চলমান উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দল মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া মন্ত্রী-এমপিদের নামের তালিকা চেয়েছে আওয়ামী লীগ। ‘বিদ্রোহী প্রার্থীদের’ সহযোগিতাকারী দায়িত্বশীল নেতাদেরও তালিকা করা হচ্ছে। এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের। তারা তালিকা জমা দিলে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রোববার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকের পর ব্রিফিংয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, আগামী ৫ এপ্রিল দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক হবে। এতে দলের বিদ্রোহী এবং বিদ্রোহীদের পক্ষাবলম্বনকারীদের মন্ত্রী-এমপি-নেতাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে।
গত শুক্রবার দলের সভাপতিমণ্ডলীর বৈঠকেও এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তারই আলোকে রোববার সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে দলীয় প্রার্থীদের বিরোধিতাকারী মন্ত্রী-এমপি-নেতাদের নামের তালিকাসহ প্রতিবেদন তৈরির জন্য নিজ নিজ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
বৈঠকে আগামী অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় দলের জাতীয় সম্মেলন এবং তার আগেই ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত দলের তৃণমূল সম্মেলনগুলো শেষ করার বিষয়ে আলোচনা হয়। এ ছাড়া ২০২০ সালের ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ঘোষিত ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপনে দলীয় প্রস্তুতি নিয়েও আলোচনা হয়।
এ সময় তৃণমূল সম্মেলনগুলো শেষ করা, সারাদেশের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড তদারকি এবং সাড়ম্বরে ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপনে আটটি বিভাগের জন্য দলের আটটি টিমের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের নেতৃত্বে গঠিত এসব টিমে থাকবেন উপদেষ্টা পরিষদ ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ নেতারা। বিভাগীয় যুগ্ম ও সাংগঠনিক সম্পাদকরা কমিটিগুলো সমন্বয় করবেন। খসড়া এসব কমিটি কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে অনুমোদন পেলে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তুতি কার্যক্রম শুরু করবে।
এ প্রসঙ্গে মাহবুবউল আলম হানিফ জানান, দলের জাতীয় সম্মেলন নির্ধারিত সময় অক্টোবরেই হবে। এ জন্য বৈঠকে গঠিত আটটি বিভাগের আটটি কমিটির খসড়া টিম করা হয়েছে। কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় যাচাই-বাছাই এবং সংযোজন-বিয়োজনের পর টিমগুলো চূড়ান্ত করা হবে।
দেশে আবারও বাকশাল পদ্ধতি চালু হবে কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে হানিফ বলেন, এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগ নেয়নি। তবে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্যই একসময় বাকশাল করা হয়েছিল। আগামী পাঁচ বছর বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকবে। এ সময় অপ্রয়োজনীয় কোনো বিষয় টেনে আনার দরকার নেই।
রাজধানীর বনানীর এফ আর টাওয়ারের আগুন নিয়ন্ত্রণে সরকারি ব্যর্থতা সম্পর্কে বিএনপির অভিযোগকে সম্পূর্ণ মিথ্যাচার দাবি করে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বলেন, সরকার গত ১০ বছরে ফায়ার সার্ভিসের দ্বিগুণ উন্নতি করেছে। ক্ষেত্র বিশেষে এ উন্নতি তিনগুণ। এই অগ্নিকাণ্ডের পর ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা দক্ষভাবে উদ্ধার কাজ পরিচালনা করেছেন। গোটা জাতি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে।
২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের উন্নয়নে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের বিবরণ তুলে ধরে হানিফ বলেন, ফায়ার সার্ভিসের জন্য নতুন অনেক সরঞ্জাম কেনা হয়েছে। এরই মধ্যে ১৯৮টি ফায়ার সার্ভিস প্রকল্প চালু করা হয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে ফায়ার সার্ভিসকে আধুনিকায়ন করা হয়নি বলে একটি জনবিচ্ছিন্ন দলের নেতারা যে মিথ্যাচার করছেন, সে বিষয়ে তাদের কিছু বলার নেই।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের সাম্প্রতিক বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, নির্বাচনের জন্য পাঁচ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তখন নির্বাচন কমিশন (ইসি) নির্বাচন দেবে। ড. কামাল তাতে অংশ নেবেন বলে আশা করি। গত নির্বাচনে ড. কামালের নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় তাদের জনবিচ্ছিন্নতাই প্রমাণ হয়েছে। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন ওবায়দুল কাদেরের অনুপস্থিতিতে সম্পাদকমণ্ডলীর এ প্রথম বৈঠকের শুরুতেই তার জন্য দোয়া ও আশু আরোগ্য কামনা করা হয়।
মাহবুবউল আলম হানিফের সভাপতিত্বে এ বৈঠকে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন- অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, বিএম মোজাম্মেল হক, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ড. হাছান মাহমুদ, হাবিবুর রহমান সিরাজ, ফরিদুন্নাহার লাইলী, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, সুজিত রায় নন্দী, দেলোয়ার হোসেন, ডা. রোকেয়া সুলতানা, ড. শাম্মী আহম্মেদ, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, এসএম কামাল হোসেন, অ্যাডভোকেট এবিএম রিয়াজুল কবির কাওছার, মারুফা আক্তার পপি, আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।