মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতি সুদহার বাড়ানোর একদিন পরই বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণের সুদহার আরও বাড়ানোর নির্দেশনা জারি করল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এই দফায় নতুন ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে সুদহার আরও দশমিক ২৫ শতাংশ বাড়বে। ফলে ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার হবে ১১ দশমিক ১৮ শতাংশ। রপ্তানি ঋণের সুদহার হবে সর্বোচ্চ ১০ দশমিক ১৮ শতাংশ। ফলে রপ্তানি ঋণের সুদহার দীর্ঘ সময় পর ডাবল ডিজিট অতিক্রম করল।
একই সঙ্গে বাড়বে আমানতের সুদহারও। তবে আগে বিতরণ করা ঋণের সুদের হার অপরিবর্তিত থাকবে। সেগুলোর সুদহার ঋণ বিতরণের ছয় মাস পর থেকে ব্যাংকগুলো বাড়াতে পারবে।
এ বিষয়ে সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এই বিধান মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হবে।
এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ করছে। এর মানেই হলো ঋণের সুদহার বাড়বে। বাজারে টাকার প্রবাহ কমবে। ঋণের সুদহার বাড়ানোর ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। বিনিয়োগ কম হবে।
সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের শর্তে ঋণের সুদহারকে বাজারভিত্তিক করা হয়েছে। এ কারণে বর্তমানে ঋণের সুদহার নির্ধারিত হচ্ছে সরকারের ছয় মাস মেয়াদি ট্রেজারি বিলের গড় সুদের হারের ভিত্তিতে। বর্তমানে ট্রেজারি বিলের গড় সুদহার ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
এর সঙ্গে ব্যাংকগুলো আগে সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ শতাংশ যোগ করে ঋণের সুদহার নির্ধারণ করত। ফলে আগে ঋণের সর্বোচ্চ সুদ ছিল ১০ দশমিক ৯৩ শতাংশ। আজ মঙ্গলবার থেকে এ সুদ বেড়ে দাঁড়াবে সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ১৮ শতাংশ।
একই সঙ্গে রপ্তানি ঋণের সুদহারও বাড়ানো হয়েছে। এ ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে ট্রেজারি বিলের গড় সুদহারের সঙ্গে ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ যোগ করতে হবে। ফলে আজ মঙ্গলবার থেকে এ ঋণের সুদহার বেড়ে দাঁড়াবে সর্বোচ্চ ১০ দশমিক ১৮ শতাংশ। আগে এর সুদহার ছিল সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। ফলে রপ্তানি ঋণের সুদহার ডাবল ডিজিট অতিক্রম করল।
আগে রপ্তানি ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে ছিল দীর্ঘ সময়। রপ্তানি খাতকে সহায়তা করতে এর সুদের হার কম রাখা হতো। সাম্প্রতিক সময়ে আইএমএফের চাপ ও মূল্যস্ফীতির হার কমাতে রপ্তানি ঋণের সুদহারও বাড়ানো হয়েছে। কয়েক দফায় এর সুদহার বাড়িয়ে ডাবল ডিজিট অতিক্রম করল।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বৈশ্বিক মন্দায় এমনিতেই রপ্তানি খাত বড় ধরনের চাপে আছে।
এর মধ্যে রপ্তানি ঋণের সুদহার বাড়ানোর ফলে এ খাতে চাপ আরও বাড়বে। আগে রপ্তানি ঋণের সুদহার ছিল ৫ শতাংশ। পরে তা ধাপে ধাপে বাড়ানোর ফলে এখন ডাবল ডিজিট অতিক্রম করল। এতে রপ্তানি খাতের খরচ বাড়বে।
এদিকে ঋণের সুদহার বাড়ানো হলে আমানতের সুদহারও বাড়বে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদহার বাড়ানোর বিষয়ে কিছু বলেনি। তবে ব্যাংকগুলোতে এখন আমানতের প্রবাহ তুলনামূলকভাবে আগের চেয়ে কম। বাড়তি আমানত সংগ্রহ করার জন্য ব্যাংকগুলো এর সুদহারও বাড়াবে।