সচল হচ্ছে অর্থনীতির চাকা, বাড়ছে বিদ্যুৎ-জ্বালানির ব্যবহার

image-189873-1602345570

করোনার অর্থনৈতিক ধকল কাটিয়ে উঠতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। বিভিন্ন ধরণের উদ্যোগ নিচ্ছে বেসরকারি এবং অনানুষ্ঠানিক আয়ের খাতও। ব্যবসা-অর্থনীতির চাকা যত বেশি ঘুরতে শুরু করেছে বিদ্যুৎ-জ্বালানির ব্যবহারও তত বাড়ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিল্প-কারখানার সিংহভাগ নিয়মিত উৎপাদনে ফিরেছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রগুলোও পুরোদমে চালু। উৎপাদন অর্ডার এবং আর্থিক লেনদেন কিছুটা কম হলেও প্রাণ ফিরেছে শিল্প ও বাণিজ্যপাড়ায়। গণপরিবহনও এর প্রতিফলন ঘটেছে দেশে বিদ্যুৎ-জ্বালানির ব্যবহারেও। করোনার আগের অবস্থায় অনেকটা ফিরেছে বিদ্যুৎ, গ্যাস এবং ডিজেলের ব্যবহার। করোনা পরিস্থিতি আরও খারাপ না হলে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে গতি যত বাড়বে তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের ব্যবহারও তত বাড়বে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি), পেট্রোবাংলা এবং বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) সূত্রে জানা যায়, দেশে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর গত মার্চ-এপ্রিলে তেলের মজুদ নিয়ে বিপাকে পড়ে বিপিসি। দৈনিক জ্বালানি তেলের ব্যবহার প্রায় ১০ হাজার টন কমে যায়। শিল্প উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গ্যাসের ব্যবহার কমে ব্যাপকহারে। দৈনিক গ্যাস ব্যবহার কমে ১০০ ঘনফুটের বেশি। শিল্পে বিদ্যুতের ব্যবহার প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে আসে। তবে আবাসিকে বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ায় কিছুটা চেক-অ্যান্ড-ব্যালেন্স হয়েছিল। তারপরও সার্বিকভাবে চার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ব্যবহার কমে যায়। গড়ে বিদ্যুৎ প্রায় ১৫ শতাংশ, গ্যাস ৩০ শতাংশ, ডিজেল, পেট্রোল ও অকটেন ৬০ শতাংশ কমে গিয়েছিল। এছাড়া আবাসিক ও রেস্টুরেন্টে ব্যবহৃত এলপিজির ব্যবহারও কমে ৩০ শতাংশ।

তেল, গ্যাস ও বিদ্যুৎ ব্যবহারের দৈনিক চিত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ১২ এপ্রিল দেশে ডিজেলের ব্যবহার হয়েছিল ৫ হাজার টন। আর ১ সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ হাজার টন। গ্যাস উৎপাদন ১২ এপ্রিলে ছিল ২১৩ কোটি ঘনফুট। ১ সেপ্টেম্বরে তা হয় ৩০৭ কোটি ঘনফুট। ১২ এপ্রিলে বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হয় ৮ হাজার ৩৫৫ মেগাওয়াট। আর ১ সেপ্টেম্বরে তা হয়েছে ১২ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। চলতি অক্টোবরেও এ বৃদ্ধির হার অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। শনিবার বিদ্যুতের ব্যবহার ১৩ হাজার মেগাওয়াটের বেশি হতে পারে পূর্বাভাস দেয় পিডিবি।

দেশে করোনার প্রকোপ আরেকবার বাড়তে পারে বলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। দৈনিক করোনা শনাক্ত চার সংখ্যাতেই আছে। আসন্ন শীতে করোনা সংক্রমণের হার আরও বাড়বে। ভ্যাকসিন আগামী ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারিতে না এলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় প্রতি ১০ জনে একজন করোনা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। করোনা প্রথম ধাক্কায় দেশের অনেক ব্যক্তি-পরিবার-প্রতিষ্ঠানের আর্থিক মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে। তারা এখন ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সংগ্রাম করছেন। তাই দ্বিতীয় ধাক্কা প্রবল হওয়ার আগে অর্থনীতির চাকায় গতি পাওয়াটা আশার কথা। জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি অর্থনীতির সেই ঘুরে দাঁড়ানোরও সাক্ষী দেয়।

Pin It