কোভিড-১৯ মহামারীর এই সময়ে ফজলে কবিরকে আরও দুই বছরের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর পদে রাখতে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
আপাতত যেহেতু জাতীয় সংসদের কোনো অধিবেশন নেই, তাই রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারি করে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার’ সংশোধন করতে হবে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলছেন, সরকারের ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর বাস্তবায়ন নির্বিঘ্ন করতেই এ উদ্যোগ।
বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার অনুযায়ী, ৬৫ বছর বয়স হলে আর কেউ গভর্নর থাকতে পারেন না। ফজলে কবির বয়সের ওই সীমা পার করবেন আসছে জুলাই মাসে।
ফলে বিদ্যমান আইনে গভর্নর পদে ফজলে কবিরের মেয়াদ বৃদ্ধির সুযোগ নেই। কিন্তু সরকার যেহেতু তাকে রাখতে চাইছে, সে কারণেই আইন সংশোধনের প্রয়োজন পড়ছে। আর এটা হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম ঘটনা।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে অর্থমন্ত্রী রোববার বলেন, কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবিলার জন্য সরকার এ পর্যন্ত সোয়া লাখ কোটি টাকার মত প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে কয়েকটি প্যাকেজ বাংলাদেশ ব্যাংকের।
“ইতোমধ্যে অনেক প্যাকেজ বাস্তবায়নের কাজও শুরু হয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে গভর্নর হিসেবে নতুন কেউ এলে বুঝতে বুঝতেই কয়েক মাস লেগে যাবে। সে কারণেই ফজলে কবির সাহেবকে গভর্নর রাখার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। আর সেটা করতে গেলে তো বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার সংশোধন করতেই হবে।”
তবে সরকারের আরেক মন্ত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “সত্যি কথা বলতে কি, গত এক বছর ধরে আমরা নতুন গভর্নর কাকে করা যায়, ভাবছি-খুঁজছি। কিন্তু মনের মত কাউকে পাচ্ছিলাম না।
“এরই মধ্যে মহাসংকট চলে এল। এ সংকট মোবাবেলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে; সরকারকে তথ্য, কৌশল, পরিকল্পনাসহ অন্যান্য বিষয়ে যে সহযোগিতা করা হয়েছে, তাতে প্রধানমন্ত্রী খুবই খুশি হয়েছেন। সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে আইন সংশোধন করে হলেও ফজলে কবিরকে গভর্নর হিসেবে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।”
নতুন মেয়াদে দুই বছরের জন্য নিয়োগ পেতে পারেন ফজলে কবির। আপাতত অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার’ সংশোধন করে আসন্ন বাজেট অধিবেশনের সময় তা অনুমোদন করিয়ে নেওয়া হবে।
রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ তৎকালীন গভর্নর আতিউর রহমান পদত্যাগ করলে তাড়াহুড়ো করে পরদিনই ফজলে কবিরকে চার বছরের জন্য গভর্নর নিয়োগ দেয় সরকার। তখন তিনি দেশের বাইরে ছিলেন এবং ফিরে এসে গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেন ২০ মার্চ।
সে হিসেবে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল এ বছরের ১৯ মার্চ। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার ৩৪ দিন আগে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি গভর্নর হিসেবে ফজলে কবিরের মেয়াদ ৩ মাস ১৩ দিনের জন্য বাড়িয়ে দেয় সরকার। তাতে বলা হয়, ৬৫ বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত তিনি গভর্নর থাকবেন। ফজলে কবিরের বয়স ৬৫ বছর পূর্ণ হবে আগামী ৩ জুলাই।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কয়েক দিন আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের বয়সের সীমারেখা তুলে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে অর্থমন্ত্রীর কাছে একটি সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করে।
“অর্থমন্ত্রী গত ১৮ মে তা অনুমোদন করেছেন। পরদিন ১৯ মে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ তা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়ে দিয়েছে।”
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর সম্মতিতেই অর্থমন্ত্রী ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ গভর্নরের বয়সের সীমা তুলে দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে এতদূর অগ্রসর হয়েছেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এখন আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির জন্য পাঠাবে।”