটিকে ‘কালো দিবস’ হিসেবে পালন করবে বাম দলগুলো। অন্যদিকে এদিন যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সতর্ক থাকবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। কোনোরকম অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা দেখা গেলে তা কঠোরভাবে প্রতিহত করতে সক্রিয় রাখা হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল মঙ্গলবার বলেন, জনবিচ্ছিন্ন আওয়ামী লীগ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর ভোটের আগেই অর্থাৎ ২৯ ডিসেম্বর রাতের আঁধারে ব্যালটে সিল মেরে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেছে। ভোটের অধিকারহারা সব শ্রেণি-পেশার মানুষের আজ নাভিশ্বাস উঠেছে। তিনি জানান, সারাদেশে সমাবেশের মাধ্যমে এ দিনটিকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করবেন তারা। একইসঙ্গে অবিলম্বে প্রশ্নবিদ্ধ এ নির্বাচন বাতিল করে দ্রুত নির্দলীয় সরকারের অধীনে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানাবেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ বলেন, বিএনপি ও এর সহযোগীরা আগেও অসংখ্যবার আন্দোলনের কথা বলে প্রতিবারই ব্যর্থ হয়েছে। জনগণের কোনো সমর্থনও পায়নি তারা। এবারও তারা কী করবে বা করতে পারবে, তা নিয়ে আওয়ামী লীগের মাথাব্যথা নেই। তবে সহিংসতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা হলে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর হস্তে সেটি মোকাবিলা করবে। আর আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করবে। রাজপথে সতর্ক অবস্থানে থেকে সহিংসতা ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতা করবেন দলের নেতাকর্মীরা।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘ভোট ডাকাতি ও কারচুপির নির্বাচন’ আখ্যায়িত করে আসছে বিএনপিসহ বিরোধী জোট। অবশ্য তাদের মতে, কৌশলগত কারণেই দল ও জোটের নির্বাচিত এমপিরা শপথ নিয়ে সংসদ অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু নির্দলীয়

সরকারের অধীনে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু পরিবেশে পুনর্নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন চলমান রয়েছে। দ্রুত একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায়ে জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে তারা।

এদিকে বিগত নির্বাচনকে ‘অবৈধ’ আখ্যায়িত করে দ্রুত পুনর্নির্বাচনের জোরালো দাবি নিয়ে বছরপূর্তির দিনে ঢাকাসহ সারাদেশে প্রতিবাদ সমাবেশ ও নেতাকর্মীদের কালো ব্যাজ ধারণ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশের দলীয় কার্যালয়গুলোতে কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অথবা নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। গত সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

জানা গেছে, গতকাল পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। অবশ্য এরইমধ্যে দলটির শীর্ষ নেতারা ঘোষণা দিয়েছেন- এখন থেকে আর সমাবেশের অনুমতির অপেক্ষায় থাকবেন না তারা। সামনের এই বড় কর্মসূচিতে প্রশাসন অনুমতি না দিলে বিএনপি কী করবে তা ওইদিনই দেখা যাবে বলে জানান নেতারা।

তবে দলীয় সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনের বছরপূর্তিতে রাজধানীসহ সারাদেশে বড় ধরনের শোডাউন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। বিএনপির পাশাপাশি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, ২০ দলীয় জোট ও বাম দলগুলোও একই দাবিতে দেশব্যাপী পৃথক কর্মসূচি পালন করবে। সব মিলিয়ে নির্বাচনের এক বছর পূর্তিকে সামনে রেখে প্রকারান্তরে সরকারবিরোধী দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে বড় আন্দোলনের প্রস্তুতি চালাচ্ছে বিএনপি। ইতোমধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের বাইরে বাম দল ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সংগঠনগুলো ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে তারা। পুনর্নির্বাচনের দাবিতে কঠোর আন্দোলনের ব্যাপারে আলোচনা ইতিবাচক বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশ না করে জোটের একজন নেতা জানান, বাম দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় অগ্রগতি হচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে আগামী ২৮ ডিসেম্বর আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জেএসডির জাতীয় কাউন্সিলে বাম নেতা জোনায়েদ সাকিসহ আরও কয়েকজন উপস্থিত থাকবেন। একইসঙ্গে ওই কাউন্সিলে কয়েকজন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীও উপস্থিত থাকবেন। ওই দিন জেএসডির কাউন্সিল থেকেও নতুন নির্বাচনের দাবিতে ‘নতুন বার্তা’ আসতে পারে। ৩০ ডিসেম্বরের কর্মসূচিতে তার প্রতিফলন ঘটতে পারে।

এদিকে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনকে ‘ভোট ডাকাতি ও জালিয়াতির নির্বাচন’ আখ্যা দিয়ে বর্ষপূর্তির দিনটিকে ‘কালো দিবস’ ঘোষণা করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। এই জোটের কর্মসূচিতে রয়েছে, জেলায় জেলায় কালো পতাকা হাতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ। কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে রয়েছে সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে কালো পতাকা হাতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল। ওইদিন দেশবাসীকে কালো পতাকা হাতে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানিয়েছেন জোট নেতারা। এই কর্মসূচিকে সফল করতে ইতোমধ্যে মাঠে নেমে পড়েছেন জোটভুক্ত বাম দলগুলোর নেতাকর্মীরা। গতকাল প্রচারপত্র বিলির মধ্য দিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছেন তারা।

সতর্ক আওয়ামী লীগ :৩০ ডিসেম্বর ঘিরে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ কোনো কর্মসূচি দেয়নি। তবে আগামী ৭ জানুয়ারি সরকারের বর্ষপূর্তি জাঁকজমকভাবে পালনের প্রস্তুতি রয়েছে ক্ষমতাসীন দলটির। গত বছরের এই দিনে টানা তৃতীয় মেয়াদে গঠিত আওয়ামী লীগ সরকার শপথ নিয়েছিল। ৭ জানুয়ারি বড় ধরনের সমাবেশের মাধ্যমে রাজধানীতে শোডাউনের পরিকল্পনা করছে তারা। সারাদেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়েও শোভাযাত্রা ও সমাবেশের মতো কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে।

সরকারের বর্ষপূর্তির এক সপ্তাহ আগে ৩০ ডিসেম্বর প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির প্রতিবাদ সমাবেশ ও কালো ব্যাজ ধারণের কর্মসূচিকে খুব বেশি আমলে নিচ্ছে না আওয়ামী লীগ। বাম গণতান্ত্রিক জোটের ‘কালো পতাকা মিছিল’ ও সমাবেশকেও তেমন একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না তারা। তবে বিএনপি ও বামজোটের কর্মসূচিকে ঘিরে নৈরাজ্য সৃষ্টির আশঙ্কাও একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না দলের নীতিনির্ধারক নেতারা। সেজন্য দলের নেতাকর্মীরা সতর্ক থাকবেন বলে জানিয়েছেন তারা। বিশেষ করে ঢাকা মহানগরসহ সব থানা-ওয়ার্ড নেতাকর্মীদের সর্বাত্মক সতর্ক অবস্থানে থাকার প্রস্তুতি নিতে বলা হচ্ছে। যে কোনো ধরনের সহিংসতার আভাস পাওয়া মাত্র নেতাকর্মীরা তা প্রতিরোধের চেষ্টা করবেন। তবে বিএনপি বা তার মিত্রদের কোনো রকম উস্কানির ‘ফাঁদে’ পা না দেওয়ার জন্যও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে নেতাকর্মীদের।

Pin It