তথ্য যাচাইয়ে মাঠে মন্ত্রী, পেলেন ‘অমিল’

1595428129.lgd

রাজধানীতে জলাবদ্ধতা নিরসনে জরুরি সভায় পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ঢাকা ওয়াসার গৃহীত কার্যক্রম সম্পর্কে দেওয়া তথ্য পুরোপুরি সঠিক নয়, এমন দাবি ওঠায় দুই সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন খাল ও পাম্প হাউজ পরিদর্শন করেছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।

তবে পরিদর্শনে গিয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনে ঢাকা ওয়াসা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যে আশানুরূপ মিল পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী।

স্থানীয় সরকার বিভাগ বুধবার (২২ জুলাই) সন্ধ্যায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, রাজধানীতে জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন দপ্তর বিভাগ কর্তৃক গৃহীত কার্যক্রম পর্যালোচনা ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন সংক্রান্ত বিষয়ে বুধবার মন্ত্রণালয় থেকে অনলাইনে এক সভার আয়োজন করেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সভায় ঢাকা ওয়াসা এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে স্বাভাবিক উপায় পানি বের করতে না পারায় পাম্পিং করে পানি বের করে দিচ্ছেন বলে জানান। কিন্তু ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস দাবি করে বলেন পাম্পিং হাউজগুলো সম্পূর্ণ কার্যকর নয়।

‘এরই প্রেক্ষিতে সভা শেষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসকে সাথে নিয়ে তাৎক্ষণিক পাম্প হাউজ সরেজমিনে পরিদর্শনে বের হন মন্ত্রী। ’

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ সময় তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কালুনগর পাম্প হাউজ এবং ২৪ নং ওয়ার্ডের বালুরঘাট এলাকার খাল পরিদর্শন করেন। পরে সোনারগাঁও হোটেলের পাশে হাতিরঝিলের স্লুইস গেট এবং মিরপুর বেড়িবাঁধে অবস্থিত গোড়ানচটবাড়ি পাম্প হাউজ পরিদর্শন করেন মন্ত্রী।

পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ, পানি উন্নয়ন বোর্ড জলাবদ্ধতা নিরসনে তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে যে তথ্য দিয়েছেন তা সরেজমিনে পরিদর্শন করে আশানুরূপ মিল পাওয়া যায়নি।

এ সময় দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অধীনে থাকা খাল ও জলাশয়গুলো সিটি কর্পোরেশনকে দিলে নগরীর জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান করবে বলে অঙ্গীকার করেন।

ঢাকার খাল ও জলাশয়গুলোর দেখভালের দায়িত্ব দুই সিটি কর্পোরেশনকে দেওয়া নিয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সিটি কর্পোরেশনের সক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নিবে তার মন্ত্রণালয়।

এ সময় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়রদের কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী মানুষের স্বস্তির জন্য যে কোনো সমস্যা নিরসনে একসঙ্গে কাজ করে উন্নত-সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণে কাজ করা হবে।

ঢাকা নগরীতে জলাবদ্ধতা আগের তুলনায় অনেক কমেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেসব জায়গায় জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে, কেন হচ্ছে? সেই সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধান করার লক্ষ্যেই তিনি সরেজমিনে পরিদর্শনে এসেছেন।

তিনি বলেন, করানো ভাইরাসের কারণে বর্ষা মৌসুমের আগে খাল ও জলাশয় পরিষ্কারে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে। এ জন্য আমরা আশানুরূপ কাজ করতে পারিনি।

মন্ত্রী বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য যে সমস্ত দপ্তর, বিভাগসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান নিয়োজিত আছে তারা সবাই সমন্বয় করে কাজ করছেন। তা সত্ত্বেও কেন রাজধানীতে জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে তা দেখতেই তিনি মাঠে নেমেছেন।

দক্ষিণ সিটির মেয়র তাপস ছাড়াও এ সময় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদসহ মন্ত্রণালয়ের এবং দুই সিটি কর্পোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে, ঢাকা ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ড, দুই সিটি করপোরেশনসহ জলাবদ্ধতা নিরসনে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে অনলাইনে জুম মিটিং শেষে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, নগরীতে চলমান জলাবদ্ধতা বছরের পর বছর চলতে পারে না। খুব দ্রুত এর সমাধান করতে হবে এবং সে লক্ষ্যে কাজ করছে তাঁর মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও দপ্তর।

এ লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

তাজুল ইসলাম বলেন, অতীতে একটু বৃষ্টি হলেই পুরো ঢাকা নগরীতে প্রচুর জলাবদ্ধতা তৈরি হতো। কিন্তু এখন অতিবর্ষণেও অতীতের ন্যায় জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে না।

স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ অনলাইনে অনুষ্ঠিত সভাটি সঞ্চালনা করেন।

Pin It