গত ২০ বছরে কোটি টাকার উপরে ঋণ খেলাপিদের তালিকা, কী পরিমাণ ঋণের সুদ মওকুফ করা হয়েছে, ঋণের সুদ মওকুফের ক্ষেত্রে যে অনিয়ম চলছে, তা বন্ধে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তার তথ্য আগামী ২৪ জুনের মধ্যে দাখিল করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।
এই প্রতিবেদন দাখিলে আরও সময় চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক আবেদন করার পর বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেয় বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের বেঞ্চ।
আদালত কেন্দ্রীয় ব্যাংককে হুঁশিয়ার করে বলেছে, এই তালিকা দাখিল না করলে পরিণতি ভোগ করতে হবে।
ঋণ খেলাপিদের আরও সুযোগ দেওয়ার পদক্ষেপের মধ্যে তথ্য চেয়ে আদালতের এই সতর্কবার্তা এল।
আদালতে বাংলাদেশের ব্যাংকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন মো. মনিরুজ্জামান। রিট আবেদনকারী পক্ষে শুনানি করেন মনজিল মোরসেদ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ খেলাপির তালিকা দাখিল না করায় গত ৩০ এপ্রিল হাই কোর্ট অসন্তোষ প্রকাশ করার পাশাপাশি ১৫ দিনের মধ্যে তা দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছিল।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী মনিরুজ্জামান আদালতকে বলেন, আইনগতভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই তালিকা দাখিল করার ‘এখতিয়ার নেই’।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই বক্তব্যে আপত্তি জানিয়ে রিট আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, সংবিধান অনুযায়ী আদেশ দেওয়ার এখতিয়ার রয়েছে হাই কোর্টের।
গভর্নরের প্রতি নির্দেশনা ছিল
# এক কোটি টাকার উপরে ঋণ খেলাপিদের নাম, ঠিকানা, তালিকা আদালতে দাখিল করতে হবে।
# অর্থ পাচারের ক্ষেত্রে কী কী ব্যবস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়েছে এবং এখন পর্যন্ত কী পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে সে বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।
# ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে এবং ঋণের সুদ মওকুফের ক্ষেত্রে যে অনিয়ম চলছে, তা বন্ধে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।
ব্যাংক খাতে অর্থ আত্মসাৎ, ঋণ অনুমোদনে অনিয়ম, সুদ মওকুফ সংক্রান্ত বিষয় তদন্ত ও সুপারিশ প্রনয়নে কমিশন গঠন করতে গত ২৩ জানুয়ারি সংশ্লিষ্ট ৫ সচিবসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে উকিল নোটিস দেওয়া হয়েছিল।
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ এর পক্ষে রেজিস্ট্রি ডাকযোগে নোটিসটি পাঠিয়েছিলেন মনজিল মোরসেদ।
সাত দিনের মধ্যে কমিশন গঠনের সময় বেধে দিয়ে নোটিসে অর্থ আত্মসাৎ, ঋণ অনুমোদনে অনিয়ম, সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে ঋণের সুদ মওকুফ সংক্রান্ত বিষয় তদন্ত ও তা বন্ধে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য ১৯৫৩ সালের ইনকোয়ারি কমিশন অ্যাক্টের অধীনে একটি কমিশন গঠন করার অনুরোধ করা হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রী সচিবালয়ের সচিব, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সচিব, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে এ নোটিসটি পাঠনো হয়।
সে নোটিসে ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, সিটি ব্যাংক এন এ বাংলাদেশের সাবেক সিইও মামুন রশিদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন প্রতিনিধি ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধির সমন্বয়ে কমিশন গঠন করতে অনুরোধ করা হয়েছিল।
এই অর্থ চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি।