“অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আনুমানিক চার মাসের মধ্যে কাজ সম্পন্ন হবে,” বলছেন ব্যাংক এশিয়ার এমডি সোহেল আর. কে. হুসেইন।
পাকিস্তানভিত্তিক ব্যাংক আলফালাহর বাংলাদেশ অংশের কার্যক্রম অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে দেশীয় বেসরকারি খাতের ব্যাংক এশিয়া।
বাংলাদেশ অংশের পুরো স্বত্ব বিক্রি করে চলে যাচ্ছে আলফালাহ। সব মিলে ব্যাংকটির মূল্য কত দাঁড়াচ্ছে, নিরীক্ষা প্রতিবেদন শেষ হলেই তা ঠিক হবে বলে ব্যাংক এশিয়া ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানাচ্ছে।
ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সোহেল আর. কে. হুসেইন বলেন, “অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আনুমানিক চার মাসের মধ্যে কাজ সম্পন্ন হবে।
“সকল প্রক্রিয়া ব্যাংক কোম্পানি আইন মোতাবেক করা হবে। তবে কিছু ধীর ও লম্বা প্রক্রিয়া আছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে। যেহেতু তারা (ব্যাংক আলফালাহ) ব্যবসা কার্যক্রম বিক্রি করে এ দেশ থেকে চলে যাচ্ছে, তাই বিক্রি থেকে পাওয়া তাদের অর্থ বাইরে পাঠানোর একটা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।”
এরই মধ্যে ব্যাংকপাড়ায় ব্যাংক আলফালাহ কত টাকায় কেনা হচ্ছে, তা নিয়ে আলোচনা শোনা যাচ্ছে। বিষয়টি জানতে চাইল আর. কে. হুসেইন বলেন, “বিভিন্ন মাধ্যমে বলা হচ্ছে ব্যাংক আলফালাহ ৬০০ কোটি টাকা দিয়ে কেনা হয়েছে। কিন্তু এটা সঠিক নয়। কারণ একটা নিরীক্ষা প্রতিবেদন করার পরেই ভ্যালুয়েশন কত আসবে, সেই বিষয় সঠিক ধারণা পাওয়া যায়।”
ব্যাংক আলফালাহ কীসের ভিত্তিতে কিনছে ব্যাংক এশিয়া, তার ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “আর্থিক ব্যবস্থাপনার দিক পর্যালোচনা করলে ব্যাংক এশিয়া অনেক ভালো একটি প্রতিষ্ঠান। কারণ ব্যাংক এশিয়ার পর্যাপ্ত পরিমাণে তারল্য রয়েছে। এমন কী দেশের অন্যান্য ব্যাংকের চেয়ে ব্যবস্থাপনা খরচও কম।
“ব্যাংক আলফালাহ একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ব্যাংক। বাংলাদেশে তাদের একটা অংশ কার্যক্রম পরিচালনা করছে, সেটিই দুই ব্যাংকের বোর্ডের সর্বসম্মতিতে অধিগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটা এমন ঘটনা নয় যে, আলফালাহ দুর্বল ব্যাংক তাই অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। কমার্শিয়াল চুক্তির আওতায় ব্যাংক এশিয়া অধিগ্রহণ করছে এটি।”
আর. কে. হুসেইন জানাচ্ছেন, ব্যাংক এশিয়ার বোর্ড পর্যালোচনা করেছে যে, ব্যাংক আলফালাহর ব্যালেন্স শিট অত্যন্ত ভালো। আবার তাদের কর্মীরাও দক্ষতাসম্পন্ন। ব্যাংকটির যা সম্পদ আছে, তা দিয়ে ব্যাংক এশিয়া উপকৃত হবে।
দুই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র সাইফুল ইসলাম বলেন, “ব্যাংক আলফালহ অধিগ্রহণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদন দিয়ে দিয়েছে। ব্যাংকটি যেহেতু পাকিস্তানভিত্তিক, সেহেতু অধিগ্রহণের জন্য সে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন দরকার, যা তারা এরই মধ্যে দিয়েছে। তবে অডিট করার পর বলা যাবে, ব্যাংকটির মূল্য আসলে কত আসবে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধতন কর্মকর্তা বলছেন, দুটিই সবল ব্যাংক। তাই ব্যাংক কোম্পানি আইন মোতাবেক দুই বোর্ডের সিদ্ধান্তে অধিগ্রহণ করছে ব্যাংক এশিয়া।
বাংলাদেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে শুধু ব্যাংক এশিয়ারই ব্যাংক অধিগ্রহণের অভিজ্ঞতা আছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো কোনো বিদেশি ব্যাংকের বাংলাদেশ অংশের কার্যক্রম অধিগ্রহণ করতে চলেছে তারা।
এর আগে ২০০১ সালে ব্যাংক এশিয়া কানাডাভিত্তিক নোভা স্কোশিয়া এবং একই বছর পাকিস্তানের আরেক ব্যাংক মুসলিম কমার্শিয়াল ব্যাংকের বাংলাদেশি কার্যক্রম অধিগ্রহণ করে।
ব্যাংক আলফালাহ পাকিস্তানে ১৯৯৭ সালে কার্যক্রম শুরু করে। এর মালিকানায় রয়েছে আবুধাবি গ্রুপ। পাকিস্তানের বাইরে আফগানিস্তান, বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) এর কার্যক্রম রয়েছে। এর প্রধান কার্যালয় পাকিস্তানের করাচিতে। ২০০৫ সালে ১ কোটি ৭৮ লাখ ৮০ হাজার ডলারে শামিল ব্যাংক অব বাহরাইন কেনার মাধ্যমে বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করে ব্যাংক আলফালাহ। পাকিস্তানের বাইরে বাংলাদেশ হল প্রথম দেশ, যেখানে সেবা সম্প্রসারণ করে ব্যাংকটি।