বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ নয়জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এবি সিদ্দিকীর নালিশি মামলা আমলে নিয়ে ঢাকার মহানগর হাকিম সত্যব্রত শিকদার এই আদেশ দেন।
তারেক রহমানসহ নয়জনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১০৯ ও ৫০৬ ধারায় মামলা করা হয়েছে। আদালতের পেশকার সিরাজুল ইসলাম বলেন, তারেক রহমানসহ নয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন এবি সিদ্দিকী। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে এই নয়জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।
এবি সিদ্দিকী এখন পর্যন্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ বিএনপির একাধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ১৬টির মামলা করেছেন। শুধু খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করেছেন ৫টি মামলা।
তারেক রহমান, মির্জা ফখরুল ছাড়াও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশারফ হোসেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, বুয়েটের বহিষ্কৃত শিক্ষক হাফিজুর রহমান রানা এবং ছাত্রদলের এমদাদুল হক ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।
মামলায় এবি সিদ্দিকী দাবি করেছেন, গত ২৩ জুলাই বুয়েটের সাবেক শিক্ষক হাফিজুর রহমান তাঁর বাসায় ডাকযোগে একটি চিঠি পাঠান। চিঠিতে বলা হয়, ‘এ বি সিদ্দিকী বিশ্ব মামলাবাজ। তুই বড় বাড়াবাড়ি করছিস। তোর মামলায় আমার জীবন নষ্ট হয়েছে। আমাদের মা খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে জেলখানায় বন্দী রেখে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করছিস। আমাদের নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক মামলা চালিয়ে যাচ্ছিস। হয়রানি করছিস। তোকে মৃত্যুর পরোয়ানা পাঠালাম। তোকেসহ তোর পরিবারের সবাইকে খুন করব।’
মামলায় এবি সিদ্দিক আরও বলেন, চিঠিতে হাফিজুর রহমান বলেন, ‘মনে রাখিস, আমি সেই হাফিজুর রহমান, যার নেতৃত্বে ২০১২ সালে বুয়েট অচল করে দিয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে ফেসবুকে দেওয়া পোস্টটি তুই কাজে লাগিয়ে আমার বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা করেছিস। মামলায় সাত বছর সাজা হয়েছে। দেশছাড়া করেছিস। ’
চিঠির বক্তব্য তুলে ধরে মামলায় এ বি সিদ্দিক দাবি করেন, ‘হাফিজুর রহমান লন্ডনে গিয়ে তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। গত সে মাসে তারেক রহমান আমাদের নেতাদের নির্দেশ দিয়েছিল, তোকে খুন করার জন্য। তাই আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছাত্রদলের ক্যাডার এমদাদুল হক তাঁর বাহিনীকে কোর্ট (আদালত) এলাকায় তোকে খুন করার জন্য পাঠিয়েছিল। কাকুতি-মিনতি করায় তারা তোকে শর্ত দিয়ে ছেড়ে দিয়েছিল। এক মাসের মধ্যে সব মামলা প্রত্যাহার করে নিবি। তুই মামলা তুলে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছিলি। কিন্তু কথা দিয়ে কথা রাখিসনি। আমাদের নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে ছিনতাই মামলা করেছিস।’
মামলার আরজিতে হাফিজুর রহমানের চিঠির বক্তব্য হুবহু তুলে ধরে এবি সিদ্দিকী বলেন, হত্যার হুমকির চিঠি পেয়ে তিনি হাতিরঝিল থানায় গত ২৪ জুলাই সাধারণ ডায়েরি করেছেন। তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
মামলার ব্যাপারে এবি সিদ্দিকী মঙ্গলবার বলেন, তাঁকে হত্যা করার হুমকি দিয়ে হাফিজুর রহমান চিঠি দিয়েছেন। ওই চিঠির বক্তব্য তুলে ধরেই তিনি তারেক রহমানসহ অন্যদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। আদালত তাঁর মামলা আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।
এ ব্যাপারে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, তারেক রহমান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অন্যরা জননেত্রী পরিষদের এবি সিদ্দিকীকে হত্যার হুমকি দেবেন তা মোটেও বিশ্বাসযোগ্য নয়। দীর্ঘদিন থেকে এবি সিদ্দিকী ব্যক্তিগত প্রচার-প্রচারণার জন্য বিএনপির খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা করে আসছেন। তিনি একজন মামলাবাজ।
মাসুদ আহমেদ তালুকদার আরও বলেন, এবি সিদ্দিকীর মামলাটি আইনিভাবে মোকাবিলা করা হবে।
এবি সিদ্দিকী জানান, এখন পর্যন্ত তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ বিএনপির একাধিক নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে ১৬টির মতো মামলা করেছেন। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করেছেন সর্বোচ্চ ৫টি মামলা।
দুর্নীতি এবং একুশে আগস্ট গ্রেনেড বোমা হামলার মামলায় দণ্ডিত তারেক রহমান লন্ডনে অবস্থান করছেন।