নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচয় আর আগামী দিনের উদ্ভাবন নিয়ে সেমিনার, আলোচনার মধ্য দিয়ে শনিবার শেষ হয়েছে তিন দিনের ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলা। সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ফাইভজির যে স্বপ্ন বাংলাদেশ দেখেছে, সেটি শিগগির বাস্তবে পরিণত হবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, সামনে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব আসছে। এর ব্যাপ্তি অনেক। কারণ চতুর্থ শিল্পবিপ্লব হচ্ছে নলেজ বেজড ট্রান্স-ফরম্যাশন বা জ্ঞানভিত্তিক রূপান্তর। এতে রূপান্তরিত শিল্প কারখানা পরিচালনা, প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রযুক্তি সবকিছুতে পরিবর্তন আসবে। এগুলো হবে ন্যানো টেকনোলজিতে, ফিনটেক, রোবটিপ, আইওটি, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ বিভিন্ন প্রযুক্তিতে।
তিনি বলেন, নতুন সময়ের প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ কম লাগবে, কিন্তু মস্তিস্কের ব্যবহার বেশি করতে হবে। এ কারণে শিল্প-উদ্যোক্তাদের এখন থেকেই ভাবতে হবে, মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে।
অনুষ্ঠানে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, তিন দিনের এই মেলায় তরুণদের যে বিপুল সাড়া পাওয়া গেছে, তা অভূতপূর্ব। এটা প্রমাণ করেছে তথ্যপ্রযুক্তির প্রতি দেশের তরুণদের দারুণ আগ্রহ রয়েছে। অবশ্যই বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষের দিক থেকে অন্যতম শীর্ষ দেশে পরিণত হবে। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ কে এম রহমতুল্লাহ এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব নূর উর রহমান।
মেলায় তরুণদের ভিড়: ফাইভজির সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের বিস্ময় আইওটি, রোবটিপ, বিগডাটা, ব্লকচেইন প্রযুক্তির প্রদর্শন এবং প্রযুক্তির মহাসড়ক বিনির্মাণে অগ্রগতির চিত্রই ছিল এবারের ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলার মূল আকর্ষণ। এই আকর্ষণে শেষ দিনেও মেলায় ছিল উপচেপড়া ভিড়। বিশেষত তরুণদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। শেষ বিকেলে মেলায় যেন তিল ধারণের জায়গা ছিল না।
হুয়াওয়ের স্টলে ফাইভজি প্রযুক্তির প্রদর্শন দেখে মুগ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রায়হানুল ইসলাম। তিনি বলেন, আগে ফাইভজি সম্পর্কে ভাসা ভাসা যে ধারণা ছিল, সেটা মেলায় এসে প্রদর্শনী দেখার পর আমূল বদলে গেছে। তিনি বলেন, অনেকের মুখে ধারণা ছিল ফাইভজিতে ফোরজির চেয়ে আরও বেশি গতিতে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যাবে, এর বেশি কিছু নেই। কিন্তু মেলায় এসে জানতে পারলাম ফাইভজি হচ্ছে স্মার্ট সিটি, চালকবিহীন গাড়ি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং রোবটিকস প্রযুক্তিতে দৈনন্দিন জীবনকে আরও সহজ করা এমনকি কলকারখানা পরিচালনার মূল ভিত্তি।
আরেক শিক্ষার্থী ফারজানা বলেন, ফাইভজি কীভাবে বাংলাদেশকে বদলে দিতে পারে, সেটাও তিনি জেনেছেন এই মেলা থেকে। সিলেট শহর কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে স্মার্ট সিটির দিকে যাত্রা শুরু করেছে, এই তথ্য তাকে বিস্মিত করেছে। মেলায় না এলে অনেক কিছুই মিস হতো।
টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবাদাতা সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৮২টি স্টলে সর্বাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির বৈচিত্র্যময় প্রদর্শনীর পাশাপাশি মেলায় চলে বিষয়ভিত্তিক সেমিনার ও আলোচনা সভা। প্রায় ১৩টি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয় তিন দিনে। সেমিনারে দেশি-বিদেশি তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন। মেলায় দেশি সফটওয়্যার কোম্পানিগুলো তাদের তৈরি সফটওয়্যার ও সেবা উপস্থাপন করে। টেলিকম অপারেটরগুলো তাদের ভয়েস, ইন্টারনেট ও মূল্য সংযোজিত সেবার নতুন উদ্ভাবন তুলে ধরে। এ ছাড়া মেলায় শিশুদের প্রোগ্রামিং ও রোবটিপ শিক্ষা অনুষ্ঠান, ডিজিটাল উদ্যোক্তা সম্মেলন, রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হয়। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের তত্ত্বাবধানে মেলার আয়োজনে সার্বিক দায়িত্ব পালন করে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ-আইএসপিএবি।