লকডাউনের কারণে এবারে কলকারখানা বন্ধ রয়েছে। কঠোর লকডাউনে রাস্তার মোড়ে দোকানও খুলছে না। বিভিন্ন স্থানে সংবাদপত্রের হকারও বসতে পারছে না। কলকারখানা বন্ধ থাকায় উত্পাদন ব্যাহত হচ্ছে। রপ্তানিতে ব্যাঘাত ঘটছে। পণ্য উত্পাদন থেকে শুরু করে পরিবহন, ক্রেতাভোক্তা পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনেকেই কর্মহীন হয়ে পড়ছে। অন্য দিকে, উত্পাদন বন্ধ থাকলেও শ্রমিকের বেতনভাতা পরিশোধ করতে হচ্ছে; যা নিয়ে উদ্বিগ্ন কলকারখানার মালিকরা। ব্যবসা না হলে তারা শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতনভাতা প্রদান করবে কীভাবে? সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুবাদে চাহিদাও বেড়েছে। ফলে, বেতন-ভাতাদি দিতে বিলম্ব করলে শ্রমিক প্রাপ্তিও অনিশ্চিত হয়ে যায়।
করোনার কারণে সরকারঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের সদ্ব্যবহার নিয়ে খোদ বাংলাদেশ ব্যাংকও সন্দেহ পোষণ করেছে যা প্রমাণ করে যে, প্রণোদনার ঋণ সঠিকভাবে বিতরণ হয়নি। একইভাবে করোনার কারণে ব্যাংক ঋণের কিস্তি শোধের সময়সীমা শিথিল করা হলেও জরিমানা ঠিকই বহাল রয়েছে। এই কঠোর লকডাউনে সব বন্ধ হলেও ব্যাংকের সুদ গুণতে হচ্ছে। সুদের উপর সুদ-দন্ডসুদ আরোপ হচ্ছে। সময়মতো মালামাল খালাস না করলে বন্দর কর্তৃপক্ষের জরিমানার হুমকি রয়েছে। গ্যাস-বিদ্যুত্ বিলেও একই সমস্যা। বিদ্যুত্ কর্তৃপক্ষ সময়মতো বিল না দিলে জরিমানা তো করছেই, বরং লাইন কেটে দিচ্ছে বা দেয়ার হুমকি দিচ্ছে। জরিমানা শুধু এখানেই শেষ নয়, রপ্তানিমুখী শিল্পে কর্মরত শ্রমিক, কর্মকর্তা এমনকি মালিক কারোই চলাচলের অনুমতি নেই। কিন্তু জরুরি দাপ্তরিক কাজে বের হলেই সবার জরিমানা করা হচ্ছে। ফলে, কিংকর্তব্যবিমূঢ় মালিকপক্ষ, এই শৃঙ্খল থেকে বের হওয়ার উপায় খুঁজছে।
উদ্যোক্তাদের মতে, পরিকল্পনামাফিক সমন্বয় না থাকায় পরিস্থিতি আরো জটিল হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ গত ২৪ জুলাই সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়ে দ্রুত পণ্য খালাসের অনুরোধ জানিয়েছে। আমদানি রপ্তানি কাজে জড়িত পণ্য পরিবহনের কাভার্ড ভ্যান লকডাউনের আওতামুক্ত থাকলেও এগুলো ব্যবস্থাপনা সঠিক করা যাচ্ছে না। কারণ, সংশ্লিষ্টরা ঘর থেকে বের হতে পারছে না। বন্দর কর্তৃপক্ষের চাপ রয়েছে দ্রুত পণ্য খালাসের। নইলে কনটেইনার জট ও জাহাজজটের শঙ্কা রয়েছে। বন্দর কার্যক্রম নির্বিঘ্ন রাখার স্বার্থেই দ্রুত মাল খালাস করা জরুরি, কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতি তার অনুকূলে নয় বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো।
এদিকে, উৎপাদন কার্যক্রম চালু না থাকলেও কারখানার নিরাপত্তা ও সংরক্ষণের স্বার্থে নিয়োজিত স্বল্পসংখ্যক জনবল ও উদ্যোক্তাদের কারখানায় উপস্থিতিও মানা হচ্ছে না। এক্ষেত্রে হয়রানি না করলে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ)।
সংশ্লিষ্টদের মতে, চলমান পরিস্থিতিতে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা চালু রাখাত কষ্টকর। বরং ব্যবসাই বন্ধ করে দিতে হয় কি না, সে চিন্তায় উদ্যোক্তারা। যদি সে রকম পরিস্থিতি হয়, তাতে সরকারের রাজস্ব আয়েও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ব্যবসায়ীরা আয় না করলে সরকারকে ভ্যাট- ট্যাক্স দেবে কীভাবে ?
তাদের মতে, পৃথিবীর অন্যান্য দেশে লকডাউনে কিংবা করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারিভাবে নগদ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই এই সুবিধা পেয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশে সে রকমটি সম্ভব হয়নি। বরং উদ্যোক্তা পর্যায়ে স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া হলেও তা সবাই পায়নি। বাড়তি ঋণের বোঝা চাপবে মনে করে কেউ কেউ সেই সুবিধাও নেননি। কারণ, ব্যবসা না করলে বাড়তি ঋণ নিয়ে উলটো সুদ গুণতে হবে। দায় বেড়ে যাবে। তা একজন সচেতন উদ্যোক্তার জন্য সহায়ক নয় বলেও মনে করছেন কেউ কেউ। তাদের মতে, এ অবস্থা চলতে থাকলে কলকারখানা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া গত্যন্তর না-ও থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে বেকারত্ব বৃদ্ধির শঙ্কা তো থাকছেই।