বিদেশি ঋণ অনুমোদন ২৩৮২ কোটি টাকা

image-351501-1601842039

‘অনমনীয় ঋণবিষয়ক স্থায়ী কমিটি’র তিন ধরনের আপত্তি সত্ত্বেও ২ হাজার ৩৮২ কোটি টাকার বিদেশি ঋণের প্রস্তাব অনুমোদন হয়েছে। রেলের ৭০টি লোকোমোটিভ কিনতে এ প্রস্তাব দেয়া হয়, যা বৈদেশিক মুদ্রায় ২৮ কোটি ২৩ লাখ মার্কিন ডলার। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

আরও জানা গেছে, যে তিন বিষয়ে আপত্তি দেয়া হয়েছে সেগুলো হচ্ছে-অতিমাত্রায় এজেন্সি ফি ধার্য এবং প্রথম সর্বনিম্ন দরদাতাকে বাদ দিয়ে দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়া। এছাড়া এই মুহূর্তে রেলে আধুনিক ও ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ না নিয়ে পুরনো মডেলের লোকোমোটিভ কেনার যৌক্তিকতা। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ‘অনমনীয় ঋণবিষয়ক স্থায়ী কমিটি’র সভায় এসব প্রশ্ন তোলা হয়।

প্রসঙ্গত, কঠিন শর্তের ঋণের ঝুঁকি হ্রাস ও নমনীয়তা পরীক্ষা ও অনুমোদনের জন্য গঠন করা হয় অনমনীয় ঋণবিষয়ক স্থায়ী কমিটি। ইতঃপূর্বে ‘হার্ড টার্ম লোন কমিটি’ বাতিল করে নতুন এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সভাপতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। একটি প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ঋণের ৩৫ শতাংশ বিদেশি ঋণ হলে সেক্ষেত্রে অনমনীয় ঋণ সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটিতে পরীক্ষা ও অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয়। এ কমিটি ঋণ গ্রহণের প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন দিয়ে থাকে।

সূত্র জানায়, রেলের প্রকল্পের আওতায় কেনাকাটার জন্য ২৮ কোটি ২৩ লাখ ১ হাজার ৮৮৭ মার্কিন ডলারের ঋণ নেয়ার ব্যাপারে স্ট্যান্ডার্ট চ্যার্টার্ড ব্যাংক (এসসিবি) ও সুমিটোমো মিটসুই ব্যাংক কর্পোরেশনের (এসএমবিসি) সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে রেল মন্ত্রণালয়। ঋণের মেয়াদ ১৯ বছর। এখানে এজেন্সি ফি নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতিবছর ২০ হাজার মার্কিন ডলার। আর ব্যবস্থাপনা ফি ধরা হয়েছে ঋণের ১ দশমিক ৫ শতাংশ। এ ঋণের প্রস্তাব পাসের জন্য উপস্থাপন করা হয় অনমনীয় ঋণবিষয়ক স্থায়ী কমিটির বৈঠকে। কিন্তু এ কমিটি আপত্তি তুলে এজেন্সি ফি নিয়ে। পরবর্তী সময়ে ঋণের এজেন্সি ফিসহ অন্যান্য পরিচালনা ব্যয় পর্যালোচনার জন্য সিঙ্গাপুর ঋণ প্রদান কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেয়া হয়। এরপর ঋণ ইস্যু কর্তৃপক্ষ এজেন্সি ফি ২০ হাজার মার্কিন ডলার কমিয়ে ১০ হাজার ডলার নির্ধারণ করে এবং ব্যবস্থাপনা ফি ১ দশমিক ৪ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। অনমনীয় ঋণবিষয়ক স্থায়ী কমিটির আপত্তির মুখে ঋণ খরচ ৭ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার সাশ্রয় হয়।

ওই বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে জানা গেছে, অনমনীয় ঋণবিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রশ্ন তুলেন সর্বনিম্ন দরদাতা প্রথম প্রতিষ্ঠানকে বাদ দিয়ে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে এ প্রকল্পের আওতায় কেন কাজ দেয়া হল। এর জবাবে ওই বৈঠকে রেল সচিব মো. সেলিম রেজা বলেন, দরপত্রে সর্বনিম্ন দাতা দ্বিতীয় হিসেবে কোরিয়ান কোম্পানি মেসার্স হুন্দাই রুমেট এবং প্রথম হিসেবে স্পেনের কোম্পানি মেসাস ভসলোসেপানা এসএস টিকে। এর মধ্যে পরবর্তী সময়ে কোম্পানি বিক্রয়জনিত কারণে স্পেনের কোম্পানি মেসার্স ভসলোসেপানা এসএস নাম পরিবর্তন হয়। নতুন নামকরণ হয় মেসার্স স্টেলেন্ড রেল ভেলেন্সিয়া এসএইউ। এই নাম পরিবর্তনের বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের সিপিটিইউ কমিটি বিবেচনায় নিয়ে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সরকারের ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে (সিসিজিপি) পাঠানো হয়। এরপর সিসিজিপির সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স হুন্দাই রুমেটকে নির্ধারণ করে। তবে দ্বিতীয় কোম্পানির প্রস্তাব পুনরায় দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি পুনর্মূল্যায়ন করে। ওই কমিটি মেসার্স হুন্দাই রুমেটের প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য বলে সুপারিশ করে। এই কোম্পানির মাধ্যমে কেনাকাটার ব্যয় ধরা হয় ১ লাখ ৯৮ হাজার ৬৫০ কোটি টাকার।

জানা গেছে, ইলেকট্রিক ট্রেন লাইন স্থাপনের মাধ্যমে বর্তমানে আধুনিক ও সাশ্রয় গড়ে তোলা হচ্ছে সারা বিশ্বে। পাশাপাশি রেললাইনের জন্য ভারত সরকার থেকে ১০টি লোকোমোটিভ উপহার হিসেবে পাওয়া গেছে। তবে আধুনিক ইলেকট্রিক লাইন ও ভারতের উপহার লোকোমোটিভ ব্যবহার করা হয়নি। এসব উদ্যোগ না নিয়ে ৭০টি লোকোমোটিভ কেনার প্রয়োজনীয় আছে কি না, এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে অনমনীয় ঋণ সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটি।

বৈঠকে এ প্রশ্নের বিপরীতে রেলের মহাপরিচালক মো. শামছুজ্জামান বলেন, বর্তমান রেলের মোট লোকোমোটিভ সংখ্যা ১৭৫টি। এর মধ্যে ৩০ বছরের বেশি হয়েছে ১৪৪টির। এই ঋণের মাধ্যমে কেনা কম্বাইন্ড লোকোমোটিভ মিটার গেজ ও ব্রড গেজ উভয় রেল অপারেশন করা যাবে। এই লোকোমোটিভ পরিবর্তন করার পদ্ধতি আছে। আর আগামী ২০৪৫ সাল পর্যন্ত এসব লোকোমোটিভ ব্যবহার করা যাবে। পরবর্তী সময়ে এটি ব্রডগেজ লোকোমোটিভ হিসেবে রূপান্তর করা যাবে। তিনি আরও বলেন, রেলের সেবা ও বিস্তারের জন্য এই ঋণ কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

Pin It