লালমনিরহাটের বুড়িমারীতে শহীদুন্নবী জুয়েলের কোরআন অবমাননার কোনো সত্যতা মেলেনি বলে দাবি করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে জেলা প্রশাসকের গঠিত তদন্ত কমিটি। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের হাতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। তদন্ত প্রতিবেদন জমা দানের সময় উপস্থিত ছিলেন তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট টিএমএ মমিন, ফায়ার সার্ভিসের উপ পরিচালক সাইদুল ইসলাম ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর সাংবাদিকদের বলেন, গঠিত তদন্ত কমিটি তদন্ত শেষে প্রতিবেদন হাতে পেয়েছি। সেখানে বলা হয় কোরআন অবমাননার মতো কোনো কাজ জুয়েল করেনি। শুধু গুজব ছড়িয়ে পিটিয়ে-পুড়িয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন এর মধ্যে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট টিএমএ মমিন সাংবাদিকদের বলেন, তিন কার্যদিবস থেকে সময় বাড়িয়ে ৯ কার্যদিবস সময় নেওয়া হয়। সময় মত তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। তদন্ত করে কোরআন অবমাননার কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি। এটি স্রেফ একটি গুজব।
তদন্ত প্রতিবেদন বিষয়ে তিনি আরও বলেন, তদন্ত কাজে মোট ৫০ জনের লিখিত ও মৌখিক বক্তব্য গ্রহণ করে তদন্ত কমিটির সাতটি সভা করে প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়েছে। চয়টি অধ্যায়ে ৪২টি অনুচ্ছেদে ৭৩ পাতা সংযুক্তিতে মোট ছয় পাতার তদন্ত প্রতিবেদনটি প্রস্তুত। ঘটনার ভূমিকা, বিবরণ, অধিক তথ্যানুসন্ধান, গভীর পর্যবেক্ষণ, সুপারিশমালা ও মন্তব্য করা হয়েছে প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনটিতে চারটি সুপারিশ স্থান পেয়েছে বলেও দাবি করেন তদন্ত কমিটির প্রধান।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম বলেন, ঘটনার গভীরে যেতে এবং নিবিড় পর্যবেক্ষণের জন্য আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ১৭-২০টি ভিডিও ক্লিপ সংগ্রহ করেছি। এসব দেখেও অনেক তথ্য উপাত্ত পেয়েছি।
উল্লেখ্য, গত ২৯ অক্টোবর বিকেলে পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে কোরআন অবমাননার গুজব ছড়িয়ে শহিদুন্নবী জুয়েলকে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের চাচাত ভাই সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে গত (৩১ অক্টোবর) একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে মোট ৩২ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর মধ্যে ১০ জনকে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। গ্রেফতার আসামিরা সবাই বুড়িমারী এলাকার বাসিন্দা।