করোনাভাইরাস সংকটের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নগদ অর্থ সহায়তার তালিকা তৈরিতে অনিয়মে জড়িত তিনজনসহ মোট ১১ জনপ্রতিনিধিকে বরখাস্ত করেছে সরকার।
এদের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের চারজন চেয়ারম্যান ও ছয়জন সদস্য এবং একজন পৌর কাউন্সিলর রয়েছে। বাকিদের বিরুদ্ধে কর্মস্থলে অনুপস্থিতি ও ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।
এদের সবাইকে সাময়িক বরখাস্ত করে মঙ্গলবার আদেশ জারি করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
এ নিয়ে ত্রাণ বিতরণে অনিয়মসহ সরকারি চাল আত্মসাৎ এবং অন্যান্য অনিয়মের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের ২৮ জন চেয়ারম্যান, ৫১ জন সদস্য, একজন জেলা পরিষদ সদস্য, চারজন পৌর কাউন্সিলর এবং একজন উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যানসহ মোট ৮৫ জনপ্রতিনিধিকে সাময়িক বরখাস্ত করা হল।
চেয়ারম্যানদের মধ্যে কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার সিংপুর ইউনিয়নের মো. আনোয়ারুল হক এবং বাজিতপুর উপজেলার হালিমপুর ইউনিয়নের হাজী মো. কাজল ভূইয়া এবং বরগুনার সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের মো. শাহনেওয়াজ ও নলটোনা ইউনিয়নের হুমায়ুন কবীরকে বরাখাস্ত করা হয়েছে।
বরখাস্তকৃত ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য হলেন- ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর উপজেলার মজলিশপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের হারিছ মিয়া এবং ৭ নম্বর ওয়ার্ডের হাছান মিয়া, বরগুনার সদর উপজেলার নলটোনা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মো. হারুন মিয়া, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মো. হানিফ; ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা আসনের মোসা. রানী এবং ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা আসনের মোসা. ছাবিনা ইয়াসমিন (পলি)।
এছাড়া চট্টগ্রামের বোয়ালখালী পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. সোলাইমান বাবুলকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
আদেশে বলা হয়েছে, নিকলী উপজেলার সিংপুরের চেয়ারম্যান আনোয়ারুল হক করোনোভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময় ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়তা না করে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে কর্মস্থলে অনুপস্থিত আছেন।
বাজিতপুর উপজেলার চেয়ারম্যান কাজল ভূইয়া দীর্ঘদিন ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। এছাড়া করোনোভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের নেওয়া পদেক্ষেপ বাস্তবায়নে বিঘ্ন সৃষ্টি, ভিজিডির খাদ্যশস্য বিতরণ না করা, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর নগদ অর্থ সহায়তা কর্মসূচির সুবিধাভোগীদের তালিকা তৈরিতে ব্যর্থতা এবং কারণ দর্শানোর পরেও অন্যের মাধ্যমে তার জবাব দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
মজলিশপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য হারিছ মিয়া এবং ৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য হাছান মিয়ার বিরুদ্ধে সরকারি নিয়মনীতি না মেনে প্রধানমন্ত্রীর অর্থ সহায়তা কর্মসূচির সুবিধাভোগীদের তালিকা তৈরিতে ব্যাপক অনিয়মের মাধ্যমে নিজেদের নাম অন্তর্ভূক্ত করার অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে বলে আদেশে বলা হয়েছে।
এছাড়া বরগুনার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজের বিরুদ্ধে মৎস্য ভিজিএফ’র চাল কম দেওয়া, তালিকার বাইরেও অন্যদের চাল দেওয়াসহ দুইজন গ্রাম পুলিশকে এই চাল দেওয়ার অভিযোগ স্থানীয় তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।
আর নলটোনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর এবং এই ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হারুন মিয়া, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হানিফ, মহিলা আসনের সদস্য মোসা রানী ও পলির বিরুদ্ধে জেলেদের তালিকা তৈরিতে অনিয়ম, ভূয়া টিপসইয়ের মাধ্যমে চাল উত্তোলন করে আত্মসাৎ এবং ওজনে কম চাল দেওয়ার অভিযোগ স্থানীয় তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে বলে আদেশে বলা হয়েছে।
এছাড়া বোয়ালখালী পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর বাবুলের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে অনিয়মের অভিযোগ জেলা প্রশাসকের তদন্তে প্রমাণিত হয়।
এসব অভিযোগের কারণে ১১ জন জনপ্রতিনিধিকে সাময়িক বরখাস্ত করে আলাদা আলাদা আদেশ জারি করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
এদের স্থায়ীভাবে কেন বরখাস্ত করা হবে না, তা জানতে চেয়ে শোকজও করা হয়েছে। চিঠি পাওয়ার ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার বিভাগে শোকজের জবাব পাঠাতে অনুরোধ হয়েছে।