‘আমি একা কিছুই করিনি, উপদেষ্টারাও ছিলেন’

zay-5d9c7c9b7385d

জায়েদ খান। ঢাকই চলচ্চিত্রের একজন নায়ক তিনি। তবে নায়কের চেয়ে আলোচনায় আছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে। গত মেয়াদে নেতৃত্বে আসা কমিটির নানা বিষয়ে বিতর্কে উঠছে এখন। বিষয়গুলো নিয়েই কথা হয় তার সঙ্গে…

দুই বছর চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির দায়িত্ব পালন করলেন। সমিতির উন্নয়নে কী কী করলেন?

দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে আমাদের কমিটিকে। শুরুতেই কোর্ট থেকে ক্ষমতা নিতে হয়েছে। সেই যে শুরু। এরপর তো দুই বছর পার করলাম। সমিতির উন্নয়নে কী কী করেছি সেটা তো সবারই জানা। শিল্পী সমিতিতে শিল্পীদের বসে সময় কাটানোর সুন্দর একটা পরিবেশ করেছি, শিল্পী সমিতির তত্ববধানে দুই কোরাবনির ঈদেই কোরবানি দেয়া হয়েছে। কোরাবানির সেই গোস্ত শিল্পীদের বাসায় বাসায় পৌছে দেয়া হয়েছে।সঙ্গে আরও অনেক উপহারও দিয়েছি। আর্থিকভাবে অসচ্ছ্বল শিল্পীদের পাশে দাঁড়িয়েছে সমিতি। চিকিৎসার জন্য শিল্পী সমিতির ফান্ড থেকে অর্থও দেয়া হয়েছে। বিশাল আকারে পিকনিক করেছি। যেখানে তারকাশিল্পীদের উপস্থিতি গণমাধ্যমের কল্যাণে সবাই দেখেছেন।

তাহলে আপনাদের ব্যর্থতার জায়গা কোনটি? এখন সমালোচনার শিকার হচ্ছেন কেনো?

যেই ক্ষমতায় আসুক। একশ’ভাগ কাজ তো কেউ করতে পারবে না। অনেক প্রতিকূলতার মাঝেও আমরা আমাদের সেরাটা করার চেষ্টা করেছি।  এরপরও ভুল তো থাকবেই কেউ ভুলের উর্ধ্বে নয়। সেই ভূলগুলো নিয়েই অনেকে কথা বলছেন। অজান্তে যে ভুল হয়েছে সে ভুলের জন্য ক্ষমা চাচ্ছি।

নতুন মেয়াদে ক্ষমতায়ে এলে কোন বিষয়ের দিকে নজর দিবেন? 

এখানে নজর দেয়ার অনেক বিষয়ই আছে। আমরা আমাদের কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষা করবো। শিল্পীদেরর জন্য আলাদা কল্যাণ ফান্ড করবো। যে কল্যাণ ফান্ড থেকে শিল্পীদের সহায়তা করা হবে। যেনো কখনও কারও কাছে হাত পাতে না হয়। এছাড়াও শিল্পীদের আবাসনের দিকে নজর দেবো। প্রতিটি শিল্পীকে আলাদা ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা করবো ইনশাল্লাহ।

দাবী করছেন ভালো ভালো কাজ করেছেন। তাহলে শিল্পী সমিতি’র আগাম নির্বাচন নিয়ে এতো বিতর্কের উঠছে কেনো?

বিষয়টি নিয়ে আমরাও অবাক। যারা বিতর্ক উসকে দিচ্ছেন তারা  রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে শিল্পী সমিতি ব্যবহার করতে চায় এবং সবাই এর মাধ্যমে নেতৃত্বে আসতে চায়। শুরু থেকে দেখছি সমিতির নেতৃত্বের এই চেয়ারটার প্রতি অনেক মানুষের আকাঙ্ক্ষা-বিদ্বেষ। ভালো কাজগুলোকে ম্লান করে কীভাবে ছোট করা এবং এখান থেকে সরিয়ে কেউ কেউ ব্যক্তি স্বার্থে সমিতিকে ব্যবহার করতে চায়। এ কারণে এত বিতর্ক ও সমালোচনা।

আপনার কমিটি ১৮১ জন সদস্যকে ভোটার অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। এটা কী বিতর্কের বিষয় না?

আমরা কিন্তু অনিয়ম কিছু করিনি। বলা হচ্ছে, ১৮১ জন সদস্যকে বাদ দেয়া হয়েছে। আসলে কিন্তু বাদ দেয়া হয়নি। ভোটপ্রদান করতে পারতো এমন কিছু শিল্পীকে যাচাই বাছাই করে সহযোগী সদস্য করা হয়েছে। সংবিধানের ৭(ঙ) ধারায় লেখা আছে, ‘ভুলবশত কখনো সমিতির সদস্যপদ দেওয়া হইয়া থাকে, অথচ তাদের যোগ্যতা নাই; সেক্ষেত্রে বর্তমান কার্যকারী পরিষদ যাচাই-বাছাই করিয়া সদস্যপদ পুনঃ মূল্যয়ন করিবার অধিকার রাখে’। আমাদের কমিটি পুনঃ মূল্যায়ন করেছি। এখানে আমি একা কিছুই করিনি। সোহেল রানা, ফারুক, আলমগীর, উজ্জ্বল, ইলিয়াস কাঞ্চন, হাসান ইমান, মাসুম বাবুল তাদের উপদেষ্টা মণ্ডলী গঠন করেছি তারাই করেছেন। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, ওইসব শিল্পীদের আরেকটু মানউন্নয়ন করা দরকার। সেজন্য তাদের পূর্ণ ভোটার থেকে সহযোগী সদস্য করা হয়েছে। তাদের কাজের উন্নতি হলে আবার পূর্ণ সদস্য করা হবে। তবে এ ক্ষেত্রে দু’জন ভুলে বাদ হতে পারে আবার ক্ষমতায় এলে ভুলটা শুধরে নেবো।

গঠনতন্ত্রের ৫(ক) ধারা দেখিয়ে যে শিল্পী বাংলাদেশে মুক্তি পাওয়া ন্যুনতম পাঁচটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে অবিতর্কিত গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেনি তাদের বাদ দিয়েছেন।  আবার এই নিয়ম ভঙ্গ করে বেশ কয়েকজনকে সদস্যও করেছেনন। এমন দ্বিমূখী নীতি কেনো?

সংবিধানে লেখা আছে সব কমিটি মেয়াদের সময় নতুন সদস্যপদ দেওয়ার বিধান রাখে। এর আগের কমিটি ৮৫ জনকে দিয়েছে, তার আগের কমিটি ১১০ জনকে ইন্টারভিউ ছাড়াই সদস্যপদ দিয়েছে। ৪৮ জন সদস্য পদ চেয়েছিল তার মধ্য থেকে আমরা মাত্র ১৯ জনকে সদস্যপদ দিয়েছি, তাও ইন্টারভিউ সাপেক্ষে। সিনেমা নির্মাণের সংখ্যা এখন কম, তাই শিল্পীদের ছবি করাও কমে গেছে। সেজন্য আমাদের কার্যকরী পরিষদ সিদ্ধান্ত নেয় যদি তিনটা ছবি হয় ‘লিড ক্যারেকটার’-এ তাহলে আমরা তাদের সদস্যপদ দেব এবং জেনারেল মিটিংয়ে পাশ করে নেব। তিনটি ছবি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে যারা করেছে তাদেরকেই সদস্য করেছি। গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দুটো ছবি করলেও তাদের সদস্য করিনি। কলা বিক্রেতা, নাপিত, মাছ বিক্রেতা শিল্পী সমিতির মেম্বার হয়ে থাক এটা চাই না। পেশাগতভাবে যারা শিল্পী তাদেরকেই রাখা হয়েছে। এখানে কোনো ব্যক্তিগত ক্ষমতা কাজে লাগাইনি।

Pin It