দীর্ঘ আট বছর পর ইতালি সরকার দেশের অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে একটি খসড়া আইন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে গেছে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে দেশটির পার্লামেন্টের সিদ্ধান্তের ওপর। ইতালিতে প্রায় ৬ লাখ অবৈধ অভিবাসী রয়েছে, এর মধ্যে ১২ হাজার বাংলাদেশি। আইনটি পাস হলেও বাংলাদেশি অভিবাসীরাও আবেদন করতে পারবেন।
অভিবাসন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, করোনা ভাইরাসের কারণে দেশটির কৃষিখাতে শ্রমিক সংকট চরম হয়ে উঠেছে। প্রতি বছরের সিজনাল ভিসা বন্ধ থাকায় নতুন করে স্বল্পমেয়াদে কোন শ্রমিক আসতে পারছে না। ইউরোপের প্রায় ৪০ শতাংশ খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ করে ইতালি। সে কারণে অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতা দিতে দেশটির কৃষি মন্ত্রীর জোড়ালো ভূমিকা ছিল মন্ত্রী সভায়। সবশেষ একটি খসড়া প্রণয়ন করে কৃষিমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেছে বলে জানা গেছে। খুব শিগগিরই পরবর্তী করণীয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপ জানানো হবে।
রোমের সামাজিক ব্যক্তিত্ব এবং অভিবাসন বিশেষজ্ঞ লুৎফুর রহমান জানান, এখনও নির্দিষ্ট করে জানানো হয়নি সংখ্যায় কতজনকে বৈধতা দেয়া হবে। তবে একটি খড়সা আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। তবে সেটি পার্লামেন্টে পাস করার ওপর নির্ভর করছে আইনটি কোন দিকে যায়।
জানা গেছে, ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অবৈধ অভিবাসী রয়েছে ইতালিতে। ভূমধ্যসাগর পথে ইতালিতে প্রবেশ অনেকটা সহজ হওয়ায় হাজার হাজার অভিবাসী সাগর পথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এদেশটিতে অনুপ্রবেশ করে। এছাড়া প্রতিবছর সিজনাল ভিসায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে স্বল্পমেয়াদে বৈধ উপায়ে কয়েক কয়েক হাজার শ্রমিক ইতালি আসে। কিন্তু ভিসার মেয়াদ শেষে এসব শ্রমিকদের একটি বড় অংশ নিজ দেশে ফেরত যায় না। এভাবে লাখ লাখ অভিবাসী দেশটিতে অবৈধভাবে বসবাস করছে যেটি সরকারও অবগত আছে।
করোনা ভাইরাসে ইতালি আর্থিকভাবে বেশ ক্ষতির মুখে পড়েছে। মুখ থুবড়ে পড়েছে কৃষিখাতসহ সকল উৎপাদন ব্যবস্থায়। তাছাড়া অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতা দিয়ে সরকার আর্থিকভাবেও লাভবান হবে। সবশেষ ইতালীতে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে অবৈধ অভিবাসীদের বৈধকরণের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল।
জানা গেছে, বর্তমানে ইতালিতে প্রায় ১২ হাজার বাংলাদেশি প্রবাসী অবৈধভাবে বসবাস করছে। বৈধকরণের খসড়া চূড়ান্তভাবে ঘোষিত হলে এসব অভিবাসীরা আবেদন করতে পারবেন। সরকারের এ ঘোষণায় করোনার মাঝেও উৎফুল্ল এসব অভিবাসীরা। মুখে হাসি দেখা গেছে কর্মহীন এসব অভিবাসীর।
লিবিয়া থেকে সাগরপথে ইতালী প্রবেশ করা বেলায়েত হোসেন নামের এক অভিবাসী জানান, সাত বছর এ দেশে আছি। দেশে যাওয়ার ইচ্ছে ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। জীবনে এর চেয়ে বড় কিছু পাওয়ার নেই। দেশে বাবা-মা অনেক টেনশন করেন আমাকে নিয়ে। অবরুদ্ধ জীবনে বেশ কষ্টে থাকলেও বৈধ করার খবর সব দুঃখ ভুলিয়ে দিয়েছে।
তবে সরকার ঘোষিত খসড়ায় কেবল কৃষিকাজ, গবাদিপশুর খামার এবং মৎস্য খামারে কর্মরত অভিবাসীদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ঢালাওভাবে সকল অবৈধ অভিবাসীদের কথা উল্লেখ করা হয়নি। দেশটির বাম রাজনৈতিক দল এবং শ্রমিক ইউনিয়নগুলো অবশ্য সরকারকে চাপ দিচ্ছে সকল অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতা দেয়ার জন্য। চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ হওয়ার পর বিষয়টি স্পষ্ট হবে।
তবে অতীতের সরকারি ঘোষনায় দেখা গেছে প্রায় সব বিভাগে অবস্থানরত অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতা দেয়া হয়েছে। ইতালি সরকার বর্তমান পরিস্থিতি, দেশটির স্বাস্থ্য নিরাপত্তা, আর্থিক স্বার্থ, সর্বোপরি মানবিক দিক বিবেচনা করে সকল অভিবাসীকে বৈধতা দিবে বলেই মনে করছেন অনেকে।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে রোমের বিশিষ্ট সামাজিক ব্যক্তিত্ব এবং সিসিএল এর চেয়ারম্যান মোহাম্মাদ মোক্তার হোসেন জানান, মূলত দু’টি কারণে বৈধতা দিচ্ছে সরকার। একটি হচ্ছে- করোনার কারণে বিশেষকরে কৃষিখাতে শ্রমিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। সিজনাল ভিসা বন্ধ থাকায় সংকট পূরণের অন্য কোন উপায় নেই সরকারের কাছে। অন্যটি হচ্ছে- করোনায় সরকার সকলকে সহায়তা করলেও অবৈধদের কিছু দিতে পারছে না। বৈধতা দিলে সরকার জানতে পারবে এবং স্পষ্ট হবে অবৈধ অভিবাসীদের সম্পর্কে। পাশাপাশি সরকারও আর্থিকভাবে কিছু ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবে।
তিনি আরও জানান, বৈধকরণের বিলটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে রয়েছে। খুব শিগগিরই এটি চূড়ান্ত হতে পারে।