প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হতদরিদ্রদের জন্য সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ নেই উল্লেখ করে ক্ষোভ জানিয়েছে বিভিন্ন দল ও সংগঠন। দল ও সংগঠনগুলোর নেতারা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে এসব হতদরিদ্রের খাদ্য ও জীবিকার বিষয়েও কোনো ঘোষণা না থাকায়ও জাতি হতাশ হয়েছে।
রোববার প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের প্রতিক্রিয়ায় দেওয়া পৃথক বিবৃতিতে এসব দল ও সংগঠনের নেতারা এ কথা বলেন। তারা আরও বলেন, ‘মানুষ আশা করেছিল, প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন থেকে দেশের হতদরিদ্রদের জন্য আগামী ছয়মাসের খাদ্য সরবরাহ ও নগদ অর্থ প্রদানের দাবির বিষয়ে সুস্পষ্ট পদক্ষেপের ঘোষণা থাকবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ঋণ ও প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করলেও তাতে শ্রমজীবী ও দিনমজুরসহ হতদরিদ্রদের জন্য স্বস্তির খবর নই। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সমন্বিত জাতীয় উদ্যোগের কোনো ঘোষণাও নেই।’
বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘করোনা পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের বক্তব্যে এক ধরনের আত্মতুষ্টির বিষয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিন্তু পরিস্থিতির ভয়াবহতা ও গুরুত্ব অনুধাবন করে যেখানে পর্যাপ্ত পরীক্ষাই করা হচ্ছে না, সেখানে আত্মতুষ্টিতে না ভেসে বেশি বেশি পরীক্ষা করা এবং প্রতিরোধে উদ্যোগ নেওয়ার দিকে মনযোগ দেওয়া দরকার।’
নেতারা বলেন, ‘করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিষয়টিকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে ও একে ‘জাতীয় দুর্যোগ’ ঘোষণা করে সব রাজনৈতিক-সামাজিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করার দাবি বাম জোটের পক্ষ থেকে আগেই জানানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে এই দাবির প্রতিফলন ঘটেনি।’ সর্বদলীয় বৈঠক আহ্বান করে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের জন্য আবারও সরকারের প্রতি আহ্বান জানান নেতারা।
বিবৃতিতে সই করেছেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক বজলুর রশীদ ফিরোজ, কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সদস্য মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, মোহাম্মদ শাহ আলম, খালেকুজ্জামান, সাইফুল হক, মোশাররফ হোসেন নান্নু, মুবিনুল হায়দার চৌধুরী, মোশরেফা মিশু, জোনায়েদ সাকি ও হামিদুল হক।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান আরেক বিবৃতিতে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা দেওয়া হলেও ক্ষুদে দোকানদার, গ্যারেজ মালিক, ভ্যানগাড়িতে সবজি বিক্রেতাসহ অসংখ্য ছোট-ছোট জীবিকার মানুষ এবং বস্তিবাসী, হকার, রিকশা চালকসহ হতদরিদ্রদের জন্য সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ মেলেনি। বিশাল ব্যক্তি খাত কৃষির জন্যও সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ ঘোষিত হয়নি। উপরন্তু সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের সমন্বয়হীনতা করোনা পরিস্থিতি ও মানুষের জীবন-জীবিকাকে মারাত্মক সংকটে ঠেলে দিচ্ছে।’
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বিবৃতিতে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে করোনাজনিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় যে ঋণ ও প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন- তাতে এই দুর্যোগে কর্মহীন, বেকার ও খাদ্যাভাবে ক্লিষ্ট দেশের এক কোটি শ্রমজীবী ও দিনমজুরদের জন্য স্বস্তির কোনো খবর নেই। করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে এই জনগোষ্ঠিকে ঘরে রাখতে হলে তাদের দায়িত্ব নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।’