অ্যান্ড্রয়েড ফোনের যত খারাপ দিক

image-130707-1581738539

অ্যান্ড্রয়েড নিজে থেকে এক অসাধারণ অপারেটিং সিস্টেম। কিন্তু অ্যান্ড্রয়েড ফোনের কিছু ব্যাপার এতটা ঝামেলাপূর্ণ যে ব্যবহারকারীদের রীতিমতো বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অ্যান্ড্রয়েড ফোনের ভালো দিকগুলোর পাশাপাশি খারপ দিকগুলোও ব্যবহারকারীরা পর্যালোচনা করছে। এমন কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হলো এ লেখায়।

আপডেট স্পষ্ট না

এখন এটা আগের তুলনায় এত বেশি সমস্যাপূর্ণ নয়, কোম্পানি কিছুটা নজর দিয়ে এটাকে এখন অনেকটা ঠিক করেছে। তারপরেও অ্যান্ড্রয়েডের জন্য এখনো বড়ো সমস্যা হচ্ছে অ্যান্ড্রয়েড ফোনে আপডেট আসে না। উইন্ডোজ ফোনে বা আইওএসে এটা নিয়ে কোনো ঝামেলা হয় না। যদি উইন্ডোজ ফোন অনেক আগেই বাতিল হয়েছে, আর আইওএস শুধু অ্যাপেলের ফোনেই পাওয়া যায়, তাই আপডেট কন্ট্রোল করা অনেক বেশি সহজ। অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান হলো গুগলের স্টক অ্যান্ড্রয়েডের একটি প্রজেক্ট। আপনার ফোনে একটি থাকলে আপনি গুগলের পিউর অ্যান্ড্রয়েড পাবেন সঙ্গে সবার আগে আপডেট পেতে পারেন। কমপক্ষে দুইটি মেজর আপডেট তো আপনি পাবেনই। অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান প্রজেক্টে না থেকেও অন্য ফোনগুলো অ্যান্ড্রয়েড ১০-এর আপডেট পেয়ে গেছে। কেন? যদি আপডেটই না পাই সবার আগে তাহলে কিসের অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান প্রোগ্রাম তাই না? এখন ভেবে দেখুন, অ্যান্ড্রয়েড ওয়ানের সঙ্গেই এই লাফড়া, তাহলে আপনার নর্মাল ডিভাইসে কবে আপডেট পাবেন? অনেকেই মনে করেন, আপডেট নিয়ে কী করব? আপডেট দিলে শুধু ফিচারই বারে না, সঙ্গে আপনার ফোনের সিকিউরিটিও বারে। আপনি যদি এ যুগে এসে অ্যান্ড্রয়েড জিঞ্জারব্রেড ব্যবহার করেন, কেউ গ্যারান্টি দিতে পারবে না, আপনার ফোনের সবকিছু হ্যাক হয়ে যাবে কি না! ফোন স্মুথ চলার জন্য, সিকিউর রাখার জন্য, নতুন ফিচারগুলো এনাবল করার জন্য ফোনে আপডেট পাওয়া জরুরি।

বিল্ট-ইন অ্যাপ

অ্যান্ড্রয়েড ফোনের সঙ্গে এক বিরাট অসুবিধা হচ্ছে অনেক সস্তা বা মিড রেঞ্জ ফোনে বিল্ট-ইন অ্যাপ ইনস্টল করাই থাকে এগুলোকে ব্লটওয়্যারও বলা হয়। ব্লটওয়্যার হচ্ছে এমন কিছু সফটওয়্যার বা অ্যাপ আপনার ফোনের সঙ্গে আগে থেকেই ইনস্টল হয়ে আসে সেগুলো ইউজ করার আপনার মোটেও দরকার নেই এবং আপনি সেগুলোকে আনইনস্টল করতেও পারবেন না।

আপনি যদি একটি বাজেট ফোন কেনেন, তো দুর্ভাগ্যবশত আপনাকে অনেক ব্লটওয়্যার দেখতে মিলবে। ধরুন একটি ফোনের র্যাম এমনিতেই ১ জিবি, এর মধ্যে আবার কতগুলো অকাজের অ্যাপ ইনস্টল করা রয়েছে যেগুলো আনইনস্টলও করা যায় না, তাহলে কি ফোনের দম এমনিতেই বের হয়ে যাবে না?

কেন? আমার ফোন আমি নিজে ডিসাইড করব, আমি কোন অ্যাপ রাখব আর কোন অ্যাপ আনইনস্টল করে দেব। কিন্তু স্মার্টফোন উত্পাদন প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের সেটা করতে দেবে না। এ ধরনের অকেজো অ্যাপগুলো ফোন কোম্পানির সঙ্গে স্পনসর ডিল করে এবং ফোনে এই অ্যাপগুলোকে প্রি- ইনস্টল করে রাখার জন্য ফোন কোম্পানিগুলোকে টাকা দেয়। এই জন্যই সস্তা ফোন হয়তো এতটা বেশি সস্তা হতে পারে।

অ্যান্ড্রয়েড ফোনের ইউআই আলাদা

অ্যান্ড্রয়েড এমনিতেই একেক ভার্সনে একেক রকমের রূপ নিয়ে আসে। কিন্তু তারপরে আবার আছে ফোন কোম্পানিদের কাস্টম ইউআই! এই ইউয়াই, সেই ইউআই, আরো কত কী। এ জন্য অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করা, বিশেষ করে এক ফোন থেকে সুইচ করে আরেক ফোনে যাওয়া অনেক সমস্যার হয়ে থাকে।

সেক্ষেত্রে আপনি অ্যান্ড্রয়েডের ওপরে ইমোশন ইউআই বা মি ইউআই দেখতে পাবেন, এরা একে অপরের থেকে একেবারেই আলাদা। এখন ধরুন আপনি স্যামসাংয়ের ফোন কেনার কথা চিন্তা করলেন, তো স্যামসাং ফোনে নিয়ে সেটিংস খুঁজে পাওয়া আপনার জন্য সম্পূর্ণ আলাদা এক দুনিয়ার ব্যাপার হবে। ওরা ওয়ান ইউআই ব্যবহার করে, যদি সব ফোনই হয়তো অ্যান্ড্রয়েড কিন্তু তারপরেও কারো সঙ্গে কারো মিল নেই।

অ্যান্ড্রয়েড এখন গুগলনির্ভর

অ্যান্ড্রয়েড ললিপপের পর থেকে অ্যান্ড্রয়েড কোর কন্ট্রোল অনেকটা গুগলের হাতেই চলে গেছে, মানে গুগল সার্ভিসেস ছাড়া অ্যান্ড্রয়েড এখন অনেকটায় অচল। কিন্তু অ্যান্ড্রয়েড প্রজেক্ট যখন শুরু হয়েছিল তখন সেটার সবকিছুই ওপেন সোর্স ছিল। ওপেন সোর্স নামে, কোনো সফটওয়্যারের সোর্স কোড সবার জন্য ওপেন থাকবে এবং যেকোনো ডেভেলপার সেটাকে আরো উন্নতি করতে পারবে, এভাবেই বেশির ভাগ লিনাক্সনির্ভর অপারেটিং সিস্টেমগুলো কাজ করে থাকে। অ্যান্ড্রয়েড সেই প্রথম দিকে এভাবে কাজ করলেও এখন প্রায় সবকিছু গুগলনির্ভর। যেমন আপনার ফোনে গুগল প্লে সার্ভিসেস না থাকলে ফোনে অনেক অ্যাপ রানই করবে না। আর গুগল সার্ভিসেসগুলো মোটেও ওপেন সোর্স নয়, এগুলোর ব্যাপারে গুগল নিজে সরাসরি মাথা ঘামায়। এখন গুগল প্লে সার্ভিসেসের মতো সার্ভিসগুলো সস্তা ফোনগুলো র্যাম নিজেই খেয়ে দেয়, সে এক আলাদা ও বাজে উদাহারণ।

গুগল নিজেই তো নিরাপদ নয়!

যখন কথা আসে প্রাইভেসি নিয়ে তো গুগলের চেয়ে বড়ো আসামি আর কে হতে পারে। গুগল আপনার প্রত্যেকটা অ্যাক্টিভিটি ট্র্যাক করে, আপনি গুগল বা ইউটিউবে কি কি সার্চ করেন, গুগল ম্যাপে কখন কথায় যাচ্ছেন, কোন রেস্টুরেন্টে চেকইন করছেন, কোন হোটেলে থাকছেন, সবকিছুই কিন্তু গুগল খুব ভালো করেই যানে।

এখন গুগলের নিজস্ব জিনিস হচ্ছে এই অ্যান্ড্রয়েড, তাহলে বুঝুন, অ্যান্ড্রয়েডের মাধ্যমে গুগল আপনার কি পার্সোনাল ডাটা ট্র্যাক করতে পারে! আপনার কন্টাক্ট লিস্ট থেকে শুরু করে, আপনার পার্সোনাল ছবিসহ ফোনে কোন অ্যাপ কতক্ষণ ব্যবহার করেন গুগল সবকিছুই খুব ভালো করে যানে।

Pin It