দক্ষ, কর্মসংস্থানবান্ধব, সমতাভিত্তিক, নিরাপদ ও বাসযোগ্য ঢাকা গড়ে তোলার ২২ দফা অঙ্গীকার সংবলিত নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) মনোনীত মেয়র প্রার্থী ডা. আহাম্মদ সাজেদুল হক রুবেল।
তিনি বলেছেন, এজন্য চাই বিকল্প উন্নয়ন পরিকল্পনা, নেতৃত্ব ও গণমানুষের প্রতিনিধি। চাই পরিচ্ছন্ন ও নীতিনিষ্ঠ রাজনীতি। মেয়র নির্বাচিত হলে ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধে নগর ভবনের দরজা থেকে পর্দা তুলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন তিনি।
রোববার রাজধানীর পুরানা পল্টনের সিপিবি কার্যালয় মুক্তিভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করেন ডা. রুবেল।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) এখন পর্যন্ত এমন কোনো উদ্যোগ বা পদক্ষেপ নেয়নি, যাতে মনে হবে সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। ১ ফেব্রুয়ারি ইসিকে হয় সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে, নয়তো ওই দিনই ঢাকা থেকে সরকার পতনের আন্দোলন নতুনভাবে যাত্রা শুরু করবে।
সিপিবির মেয়র প্রার্থীর ‘কেন কাস্তে মার্কায় ভোট দেবেন?’ শীর্ষক নির্বাচনী ইশতেহারে নির্বাচিত হলে ‘নগর সরকার’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ডা. রুবেল বলেন, বিশদ নীতিমালা সংযুক্ত করে ‘নগর সরকার’ আইন প্রণয়নের জন্য সরকার ও সংসদের কাছে প্রস্তাব করবেন তিনি। প্রয়োজনে ঢাকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ‘নগর সরকারের’ দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
দুর্নীতি দূর ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে ‘তদবির প্রথা’ পুরোপুরি বিলুপ্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সিপিবির মেয়র প্রার্থী বলেন, জনগণের সেবা নিশ্চিত করতে সিটি করপোরেশন ২৪ ঘণ্টা চালু থাকবে। কল সেন্টারে নাগরিকরা তাদের অভিযোগ জানাতে পারবেন। সিটি করপোরেশনের দরজায় কোনো পর্দা থাকবে না। করপোরেশনের মেয়রের দলীয় নেতাকর্মীরা কেউ আলাদা সুবিধা বা খবরদারি করার সুযোগ পাবেন না। নাগরিকদের সেবায় করপোরেশন সব সময় নিয়োজিত থাকবে।
নির্বাচিত হলে নগরীর মানুষদের কর্মসংস্থান তৈরিতে নতুন উদ্যোগ নেবেন এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের সহায়তায় ডেটাবেজ তৈরি করবেন বলেও ইশতেহারে জানিয়েছেন সিপিবির মেয়র প্রার্থী। তার ২২ অঙ্গীকারে আরও রয়েছে, যানজট ও দূষণমুক্ত ‘সবুজ শহর’ গড়ার মহাপরিকল্পনা, ই-বর্জ্যসহ বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নতুন পদ্ধতি চালু, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির সরবরাহ নিশ্চিত, জলাবদ্ধতা নিরসন, মশা নিধন, ভেজালমুক্ত খাদ্য নিশ্চিত, বাড়ি ভাড়ার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, নারীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার, হকার ও রিকশার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, শিক্ষার জন্য মানসম্মত প্রতিষ্ঠান গড়া এবং প্রতিবন্ধীদের সুযোগ-সুবিধা দিতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্যোগী হওয়া ইত্যাদি। ঢাকাকে পরিকল্পিত পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ার এবং এখানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষার পাশাপাশি খেলাধুলা, সংস্কৃতি চর্চা ও বিনোদনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করে অসাম্প্রদায়িক সিটিতে পরিণত করার বিষয়ে জোর দিয়েছেন তিনি।
ইভিএমে ভোটগ্রহণ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ডা. রুবেল বলেন, ইভিএম নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। এখন পর্যন্ত ইভিএমে কোথাও অভিযোগমুক্ত নির্বাচন হওয়ার কথা শোনা যায়নি।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের শরিক দলগুলোর নির্বাচন বর্জন এবং বামপন্থি দলগুলো ছাড়াই সিপিবির এই নির্বাচনে নেওয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরে আহাম্মদ সাজেদুল হক বলেন, বাম গণতান্ত্রিক জোট আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম। জোটের অন্য দলগুলো এই নির্বাচনে অংশ নিতে রাজি না হলেও সিপিবি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও বাসযোগ্য ঢাকা গড়ে তোলার আন্দোলনের অংশ হিসেবেই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে গেছে। এতে জোটে কোনো সমস্যা হবে না।
এ সময় ঢাকা মহানগরীকে ‘প্রাণহীন নিষ্ঠুর এবং বসবাসের অযোগ্য এক কারাগার’ হিসেবে বর্ণনা করে সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানীর যে চিত্র মুক্তিযোদ্ধাদের মননে ছিল, তা গড়ে ওঠেনি। এজন্য দায়ী নৌকা ও ধানের শীষ। পরিস্থিতি বদলাতে তাদের আধিপত্যের অবসান ঘটিয়ে বিকল্প গড়ে তোলা দরকার। তিনি বলেন, ভোটারদের সবিনয় আহ্বান করছি, কাস্তে মার্কায় ভোট দিয়ে বৈষম্যহীন ঢাকা গড়ে তোলার সুযোগ নিন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তৃতা করেন সিপিবি প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক ও দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স। উপস্থিত ছিলেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম, সহসাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ জহির চন্দন, প্রেসিডিয়াম সদস্য লক্ষ্মী চক্রবর্তী, আব্দুল্লাহ ক্বাফী রতন, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আহসান হাবিব লাবলু, কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুল কাদের, ডা. ফজলুর রহমান, জাহিদ হোসেন খান, কাজী রুহুল আমিন, লুনা নূর ও যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাসুম প্রমুখ।