প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাজেট নিয়ে সাধারণ মানুষ খুশি কিনা তা দেখতে হবে। এটা আমাদের ১১তম বাজেট। যতটুকু আমি বলেছি তার থেকে অনেক বেশি কিছু রয়েছে বাজেটে। এই বাজেট জনকল্যাণমূলক। বাজেট যাতে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়, সেজন্য সবাই কাজ করবে।’
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শুক্রবার বিকেলে আয়োজিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশে উন্নীত করা সরকারের লক্ষ্য; এসডিজি বাস্তবায়ন ও সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা সামনে রেখে বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এটাই সর্ববৃহৎ বাজেট জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকারের বিগত দুই মেয়াদে ১০ বছরের যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে তার মাধ্যমে জনগণের মাঝে আমাদের প্রতি আস্থা বেড়েছে। তার প্রতিফলন ঘটেছে গত ৩০ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে।’
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা ও পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট নিহতদের স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
দেশের বেকার যুবসমাজের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকারের লক্ষ্যমাত্রার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ৩ কোটি যুবকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। সে লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার।
কৃষিখাতে সরকারের ভর্তুকি-প্রণোদনা অব্যাহত থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন ফসলের উৎপাদন বাড়াতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও প্রণোদনা থাকবে। কৃষি ভর্তুকি, ঋণ ও কৃষিপণ্য রফতানির ক্ষেত্রে প্রণোদনাও থাকবে।
লিখিত বক্তব্য পাঠ করার পর প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন।
এই বাজেট অর্থনৈতিক অপশাসনের সুবিধাভোগীদের পক্ষে গেছে কি-না– এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যাদের মানসিকতা অসুস্থ তাদের কিছুই ভালো লাগে না। সব কিছুতেই তারা কিন্তু খোঁজে। তারা কী গবেষণা করেন আমি জানি না। একটা কিছু বলতে হবে। তাই বলেছে। এটা একটা অসুস্থতা। ভালো সমালোচনা করলে আমরা গ্রহণ করবো, আর মন্দ কথা বললে ধর্তব্যে নেব না।’
শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে সিপিডি বলেছে, প্রস্তাবিত আগামী অর্থবছরের (২০১৯-২০) বাজেট ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। যারা অর্থনৈতিক অপশাসনের সুবিধাভোগী, এই বাজেট তাদের পক্ষে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশেকে দারিদ্র্য মুক্ত করা, উন্নত করা, সমৃদ্ধশালী করা এবং স্বাধীনতার সুফল পাওয়ার লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আগে বাইরে গেলে বাংলাদেশকে কেউ চিনতো না। এখন আমাদের সবাই চেনে। এটাই আমাদের বড় পাওনা।’
আওয়ামী লীগের বিগত নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ কর্মসূচি বাস্তবায়নে পল্লী এলাকায় অবকাঠামো উন্নয়নে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, গ্রাম যেন উন্নত হয়, সেখানকার মানুষ যেন শহরের মানুষের সুবিধা পায়, সেজন্য আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ কর্মসূচির আলোকে পল্লী এলাকায় অবকাঠামো উন্নয়নে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে দেশজুড়ে ৫ হাজার ৫০০ কিলোমিটার নতুন সড়ক এবং ৩০ হাজার ৫০০ মিটার ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। সেজন্য এখাতে আগামী অর্থবছরে ৬৬ হাজার ২৩৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
কৃষিখাতে সরকারের ভর্তুকি-প্রণোদনা অব্যাহত থাকবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন ফসলের উৎপাদন বাড়াতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও প্রণোদনা থাকবে। কৃষি ভুর্তকি, ঋণ ও কৃষিপণ্য রফতানির ক্ষেত্রে প্রণোদনাও থাকবে।
তিনি জানান, নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে এবারের বাজেটে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবির প্রেক্ষিতে বন্ধ থাকা এমপিওভুক্তির কাজ শুরু হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবার স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। স্বাস্থ্য উন্নয়নের মাধ্যমে চিকিৎসা ও অন্যান্য সামাজিক সুবিধা নিশ্চিতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ৮টি মেডিকেল কলেজে নিউক্লিয়ার মেডিসিন ইনস্টিটিউট খোলা হবে।
দেশের প্রত্যেকটি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য কাজ চলছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা আমরা অর্জন করবো, সে লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার।’
রীতি অনুযায়ী প্রতিবার বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন অর্থমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অসুস্থ হওয়ায় এবার প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলন করেন শেখ হাসিনা। এর আগে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রীর হয়ে বাজেটের বক্তৃতার একাংশ পড়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এই ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা।
কয়েকদিন ধরেই অসুস্থ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অর্থমন্ত্রী হিসেবে তার প্রথম বাজেট বক্তব্যের শুরু থেকেই তিনি ছিলেন অস্বস্তিতে। এরই এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী নিজেই স্পিকারের অনুমতি নিয়ে বাজেট বক্তৃতার বাকি অংশ পড়া শুরু করেন। তবে বাজেটের পুরো বক্তব্য পাঠ করা হয়নি। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অপঠিত অংশ পঠিত বলে গণ্য করার ঘোষণা দিয়েছেন।
অর্থমন্ত্রী বৃহস্পতিবার হাসপাতাল থেকে সরাসরি সংসদের অধিবেশনে অংশ নেন। পরে সংসদ থেকে বেরিয়ে আবার হাসপাতালে চলে যান। সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অর্থমন্ত্রীর পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর বাজেট বক্তব্য পড়ে দেওয়ার ঘটনা এবারই প্রথম। সংসদের কার্যক্রমে যে কোনো মন্ত্রণালয়ের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা।
‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ: সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’ শীর্ষক এবারের বাজেটের আকার ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। এতে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ।