বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম বলেছেন, আগামী ৬ মাসের মধ্যে টেকসই হবে পুঁজিবাজার। বিএসইসি ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের নিরাপত্তা দেবে। অনেক দুষ্ট শক্তি পুঁজিবাজার নিয়ে নানা সময় খেলা করেছে। খেলার সময় শেষ হয়ে আসছে; ওই সময় চাইলেও আর তারা খেলতে পারবে না।
বৃহস্পতিবার দৈনিক ‘বাণিজ্য প্রতিদিন’র অনলাইন ভার্সনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত “রোল অব ক্যাপিটাল মার্কেট ইন কিপিং ইকোনোমি ভাইব্রেন্ট ডিউরিং কোভিড-১৯ প্যান্ডামিক”শীর্ষক একটি সেমিনারে তিনি এ সব কথা বলেন।
বিএসইসির অডিটোরিয়ামে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বিএসইসির কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ ও কমিশনার প্রফেসর ড. মো. মিজানুর রহমান। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কমিশনের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. রেজাউল করিম।
প্যানেল স্পিকার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিডি ফাইন্যান্সের চেয়ারম্যান ও আনোয়ার গ্রুপের এমডি মানোয়ার হোসাইন, বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রেসিডেন্ট মো. ছায়েদুর রহমান এবং ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরামের (সিএমজেএফ) সভাপতি হাসান ইমাম রুবেল। অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন। সেমিনার শেষে পত্রিকার অনলাইনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বিএসইসি চেয়ারম্যান। সভাপতিত্ব করেন বাণিজ্য প্রতিদিনের সম্পাদক একেএম রাশেদ শাহরিয়ার।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, বাজার ডিমান্ড-সাপ্লাই (চাহিদা-যোগান) এর উপর নির্ভর করে ওঠানামা করবে। ওঠানামা হবে সাসটেইনেবল (টেকসই)। এর মধ্যে কোনও দুষ্টু শক্তি এসে জন্য ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের নিঃস্ব করে যেতে না পারে সেটা আমরা খেয়াল রাখছি। আগামী ৬ মাসের মধ্যে একটি টেকসই পুঁজিবাজার পাবো।
তিনি বলেন, ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশসহ (আইসিবি) আমাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাতে ঠিকভাবে রোল প্লে করতে পারে সেদিকেও আমরা খেয়াল রাখছি। কিছুদিন পর আপনারাও বুঝতে পারবেন এই ক্যাপিটাল মার্কেটে সাসটেইনেবলিটি খুব বেশি দূরে নেই।
তিনি বলেন, সেটার জন্য খুব বেশি সময় লাগবে না। আশা করি তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে আপনারা এটা ফিল করবেন, বড় বড় শক্তি এসে যদি এখানে খেলতে চায় সেটা তারা আর পারবে না। আমরা বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তা দিব।
তিনি বলেন, আমরা আইপিও দিব। কেন না আইপিওর মাধ্যমে বড় বড় ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসার জন্য দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের ব্যবস্থা করতে পারবেন। এর মধ্যে প্রাইমারি মার্কেটের আইপিও বিজয়ীরা লাভবান হবেন।
শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম বলেন, আমরা অনেকগুলো আইপিও দিয়েছি। কিন্তু তার কোনও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে দেখিনি। বরং আইপিওর মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের পুঁজির যোগান হচ্ছে। অনেক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। এর মাধ্যমে উদ্যোক্তারা বেনিফিটেড হচ্ছেন। মার্কেট বেনিফিটেড হচ্ছে। মার্কেটের গভীরতা বাড়ছে। জনগণ যারা আইপিও করছেন তারাও লাভবান হচ্ছেন। সবমিলিয়ে আমরা একটি উইন উইন অবস্থা দেখতে পাচ্ছি। যদি কখনো দেখি এখানে (আইপিও) আমাদের একটু স্লো করা উচিত এবং এখানে ইন্টারভেন করা উচিত, সেটাও আমরা করব।
তিনি আরো বলেন, প্রথমদিকে আমাদের সেকেন্ডারি মার্কেটে নজর দিতে হয়েছে। এখন প্রাইমারি মার্কেট, ডেরিভিটিভ মার্কেট নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। আজ থেকে রবির শেয়ার লেনদেন শুরু হয়েছে। রবি আশায় আজ দুপুর ১২টার মধ্যে ৮০০ কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হয়েছে। আমরা আশা করছি আজ থেকে বাজার একটু ভালোর দিকে দিকে যাবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএসইসির কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, পুঁজিবাজারসহ অর্থনীতির বিভিন্ন সেক্টর নিয়ে বিশেষায়িত পত্রিকাগুলো ভালো প্রতিবেদন করছে। এসব প্রতিবেদনের মাধ্যমেও আমরা অনেক তথ্য পাই। যা চার দেয়ালের মধ্যে বন্দি থেকে আমরা পাই না। তাই পুঁজিবাজার উন্নয়নে সাংবাদিকদের ভূমিকাও অনেক।
কমিশনার প্রফেসর ড. মো. মিজানুর রহমান বলেন, আমরা পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা চাই। এ জন্য মিডিয়ার বড় একটি ভূমিকা রয়েছে। বাজারের স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা নিশ্চিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। উন্নয়নশীল বিশ্ব তাদের উন্নয়নে গণমাধ্যমের উপর ভরসা করে।
তিনি বলেন, করোনা ভাইরাস আমাদের বড় সমস্যায় ফেললেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্ব আর ব্যবস্থাপনায় আমরা আর্থিক সংকট থেকে সহজেই উত্তরণের পথ পেয়েছি। পুঁজিবাজারের প্রতি ইনভেস্টরদের আস্থা ফিরেছে। বর্তমান গ্রোথ তাদের আস্থারই ফল। বাজার নিয়ে যে চ্যালেঞ্জ রয়েছে তা অভারকাম করতে সকলকে একসাথে কাজ করতে হবে। পুঁজিবাজারকে ভিন্নভাবে দেখার সুযোগ নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এরপর চেয়ারম্যান বাণিজ্য প্রতিদিন পত্রিকার সম্পাদক একেএম রাশেদ শাহরিয়ার এবং চিফ রিপোর্টার গিয়াসিউদ্দিনকে সাথে নিয়ে পত্রিকার অনলাইন ভার্সনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
বিডি ফাইন্যান্সের চেয়ারম্যান ও আনোয়ার গ্রুপের এমডি মানোয়ার হোসাইন বলেন, সাসটেইনেবল হলো একটা স্ট্যান্ড। আপনি যখন পুঁজিবাজারের একটা স্ট্যান্ড ঠিক করতে পারবেন তখন সাসটেইনেবল নিশ্চত করা সহজ হবে। মার্কেটে ভালো কোম্পানি আসলে দীর্ঘমেয়াদী স্থায়ী হবে। যখন কোম্পানিগুলোকে লিস্টিং করা হচ্ছে তখন ভালো কোম্পানির দিকে নজর দিতে হবে। তিনি বলেন, পুঁজিবাজার নিয়ে বিএসইসি গত ৬ মাসে যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা অনেকাংশে ইতিবাচক হয়েছে। নতুন করে যেসব সিদ্ধান্ত তারা নেবে তার ফল আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম ভোগ করবে।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রেসিডেন্ট মো. ছায়েদুর রহমান বলেন, সঞ্চয় কাজে লাগিয়ে উৎপাদনমুখী কার্যক্রমে যাওয়া কঠিন। এ জন্য উদ্যোক্তারা অর্থের জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু সুদের হারের জন্য অনেক সময় তা কঠিন হয়ে যায়। এ জন্য পুঁজিবাজার অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য একটি জায়গা হতে পারে।
তিনি বলেন, উদ্যোক্তাদের পুঁজিবাজারে আনতে হলে তাদের উৎসাহ দিতে হবে। উৎসাহ না পেলে সে আসবে না। এ জন্য উদ্যোক্তার সুরক্ষার বিষয়টি ভাবতে হবে। পুঁজিবাজারকে গতিশীল করতে হলে আন্তরিকতাও গভীর হতে হবে।