কারাগারে খালেদা জিয়ার এক বছর

khaledazia-new-5c5cf9021f3ce

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাবাসের এক বছর আজ শুক্রবার পূর্ণ হচ্ছে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজা পেয়ে কারাগারে যান তিনি।

নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো কারাগারে বন্দি রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এ মামলায় হাইকোর্টের আপিলে সাজা বেড়েছে তার। গত ৩০ অক্টোবর তাকে ১০ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর তার আইনজীবী ও বিএনপি নেতারা বলেছিলেন, সপ্তাহ দুই-তিনের মধ্যেই তিনি জামিনে মুক্তি পাবেন। কিন্তু ৩৬ মামলার আসামি খালেদা জিয়া ৩৩টিতে জামিন পেলেও বাকি তিনটিতে পাননি। তাই তার মুক্তিও মেলেনি। খালেদা জিয়া শিগগির মুক্তি পাবেন- এমন সম্ভাবনার কথা তার আইনজীবীরাও আর বলতে পারছেন না। বিএনপি নেতাদের মতো তাদেরও অভিযোগ, সরকার তাকে আটকে রেখেছে আদালতকে ব্যবহার করে। এর আগে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এক বছর সাত দিন কারাগারে ছিলেন তিনি।

খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার পর হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচিতে যায়নি বিএনপি। তার মুক্তির দাবিতে সমাবেশ, অনশন, গণস্বাক্ষর, মানববন্ধনেই বিএনপির কর্মসূচি সীমাবদ্ধ ছিল। দলীয় প্রধানের কারাবন্দিত্বের বর্ষপূর্তিতেও কঠোর কোনো কর্মসূচি নেই এ দলের।

আজ বিকেলে রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে প্রতিবাদ সমাবেশ করবে বিএনপি। আগামীকাল শনিবার দেশব্যাপী পালন করবে প্রতিবাদ কর্মসূচি। এ ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন এ উপলক্ষে মানববন্ধন ও দোয়া-মিলাদের আয়োজন করেছে। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবীদের সংগঠন ‘গণতন্ত্র ও খালেদা জিয়া মুক্তি আইনজীবী আন্দোলন’ আজ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘কারামুক্তি বন্ধন’ এবং বাদ জুমা দোয়া-মিলাদের কর্মসূচি পালন করবে।

৩০ ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে তেমন উচ্চকণ্ঠ না হয়ে ভোটের রাজনীতিতে সরব হয়েছিল বিএনপি এবং দলটির নেতৃত্বাধীন দুটি জোট। কিন্তু নির্বাচনে ফল বিপর্যয়ের পরও তার মুক্তির দাবিতে এখনও কোনো কর্মসূচি নেয়নি বিএনপি। তবে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন জানান, আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচিও অব্যাহত রয়েছে।

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনের আগে থেকেই খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার অনুমতি চেয়ে আসছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা। কিন্তু এখনও অনুমতি মেলেনি। তবে আজ তার সঙ্গে দেখা করতে পরিবারের সদস্যদের কারাগারে যাওয়ার কথা রয়েছে।

জিয়া পরিবারের একজন সদস্য জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া কারাগারেই নামাজ, দোয়া-দুরুদ ও কোরআন পড়ে তার স্বামী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং তাদের ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুবার্ষিকী পালন করেছেন।

খালেদা জিয়ার স্বজনরা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও তিনি মনোবল হারাননি। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জয়ী বিএনপির ছয় এমপিকে শপথ নিতে বারণ করেছেন। মামলার হাজিরা দিতে এসে দল গোছাতে নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন আইনজীবীর মাধ্যমে।

গ্যাটকো মামলায় হাজিরা দিতে গতকাল বৃহস্পতিবার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে বিশেষ আদালতে খালেদা জিয়াকে হাজির করে পুলিশ। আদালতে প্রায় পুরো সময় নীরব ছিলেন তিনি। তার পাশে ছিলেন গৃহকর্মী ফাতেমা। তিনি শুরু থেকেই খালেদা জিয়ার সঙ্গে কারাগারে রয়েছেন।

আদালতে খালেদা জিয়া পুরো সময় ছিলেন হুইল চেয়ারে। তাকে গাড়ি থেকে এজলাস পর্যন্ত হুইল চেয়ারে করে আনা হয়। তার সঙ্গে কথা বলার পর বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি জানান, দলীয় চেয়ারপারসন জানিয়েছেন, তার শরীর ভালো যাচ্ছে না।

৭৪ বছর বয়সী খালেদা জিয়া বিভিন্ন রোগে ভুগছেন বলে জানিয়েছেন তার চিকিৎসকরা। গত বছরের ৬ অক্টোবর থেকে এক মাস তিনি বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তিনি চোখ ও হাত-পায়ের ব্যথায় ভুগছিলেন তখন। হাড়ের জোড়ায় ব্যথা এবং বাতের সমস্যাও রয়েছে তার। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া আর্থ্রাইটিসের ব্যথা ও ফ্রোজেন শোল্ডারের ব্যথায় হাত নাড়াচাড়া করতে পারেন না।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা উদ্বেগজনক। তিনি কারাবন্দি হওয়ার আগেই নানা অসুস্থতায় ভুগছিলেন। তার নিয়মিত চিকিৎসা প্রয়োজন।

খালেদা জিয়ার মামলার বিষয়ে তার আইনজীবীরা জানিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে মোট ৩৬টি মামলার চারটি এক-এগারোর সরকারের সময়ের। এ ছাড়াও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা পাঁচটি, নাশকতার ১৬টি, মানহানির চারটি, হত্যার তিনটি, মানহানিকর বক্তব্য দেওয়ার দুটি, রাষ্ট্রদ্রোহের একটি এবং ভুয়া জন্মদিন পালনের অভিযোগে আরেকটি মামলা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় গত ২৯ অক্টোবর বিচারিক আদালতে সাত বছরের সাজা হয়েছে তার। এ রায়ের বিরুদ্ধে গত ১৮ নভেম্বর হাইকোর্টে আপিল করেছেন খালেদা জিয়া।

Pin It