শীর্ষ ২৫ ব্যাংকে খেলাপি ৮০ হাজার কোটি টাকা

image-370492-1606933475

খেলাপি ঋণের বোঝা জেঁকে বসেছে গুটিকয়েক ব্যাংকের ঘাড়ে। ফলে দিনের পর দিন দুর্বল হয়ে পড়ছে এসব ব্যাংক। মোট খেলাপি ঋণের ৮৫ শতাংশই ২৫ ব্যাংকের। যার অংক ৮০ হাজার কোটি টাকার বেশি। বিপুল অঙ্কের এ টাকার বেশিরভাগই রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচ ব্যাংকের। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন পর্যালোচনায় উঠে এসেছে এমন তথ্য।

সংশ্লিষ্টদের মতে, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে খোয়া যাওয়া এসব টাকা ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে বিদ্যমান আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে পারলে অনিয়ম কিছুটা কমে আসবে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ যুগান্তরকে বলেন, খেলাপি ঋণের বেশিরভাগই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের। এসব ব্যাংক থেকে প্রভাবশালীরা ঋণ নিয়ে তা আর ফেরত দিচ্ছেন না। এরপর ঋণখেলাপির এ রোগ ধীরে ধীরে বেসরকারি ব্যাংকেও সংক্রমিত হয়। ফলে কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকেও খেলাপি ঋণ বেড়ে যায়। বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ব্যাংককে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৪ হাজার ৪৪০ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এর সিংহভাগই মাত্র ২৫টি ব্যাংকের দায়। স্থিতির দিক থেকে তালিকার শীর্ষে থাকা ২৫ ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৮০ হাজার ৩৫০ কোটি ৪২ লাখ টাকা। তথ্য বলছে, এর মধ্যে ৪২ হাজার ২২১ কোটি টাকার খেলাপি ঋণই রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচ ব্যাংকের। বাকি ২০ ব্যাংকের খেলাপি ৩৮ হাজার ১২৯ কোটি টাকা।

প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, হলমার্ক কেলেঙ্কারির পর গর্তের মধ্যে পড়ে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক। একপর্যায়ে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বেড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। তবে এখন কমতে কমতে সর্বশেষ সেপ্টেম্বর শেষে সোনালী ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের স্থিতি ১০ হাজার ১৯৭ কোটি ৪২ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। একই চিত্র রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকেরও।

ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বেড়ে একপর্যায়ে ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। তবে সেপ্টেম্বর শেষে তা কিছুটা কমে ১৩ হাজার ৯২০ কোটি ৮৫ লাখ টাকায় দাঁড়ায়। এর পরের অবস্থানেই রয়েছে লুটপাট হওয়া রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক। সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৭ হাজার ৬০৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ছিল ৬ হাজার ৩৯২ কোটি ৯৩ লাখ এবং রূপালী ব্যাংকের ৪ হাজার ১০২ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

এর বাইরে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে খেলাপি ঋণের শীর্ষে রয়েছে এবি ব্যাংক। এবি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৪৭৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। যা আগের প্রান্তিকের তুলনায় প্রায় ১৬ কোটি টাকা বেশি। ৩ হাজার ৬৯৩ কোটি ৬ লাখ টাকার খেলাপি নিয়ে সপ্তম স্থানে অবস্থান করছে বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংক। এরপরে রয়েছে পদ্মা ব্যাংক।

বর্তমানে ব্যাংকটির মোট খেলাপির পরিমাণ ৩ হাজার ৩১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। ৩ হাজার ২১৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকা খেলাপি নিয়ে ইসলামী ব্যাংকের অবস্থান নবম এবং দশম স্থানে অবস্থান করছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ২ হাজার ৭৩২ কোটি ৭১ লাখ টাকা। উল্লিখিত ১০ ব্যাংককেই খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫৯ হাজার ৯৬৯ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।

শীর্ষ পঁচিশের মধ্যে থাকা অন্য ব্যাংকগুলো হল- আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, এক্সিম ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স, দ্য সিটি ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। সর্বনিু হাজার কোটি টাকা থেকে সর্বোচ্চ প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ থাকা ব্যাংক থেকে শীর্ষ ২৫ ব্যাংকের তালিকা নির্ধারণ করা হয়।

এনসিসি ও মেঘনা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবং জেষ্ঠ ব্যাংকার মোহাম্মদ নুরুল আমিন যুগান্তরকে বলেন, যেসব ব্যাংক যাচাই-বাছাই করে ঋণ দেয়নি, দিন শেষে সেসব ব্যাংকই ধরা খেয়েছে। বিশেষ করে নির্দেশিত ঋণ খুব বেশি যাচাই-বাছাই করা হয় না। এটা হতে পারে রাজনৈতিক, পরিচালকের পক্ষ থেকে বা যে কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তির। এসব ঋণ বিপজ্জনক। এছাড়া বেসিক ব্যাংকে হয়েছে লুটপাট। সেটা কোনো ব্যাংকিংয়ের মধ্যে পড়ে না। অনেক সময় এক খাতের জন্য ঋণ নিয়ে অন্য খাতে ব্যবহারের অভিযোগও উঠে। সর্বোপরি নিয়ম না মানলে খেলাপি ঋণ কমবে না।

Pin It