তুমি আমাদের চিরসাথী: ড. মুহাম্মদ ইউনূস

abed-younus-5dfddf652d9b9

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদকে নিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন একমাত্র নোবেলজয়ী বাংলাদেশি ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

শনিবার দুপুরে নিজের ফেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া ‘তুমি আমাদের চিরসাথী’ শিরোনামের পোস্টে স্যার ফজলে হাসান আবেদকে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের আর্থিক দৈন্যের মুক্তিদাতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন ড. ইউনূস। পাশাপাশি দেশ ও মানুষের কল্যাণে তার কাজের জন্য কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন তিনি।

সমকালের পাঠকদের জন্য শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ফেসবুক পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো:

“তুমি আমাদের চিরসাথী

আবেদ চলে গেলো। কিন্তু তাকে বিদায় জানানো সম্ভব হবে না। সে আমাদের চিরসাথী হয়ে থাকবে। মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত সে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়েছে। সমাজের কোনো পরত নেই যেখানে আবেদের কর্মকান্ডের বাতাস লাগেনি। বাংলাদেশে সমাজের যে বিপুল পরিবর্তন হয়েছে আবেদ তার প্রধান রূপকার। সমাজের যত ভাঙ্গাচোরা অলিগলি, চোরাবালি, অলীক নিয়মনীতির ফাঁদ সর্বত্র ছড়িয়ে ছিল সবকিছুতে আবেদ তার সৃজনশীল প্রতিভার ছোঁয়া লাগিয়েছে। এই ছোঁয়া লাগিয়ে সবকিছু পাল্টে দিয়ে তাকে নতুন কাঠামোয় নিয়ে আসাই ছিল আবেদের ব্রত।

এটা বললে বোধ হয় বাড়িয়ে বলা হবে না যে, বাংলাদেশের সতেরো কোটি মানুষের মধ্যে খুব কম মানুষই আছেন যিনি জীবনে কোনো না কোনোভাবে আবেদের কর্মকান্ডের সুফল ভোগ করেন নি। আর তিনি যদি হন বিশাল গ্রাম বাংলার দরিদ্রদের একজন, মহিলাদের একজন তাহলে তো তাঁকে জীবনের প্রতি পদক্ষেপে আবেদের সাক্ষাৎ পেতে হয়েছে – শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রোজগার, আত্মোপলদ্ধি, আরো অনেক কিছুতে। আমাদের অজান্তে যে-আবেদ আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী তাকে আমরা বিদায় জানাবো কীভাবে?

আবেদ বাংলাদেশের গরীব মানুষের সামাজিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির অসাধারণ কারিগর। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের আর্থিক দৈন্যের মুক্তিদাতা।

সে নিরবে তার বিশাল কর্মকান্ড গড়ে তুলেছে। সে মানুষকে ডাক দিয়ে বসে থাকেনি, একাই এগিয়ে গেছে। সমস্ত দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে। সে একাই এগিয়ে গেছে – একেবারে পুরো কাজটা সমাধা করার জন্য।

আবেদ সারা বিশ্বে এনজিও-র কনসেপ্ট বদলে দিয়েছে। একটি এনজিও দেশব্যাপী প্রায় সকল সমস্যার সামগ্রিক সমাধান দেবার জন্য এগিয়ে আসতে পারবে এরকম ধারণা ছিল একেবারে অকল্পনীয়। দেশে বিদেশে অসংখ্য রকম প্রতিষ্ঠান ও কর্মসূচি নিয়ে একটি বিশালায়তনের এনজিও-র ধারণা আবেদই দিয়ে গেলো। তার চাইতেও তার বড় অবদান একক এনজিও ও বহুমাত্রিক এনজিও-র ব্যবস্থাপনাকে একটা নতুন বিজ্ঞানে প্রতিষ্ঠিত করে দিয়ে যেতে পারা। এই অবদান তাকে চিরস্মরণীয় করে রাখবে। ভারত পাকিস্তান নেপাল শ্রীলংকার অর্থনৈতিক গবেষকদের কাছ থেকে বরাবরই একটি প্রশ্ন আসে: বাংলাদেশে যে যা-ই করে সেটা দেশব্যাপী করে ফেলে – আমাদের দেশে এরকম হয়না কেন? আমার বরাবরের জবাব ছিল তোমাদের দেশে ত এখনো আবেদের জন্ম হয়নি।

আবেদ একটি আত্মপ্রত্যয়ী বাংলাদেশ তৈরী করে দিয়ে গেছে। তার দুরন্ত সাহস, আত্মবিশ্বাস, সৃজনশীলতার কাহিনী আগামী সকল প্রজন্মকে অনবরতভাবে শক্তি যুগিয়ে যাবে। বহু প্রজন্ম পরেও আবেদ তাদের কাছে বাংলাদেশ হয়ে বেঁচে থাকবে।

তুমি যে-বাংলাদেশ বানিয়ে দিয়ে গেছো তার বুনিয়াদের উপর দ্রুত আমাদের কাঙ্খিত বাংলাদেশ গড়ার দায়িত্ব নেয়া পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সহজ হলো।

আবেদ, তোমার কাছে জাতি চিরকৃতজ্ঞ হয়ে থাকবে।”

প্রসঙ্গত, ব্রিটিশ সরকারের নাইট উপাধি পাওয়া একমাত্র বাংলাদেশি ফজলে হাসান আবেদ রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ইন্তেকাল করেন।

Pin It