তথ্য ও গণমাধ্যম খাত হবে উন্নয়নের অন্যতম প্রধান সহায়ক শক্তি

Untitled-11-5c5f2ec279ab3

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে গণমাধ্যমবান্ধব ও গণমাধ্যম বিকাশে সহায়ক সরকার বলে অভিহিত করেছেন তথ্যমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, দ্রুত বিকাশমান তথ্য ও গণমাধ্যম খাত হবে উন্নয়নের অন্যতম প্রধান সহায়ক শক্তি। তথ্যের অবাধ প্রবাহ যেমন সুশাসন প্রতিষ্ঠায় দুর্নীতি প্রতিরোধ করবে, তেমনি চার সামাজিক ব্যাধি মাদক, ভেজাল, জঙ্গি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ ও উদ্বুদ্ধ করবে।

সমকালকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তথ্যমন্ত্রী আরও বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বেই গোটা জাতি সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। একের পর এক উন্নয়নের সোপান তৈরি হচ্ছে। সৎ এবং সাহসী রাজনীতিক হিসেবে বিশ্বে সুপরিচিত জননেত্রী শেখ হাসিনা সব সময়ই দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স অবস্থানে রয়েছেন। তিনি জনগণের ভোটে চতুর্থ দফায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর দুর্নীতিবিরোধী অভিযান আরও জোরদার করেছেন। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। সেইসঙ্গে শতভাগ সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য দুর্নীতির পাশাপাশি মাদক, ভেজাল, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান আরও জোরদার করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পররাষ্ট্র এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসা তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, একমাত্র বিএনপির দৃষ্টিতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হলেও দেশ-বিদেশের সবাই এই নির্বাচনকে ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করেছে। ভারত, চীন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে বর্তমান সরকারকে শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দিত করছেন। সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ হওয়ায় এই নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের কাছেও প্রশংসিত হয়েছে।

ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, দেশজুড়ে এখন উন্নয়নের ছোঁয়া। গত ১০ বছরে দেশ বদলে গেছে। স্বল্পোন্নত বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ। খাদ্য ঘাটতির বাংলাদেশ খাদ্যে উদ্বৃত্ত। মাথাপিছু আয় ৬০০ থেকে ২০০০ ডলারে উন্নীত হয়েছে। দেশ এখন ক্ষুধামুক্ত। দারিদ্র্য অর্ধেকে নেমে এসেছে। কুঁড়েঘর এখন কবিতায়, বাস্তবে নেই। খালি পায়ের মানুষ চোখে পড়ে না। ছেঁড়া কাপড় পরিহিত মানুষ খুঁজে পাওয়া দুস্কর। আকাশ থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম চেনা যায় না। হাতিরঝিলে গেলে মনে হয়, এ যেন বিদেশ. আধুনিক কোনো দেশের ভূখণ্ড। কোনো জাদুর ছোঁয়ায় এভাবে দেশ বদলে যায়নি। শেখ হাসিনার জাদুকরি নেতৃত্বের কারণেই গত ১০ বছরে দেশে আমূল পরিবর্তন এসেছে। আর মানুষ শেখ হাসিনার ওপর আস্থা রেখেই আবারও বিপুলভাবে নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে জয়ী করেছে।

এই ১০ বছরে বিএনপির নেতিবাচক রাজনীতির চিত্র তুলে ধরে তথ্যমন্ত্রী আরও বলেছেন, ওই সময়ে বিএনপি উন্নয়নের বিরুদ্ধে গিয়ে ধ্বংসাত্মক রাজনীতি করেছে। রাজনীতির নামে দিনের পর দিন হরতাল ডেকে মানুষকে অবরুদ্ধ করেছে। পেট্রোল বোমায় মানুষ পুড়িয়েছে। জনগণ ও রাষ্ট্রের সম্পদ নষ্ট করেছে। এসব কারণেই গত নির্বাচনে মানুষ বিএনপিকে প্রচণ্ডভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। আওয়ামী লীগের অন্যতম মুখপাত্র ও চট্টগ্রাম-৭ আসনে তিনবারের এমপি ড. হাছান মাহমুদ গত নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণকে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখছেন। তিনি ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির মনোনয়নে জয়ী সংসদ সদস্যদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, বিএনপির সংসদ সদস্যরা শপথ গ্রহণ না করলে সেটা জনগণকে অপমান করার শামিল হিসেবেই বিবেচিত হবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি, চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক, চট্টগ্রামের মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সরকারি ইন্টারমিডিয়েট কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরিবেশবিদ ড. হাছান মাহমুদ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। তিনি বলেছেন, সংসদে সংখ্যা বড় বিষয় নয়। বিএনপির আটজন সদস্য চাইলেই সরকারের ক্রটি-বিচ্যুতি ধরিয়ে দিয়ে সংসদে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। সংসদকে প্রাণবন্ত করতে পারেন। কিন্তু বিএনপি তাদের নেতিবাচক রাজনীতির ধারাবাহিকতা আগামী দিনের রাজনীতিতে অব্যাহত রাখলে জনগণের সঙ্গে তাদের দ্বন্দ্ব আরও বাড়বে। এটা বিএনপিকে আরও সংকটে ফেলবে, যা আওয়ামী লীগ কখনও প্রত্যাশা করে না।

২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ না নেওয়াটা বিএনপির জন্য আত্মহননের সিদ্ধান্ত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন বেলজিয়াম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, ব্রাসেলসের ব্রিজ ইউনিভার্সিটির ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং বেলজিয়ামের লিমবার্গ ইউনিভার্সিটির সাবেক শিক্ষক ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, এবার সংসদে না এলে সেটাও বিএনপির জন্য আত্মহননের কাছাকাছি সিদ্ধান্ত হবে। গণফোরামের দুই নেতা মৌলভীবাজার-২ আসনের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ ও সিলেট-২ আসনের মোকাব্বির খান শপথ গ্রহণের পক্ষে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। সবার প্রত্যাশা, বিএনপির নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাও তাদের পথ অনুসরণ করবেন। সংসদে বিএনপির পক্ষ থেকে সরকারের বিপক্ষে জোরালো ভূমিকা পালন করবেন।

প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি সংসদে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের পাশাপাশি তাদের কাছ থেকে ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দেওয়াসহ সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা প্রত্যাশা করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, জাতীয় পার্টি আগের সরকারে থেকেও বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করেছিল। কিন্তু ওই সময়ে জাতীয় পার্টিকে পুরোপুরি বিরোধী দল হিসেবে মেনে নিতে জনগণের কষ্ট হচ্ছিল। এবার ওই সমস্যা নেই। আর জাতীয় পার্টি এবার কার্যকর বিরোধী দলের ভূমিকা নিলে তাদের সাংগঠনিক অবস্থান রাজপথেও প্রতিষ্ঠিত হবে।

বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারীর দায়িত্ব পালন করে আসা ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ১৪ দল একটি রাজনৈতিক পল্গ্যাটফরম, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের জোট। এই জোট থাকবে। মৌলিক ইস্যুতে ১৪ দলের ঐক্য ও সংহতি আগের মতোই অটুট থাকবে। তবে বর্তমান সরকার আওয়ামী লীগের। ১৪ দলের অন্য শরিক রাজনৈতিক দলগুলো সরকারে নেই। সুতরাং তারা আগের মতো এবারও সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করবে। তিনি সুশাসন প্রতিষ্ঠায় দেশবাসীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের কাছ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ আরও বলেছেন, বিশ্বে কোনো সরকারের পক্ষেই শতভাগ নির্ভুল কাজ করা সম্ভব নয়। এটা স্বাভাবিক। এর সমালোচনাও হতে পারে। তাই বলে সরকারের সমালোচনা করতে গিয়ে সাংঘর্ষিক কিছু দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনে না। আওয়ামী লীগ সরকার সবাইকে নিয়ে দেশকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিতে চাইছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতিবাচক রাজনীতির অবসান ঘটিয়ে সবাইকে নিয়ে দেশ ও জাতির উন্নয়নে কাজ করতে চাইছেন। এ জন্য সবার সহযোগিতা দরকার।

নির্বাচন বর্জনের সংস্কৃতির অবসান প্রত্যাশা করছেন ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, সব দল উপজেলা নির্বাচনে আসুক, এটা আওয়ামী লীগের প্রত্যাশা। বিএনপিও উপজেলা নির্বাচনে আসবে। সেটা না হলে বিএনপির অনেকেই আলাদাভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। ইস্ট ওয়েস্ট এবং নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করে আসা হাছান মাহমুদ আরও বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীদের ফিরিয়ে এনে দণ্ড কার্যকর করা হবে। যুদ্ধাপরাধের বিচার অব্যাহত থাকবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনতে আইনগত প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছেন গত সংসদে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করা ড. হাছান মাহমুদ।

Pin It