করোনাভাইরাসে মৃত্যু ৩ লাখ ছাড়াল

coronavirus-russia-140520

বিশ্বে করোনাভাইরাস মহামারীতে মৃতের সংখ্যা ৩ লাখ ছাড়িয়েছে; তবে মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধির গতি খানিকটা কমেছে।

চীনে প্রাদুর্ভাবের ৯০ দিন পর গত ১০ এপ্রিল কোভিড-১৯ মহামারীতে বিশ্বে মৃতের সংখ্যা লক্ষ ছুঁয়েছিল।

তার আট দিন পর ৫০ হাজার মানুষের মৃত্যু এই সংখ্যাকে দেড় লাখ ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। তার পরের ৫০ হাজারের মৃত্যু ঘটতে সময় লেগেছিল সাত দিন।

মৃতের সংখ্যা আড়াই লাখে উন্নীত হতে এরপর আরও আট দিন লেগেছিল। তার ১০ দিন পর মৃতের সংখ্যা আরও ৫০ হাজার বাড়ল।

বৃহস্পতিবার রাতে জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির হালনাগাদ করা তথ্য বলছে, বিশ্বে কোভিড-১৯ রোগে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৭৪ জন।

এই মৃত্যুর প্রায় এক-তৃতীয়াংশই ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রে। আর মৃত্যুর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ঘটেছে ইউরোপে।

করোনাভাইরাস মহামারীর শুরুতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) আক্রান্তদের মধ্যে ২ শতাংশের মৃত্যুর আশঙ্কার কথা জানিয়েছিল।

সেটা ছিল ফেব্রুয়ারি মাসের ঘটনা; তারপর পরিস্থিতির ভয়াবহতা দেখে ৩ মার্চ বলেছিল, মৃত্যুর হার ৩ দশমিক ৪ শতাংশে যেতে পারে।

কিন্তু মৃতের সংখ্যা যখন লাখ ছাড়ায়, তখন দেখা যায় আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় ৬ শতাংশ মৃত্যুর করাল গ্রাসে পড়ছে। এই সংখ্যাটি যখন দুই লাখ ছাড়ায়, তখন হারটি বেড়ে ৭ শতাংশে দাঁড়ায়।

মৃতের সংখ্যা তিন লাখ ছাড়ানোর পর হিসেব কষে দেখা যাচ্ছে, হারটি ৭ এর সামান্য নিচে নেমে এসেছে।

জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে এ নাগাদ আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৪ লাখ। এরই মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১৫ লাখ ৭৬ হাজার জন।

মৃত্যুর মতো আক্রান্তের সংখ্যায়ও বিশ্বে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র; মোট কোভিড-১৯ রোগীর প্রায় এক-তৃতীয়াংশই ওই দেশটির নাগরিক।

করোনাভাইরাস মহামারীতে ফাঁকা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সান ডিয়াগো ইউনিভার্সিটি; এই ফাঁকে মানুষের পথে বেরিয়ে এল এই কচ্ছপটি। ছবি: রয়টার্স

( করোনাভাইরাস মহামারীতে ফাঁকা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সান ডিয়াগো ইউনিভার্সিটি; এই ফাঁকে মানুষের পথে বেরিয়ে এল এই কচ্ছপটি। ছবি: রয়টার্স )

বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৪ লাখ। আর মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৪ হাজার ৫৭৫ জন।

যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বিপর্যয়কর অবস্থা নিউ ইয়র্কে; ১৭ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে েএই রাজ্যটিতে।

যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্তদের মধ্যে ৬ শতাংশের মৃত্যু ঘটেছে; যে হার বিপর্যস্ত অন্য দেশগুলোর তুলনায় কম।

বেলজিয়ামে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি; সেখানে মোট আক্রান্তের ১৬ দশমিক ৪ শতাংশের মৃত্যু ঘটেছে। তবে দেশটি এই সময়ে কোভিড-১৯ রোগের লক্ষণ নিয়ে মৃতদেরও তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।

বেলজিয়ামে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫৪ হাজার জন, তার মধ্যে ৯ হাজার জনের মৃত্যু ঘটেছে।

মৃতের সংখ্যায় ইউরোপে শীর্ষে এখন যুক্তরাজ্য; দেশটিতে ৩৩ হাজার জনের বেশি মারা গেছে। আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ৩৪ হাজার।

মৃতের সংখ্যায় ইতালির অবস্থান এখন তৃতীয়, দেশটিতে এখন অবধি ৩১ হাজার জন মারা গেছে। দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ২৩ হাজার।

মৃতের সংখ্যায় এর পরে রয়েছে স্পেন; দেশটিতে ২ লাখ ২৮ হাজার আক্রান্তের মধ্যে ২৭ হাজার জন মারা গেছে। ফ্রান্সে পৌনে ২ লাখ আক্রান্তের মধ্যে মারা গেছে ২৭ হাজার জন।

করোনাভাইরাস মহামারীকে পাত্তা না দেওয়া প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারো দেশ ব্রাজিলে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ফ্রান্স-জার্মানির চেয়েও এখন বেশি। মৃতের সংখ্যায় দেশটি এখন বিশ্বে ষষ্ঠ অবস্থানে।

ব্রাজিলে প্রায় দুই লাখ আক্রান্তের মধ্যে মৃত্যু ঘটেছে ১৩ হাজার ৫৫৫ জনের। দেশটিতে মোট আক্রান্তের ৭ শতাংশের মৃত্যু ঘটেছে।

আক্রান্তের সংখ্যায় এখন বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের পরেই রয়েছে রাশিয়া। দেশটিতে আক্রান্ত প্রায় আড়াই লাখ। আর মৃতের সংখ্যা ২ হাজার ৩০৬ জন।

ভারতে মৃতের সংখ্যা এখন রাশিয়ার চেয়ে বেশি, আড়াই হাজার জন। ভারতে রোগীর সংখ্যা এখন চীনকে ছুঁই ছুঁই করছে।

ভারতে মোট আক্রান্ত এখন ৭১ হাজার ৭০০ জন; ভারতের প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৫ হাজার, এর মধ্যে মারা গেছে ৭৭০ জন।

বাংলাদেশে ১৮ হাজারের বেশি আক্রান্তের মধ্যে মৃতের সংখ্যা ২৮৩ জন। বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা এখন জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া কিংবা ইন্দোনেশিয়ার চেয়ে বেশি।

আক্রান্ত ও মৃতের এই তালিকা শুধু যাদের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে, তাদের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি বলে মনে করছেন গবেষকরা।

গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে মানবদেহে করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রথম ঘটনা শনাক্ত হয়। তার প্রায় এক মাস পর প্রথম মৃত্যুটি চীনে ঘটেছিল ১১ জানুয়ারি।

চীনের বাইরে প্রথম মৃত্যুটি ঘটেছিল প্রায় এক মাস পর ২ ফেব্রুয়ারি ফিলিপিন্সে। সেদিন মোট মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৩৬২।

মৃতের সংখ্যা ১ হাজারে পৌঁছেছিল ১০ ফেব্রুয়ারিতে। অর্থাৎ প্রথম মৃত্যুর পর মৃতের সংখ্যা ১ হাজারে পৌঁছতে লেগেছিল ঠিক এক মাস। এরপর মৃতের সংখ্যা দুই হাজারে যেতে সময় লাগে ৮ দিন।

তার এক মাস পর ১৯ মার্চ মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়ায়। এরপর ইউরোপে কাবু হয়ে যাওয়ায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে মৃত্যু। প্রতিদিন প্রায় ৫ হাজার মৃত্যু ঘটতে থাকে। ইউরোপের পর আমেরিকায় বিপর্যয় নামিয়ে আনে করোনাভাইরাস।

ছোঁয়াচে এই রোগের বিস্তার ঠেকাতে মার্চ থেকেই লকডাউনে গিয়েছিল বিভিন্ন দেশ; কিন্তু মাস গড়ানোর পর পরিস্থিতির উন্নতি দেখে সবাই এখন বিধিনষেধ শিথিলের পথে হাঁটলেও তাতে নতুন করে সংক্রমণ বাড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে বলে হুঁশিয়ার করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

কোভিড-১৯ প্রতিরোধে টিকা তৈরিতে বিশ্বের বড় বড় দেশগুলো দ্রুত এগিয়ে চললেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, হয়ত কোভিড-১৯ রোগ কখনোই বিশ্ব থেকে নির্মূল হবে না।

তা যদি হয়, তবে এই করোনাভাইরাসকে সঙ্গী করেই বেঁচে থাকার নতুন পথ খুঁজতে হবে মানুষকে; যা বদলে দেবে বিশ্ববাসীর জীবনাচরণ।

Pin It