যুক্তরাষ্ট্র আরও বেশি বিনিয়োগে আগ্রহী

Bangladesh-&-Juktarasta-5cc35f3968c81

বাংলাদেশে আরও বেশি বিনিয়োগে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র। এ মুহূর্তে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক খুবই চমৎকার ও উষ্ণ। বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন কিংবা মানবাধিকার পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়; বরং কীভাবে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে বেশি বিনিয়োগের সুযোগ আছে, সে বিষয়টিতেই প্রাধান্য দিচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম প্রভাবশালী রাষ্ট্রটি।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। পরে সমকালের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নিরাপত্তা সতর্কবার্তা জারি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের একটি রুটিন ওয়ার্ক। এর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের কোনো যোগসূত্র নেই।

কূটনৈতিক সূত্র জানায়, চলতি মাসে বিশ্বের ৩৫টি দেশে ভ্রমণ সতর্কবার্তা হালনাগাদ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষ করে ক্রাইস্টচার্চে হামলার পর বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের নিরাপত্তা সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর। নিরাপত্তা সতর্কবার্তার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন মাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্তকে গুরুত্ব দেয়। এসব তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার অবস্থা কেমন, সেটাই সতর্কবার্তার মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী ভ্রমণ-সংক্রান্ত নিয়মিত ভ্রমণ সতর্কবার্তা না দিলে কোনো নাগরিক যদি কোথাও গিয়ে নিরাপত্তা সমস্যায় পড়েন, তাহলে তিনি ফেডারেল কোর্টে মামলা করতে পারেন। এ কারণে দায়মুক্ত থাকার জন্য নিয়মিতভাবে সতর্কবার্তা হালনাগাদ করে যুক্তরাষ্ট্র।

কূটনীতি বিশ্নেষক হুমায়ুন কবীর বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং দু’দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক খুব ভালো এটাই প্রমাণ করে। সতর্কবার্তা সম্পর্কে তিনি বলেন, এ ধরনের বার্তা যুক্তরাষ্ট্র কোনো স্থানের নিরাপত্তা-সংক্রান্ত একটা ধারণা থেকে দেয়। এ ধরনের বার্তা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের কোনো প্রতিফলন ঘটায় না। তবে যে দেশের ব্যাপারে সতর্কবার্তা দেয়, স্বাভাবিকভাবেই সে দেশের কিছুটা মন খারাপ হয়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, এ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক খুবই চমৎকার ও উষ্ণ। খুব ভালো সম্পর্কের কারণেই যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে আরও বেশি বিনিয়োগে আগ্রহী। ওয়াশিংটনে বৈঠকের সময় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন কিংবা মানবাধিকার বিষয় নিয়ে কোনো আলোচনা করেননি। এটা থেকে বোঝা যায়, এ বিষয়গুলো তাদের কাছে খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়; বরং বৈঠকের আলোচনায় মূল বিষয় ছিল বাংলাদেশে কীভাবে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের আরও বেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। এ ধরনের কয়েকটি ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

আব্দুল মোমেন বলেন, সমুদ্রসম্পদ, জ্বালানি খাতসহ কয়েকটি খাতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবেই আলোচনা হয়েছে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান উন্নয়ন সহযোগী হিসেবেও যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা আরও বিস্তৃত করতে আগ্রহ দেখিয়েছে। বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং মানবসম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র আরও বেশি সহায়তার আগ্রহ দেখিয়েছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের বিস্তৃতি এবং সহজ প্রবেশের বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়েছে। অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের বিষয়টিই ছিল মূল লক্ষ্য।

তিনি জানান, ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিতে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও নিবিড় করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এই স্ট্র্যাটেজির মাধ্যমেও তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে নতুন বিনিয়োগ করতে চায়। এ ক্ষেত্রে চীনের ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড পরিকল্পনার ব্যাপারেও তাদের রক্ষণশীল মনোভাব দেখা যায়নি; বরং তারা নিজেদের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিকে এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিতেই বেশি আগ্রহী।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, রোহিঙ্গা সংকটের অবসান না হওয়া পর্যন্ত এ সংকটে বাংলাদেশের পাশে থাকার কথা দৃঢ়ভাবে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তারা রোহিঙ্গাদের জন্য অর্থ সহায়তা অব্যাহত রাখবে। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের যত দ্রুত সম্ভব মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতেও সহযোগিতার কথা জানিয়েছে। সার্বিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।

সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিতে বাংলাদেশ এ মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে তারা বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতেই আগ্রহী হবে, এটাই স্বাভাবিক। তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ কিছু নিয়ে কিছু বক্তব্য দিতে পারে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের একটা অবস্থানও থাকতে পারে; কিন্তু এর ফলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে কোনো ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না, এটা পরিস্কার। তা ছাড়া রোহিঙ্গা সংকট ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র সক্রিয় সমর্থন নিয়েই বাংলাদেশের পাশে আছে। এ সংকট মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রের এই সমর্থন অবশ্যই বাংলাদেশের জন্য একটা বড় শক্তি।

Pin It